খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) প্রস্তাবিত ২০৩ একর জমি এবং ক্যাম্পাসের সামনে মৎস্য খামার ব্যবস্থাপকের কার্যালয় অধিগ্রহণে প্রশাসনের উদাসীনতা এবং দীর্ঘসূত্রতার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। বোববার (৩ নভেম্বর) শহীদ মীর মুগ্ধ তোরণের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় দুদিনের মধ্যে দাবি না মানলে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন তারা।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দেশে বিদেশে অনেক সুনাম অর্জন করছে এবং আন্তজার্তিকভাবে বিভিন্ন র্যাংঙ্কিয়ে স্থান পাচ্ছে। কিন্তু দেশের মধ্যে অন্যতম এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন অন্যান্য ক্যাম্পাসের তুলনায় অনেক কম। বর্তমানে নতুন করে আর কোনো ভবন নির্মাণ করারও জায়গা নেই। অনেক ডিসিপ্লিনের গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত ফিল্ড নেই। এমতাবস্থায় প্রস্তাবিত ২০৩ একর জমি অধিগ্রহণ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন আর সম্ভব না।
জানা যায়, ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠালগ্নে বাংলাদেশ বেতারের পরিত্যক্ত ১০৩ একর জমির ওপর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নতুন করে তেমন কোনো জমি অধিগ্রহণ হয়নি। এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমেরও ৩৩ বছর পার হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিসিপ্লিনের সংখ্যা ২৯টি এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। এছাড়াও রয়েছে ২টি ইনস্টিটিউট, ২টি সেন্টার ও একাধিক সহশিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ৩টি একাডেমিক ভবন, ৫টি আবাসিক হল, একটি সুপরিসর লাইব্রেরি ভবন, একটি গবেষণাগার, ফিটনেস সেন্টার, ১টি মেডিকেল সেন্টার, ২টি মসজিদ. ১টি মন্দির, ২টি প্রশাসনিক ভবন, একটি গেস্ট হাউস, ৬টি আবাসিবক কোয়ার্টার, একটি খেলার মাঠসহ অন্তত ৭টি ডিসিপ্লিনের প্রয়োজনের তুলনায় খুব ছোট ছোট মাঠ-গবেষণাগার হয়েছে।
এ ছাড়া দশতলা একাডেমিক ভবন (জয়বাংলা ভবন), লালন সাঁই মিলনায়তন (টিএসসি), সুলতানা কামাল জিমনেসিয়াম ভবনসহ বেশ কয়েকটি বড় ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলছে। আগামী ১-২ বছরের মধ্যে এসব কাজ শেষ হলে ক্যাম্পাসে আর কোনো খালি জায়গা থাকবে না।
এর আগে ২০২০ সালে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান ক্যাম্পাস সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেন। তিনি বর্তমান ১০৬ একর জমির সঙ্গে ক্যাম্পাস সংলগ্ন ২০৩ একর খালি জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করেন এবং প্রস্তাবিত নতুন ক্যাম্পাসের নাম দেন ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু ক্যাম্পাস’।
প্রস্তাবিত জমি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারদিকেই বিদ্যমান সড়ক-মহাসড়ক হবে (দক্ষিণে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক, পশ্চিমে রূপসা বাইপাস সড়ক, উত্তরে সোনাডাঙ্গা বাই পাস সড়ক এবং পূর্বে গল্লামারী লিনিয়ার পার্ক ওয়াপদা সড়ক) বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা।
তবে দীর্ঘ ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রস্তাবিত জমি অধিগ্রহণের কোনো কার্যক্রম চোখে দেখা যায়নি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতার জন্য এত বছরেও ক্যাম্পাসের সীমানা বাড়ানো যায়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, ২০২০ সালে প্রস্তাবিত জমি খালি থাকলেও এখন সেখানে অনেক বসতবাড়ি, ব্যবসা বাণিজ্য গড়ে উঠেছে। ফলে এই প্রস্তাবিত জমি অধিগ্রহণ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. রেজাউল করিম বলেন, আমরা এরইমধ্যে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি এবং প্রস্তাবিত এলাকায় ২০২৬ সাল পর্যন্ত ছাড়পত্র না দেওয়ার জন্য আবেদন করেছি। পরে আমরা ইউজিসি এবং মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ করবো।
শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জনের ব্যাপারে তিনি বলেন, বর্তমান প্রশাসন শিক্ষার্থীবান্ধব। শিক্ষার্থীদের কোনো দাবি-দাওয়া থাকলে আমাদের জানাবে, স্মারকলিপি দেবে। আমরা সে অনুয়ায়ী সমাধান করব। কিন্তু হঠাৎ ক্লাস বর্জন করা শিক্ষার্থীদের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে।
মন্তব্য করুন