২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজের অধিভুক্তি বাতিল চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। এসব কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ‘বিষফোড়া’ অভিহিত করার পাশাপাশি অধিভুক্তি বাতিল না করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ করে সব ভবনে তালা দেওয়ার মতো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
সোমবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচি থেকে এই হুঁশিয়ারি জানানো হয়। এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে তা সমাপ্ত করে শিক্ষার্থীরা।
এসময় তাদের ‘এক দফা, এক দাবি, অধিভুক্ত মুক্ত ঢাবি’; ‘সাত কলেজের ঠিকানা, এই ঢাবিতে হবে না’; ‘রাখতে ঢাবির সম্মান, সাত কলেজ বেমানান’; ‘অধিভুক্তি বাতিল চাই, বাতিল কর, করতে হবে’; ‘জেগেছে রে জেগেছে, ঢাবি জেগেছে’; ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে!’; ‘শোনো বোন, শোনো ভাই, ঢাবির কোনো শাখা নাই’ ইত্যাদি সংবলিত স্লোগান দিতে দেখা যায়।
কর্মসূচি চলাকালে বক্তারা বলেন, সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আগেও আন্দোলন হয়েছে। তখন ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। তখন বলা হয়েছিল, ‘সাত কলেজ আনহ্যাপি ম্যারেজ’। এরপর ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে মুক্ত করা হয়নি। এখন সাত কলেজ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষফোড়ায় পরিণত হয়েছে।
তারা আরও বলেন, নতুন বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ক্ষমতার অংশ। তারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন বলে আশা শিক্ষার্থীদের। সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও অধিভুক্তি বাতিল চান। তাহলে এটি বাস্তবায়নে বাধা কোথায়। সাত কলেজের দুই লাখ শিক্ষার্থীর কার্যক্রম চালানোর সক্ষমতা নেই ঢাবির। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অধিভুক্তি বাতিল নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে না বসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ করে সব ভবনে তালা দেওয়ার মত কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের খায়রুল আহসান মারজান বলেন, শুরু থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই অধিভুক্তির বিরোধিতা করে আসছে। তৎকালীন একটি শান্তিপূর্ণ সমঝোতার কথা বলা হলেও গত ছয় বছরে কোনও সমাধান দিতে পারেনি। উপদেষ্টা পরিষদে যারা আছেন, তারা আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ঠিক রাখতে এটি বাতিলের যথাযথ পদক্ষেপ নিন।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মইদুল ইসলাম বলেন, র্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিন দিন অবনতির কারণ এই সাত কলেজ। আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে এই কলেজগুলোকে বিবেচনায় নেওয়া হয়। তাদের অধিভুক্তি বাতিল করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আরও অনেক এগিয়ে যাবে। আমরা শিগগির এই অধিভুক্তি বাতিল চাই। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবো।
এসময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল চাওয়ার ছয়টি কারণ উল্লেখ করে। সেগুলো হলো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রশাসনিক কার্যক্রমে (রেজিস্ট্রার বিল্ডিং) বিড়ম্বনা; শিক্ষকদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি অবহেলা; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত পাঠদান ব্যাহত ও ফলাফল (সাত কলেজের খাতা মূল্যায়ন, কারিকুলাম ও প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা ও ভাইভা নেওয়া) ইত্যাদি প্রকাশে বিলম্ব ও সেশনজট সমস্যা; আবাসন সংকট ও গবেষণায় ফান্ডের অভাব থাকা সত্ত্বেও সাত কলেজের জন্য প্রশাসনিক ভবন নির্মাণে আশ্বাস প্রদান; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিচয় বিড়ম্বন এবং আন্তর্জাতিক র্যাংকিং গণনা করার ক্ষেত্রে অধিভুক্ত কলেজগুলোকেও বিবেচনা করা হয় বলে ঢাবির অবস্থান নিম্নগামী হচ্ছে।
মন্তব্য করুন