চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) এক ছাত্রীকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ধর্ষণ ও যৌন হেনস্থার অভিযোগে শাখা ছাত্রলীগের এক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া মারুফুল ইসলাম শাকিল ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের ‘বাংলার মুখ’ (বিএম) গ্রুপের নেতা।
রোববার (৪ নভেম্বর) দুপুর ২টার দিকে ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তার করে হাটহাজারী থানা পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাটহাজারী থানার ওসি হাবিবুর রহমান।
মামলার এজহারে ভুক্তভোগী ছাত্রী উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে বিবাদীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে কথাবার্তা এবং চলাফেরার একপর্যায়ে যখন আমি জানতে পারি সে ছাত্রলীগের রাজনীতির করে এবং একাধিক মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। তখন আমি সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইলে সে তার রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে আমাকে প্রেমের সম্পর্কে যেতে বাধ্য করে।
এজহারে আরও উল্লেখ করা হয়, আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ওই ঘটনার বিষয়ে কাউকে কিছু বললে সে আমাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হেয় প্রতিপন্ন করার হুমকি দেয়।
এর আগে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, মারুফুল ইসলাম শাকিলের সঙ্গে আমার পাঁচ বছরের একটি সম্পর্ক ছিল। সে রাজনীতির ভয় দেখিয়ে আমাকে সম্পর্কে জড়াতে বাধ্য করে। আমি যতবার এ থেকে বের হয়ে আসতে চেয়েছি ততবার সে আমার গায়ে হাত তোলে এবং মানসিক নির্যাতন করে। এ ছাড়াও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সে আমাকে জোর করে হাত-পা বেঁধে শারীরিক সম্পর্ক করে। আমাকে প্রতিনিয়ত যৌন হেনস্তা করে এবং আপত্তিকর ছবি-ভিডিও ধারণ করে। আমি ছাড়াও আরও অনেক মেয়েদের সঙ্গে সে পাঁচ-ছয় বছরের সম্পর্কে জড়িত এবং তাদের থেকেও একইভাবে ছবি, ভিডিও নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে। বর্তমানে সে আমাকে পারিবাবিক এবং সামাজিকভাবে হেনস্তা করার হুমকি দিচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ছাত্রী গণমাধ্যমকে জানান, মারুফুলের সঙ্গে প্রথমে ফেসবুকের মাধ্যমে সম্পর্কে জড়াই। আমার কিছু ছবি সে গোপনে ধারণ করে এবং এগুলো পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেবে বলে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে। সে আমাকে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে হেনস্তা করে। আমাকে বিয়ের কথা বলে জোর করে বেশ কয়েকবার শারীরিক সম্পর্ক করার চেষ্টা করে ও ধর্ষণ করে। পাশাপাশি গায়ে হাত তোলে নির্যাতন ও টাকার জন্য হেনস্তা করেছে।
অভিযুক্ত মারুফুল ইসলাম শাকিল এ ব্যাপারে বলেন, তার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। সে বেশকিছু সমস্যার মধ্যে ছিল আমি তাকে সাহায্য করেছি। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো করা হয়েছে সেগুলোর কোনো সত্যতা নেই। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।
চবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ কালবেলাকে বলেন, আমাদের কাছে এক শিক্ষার্থী অভিযোগ জানিয়েছিল যে তার সঙ্গে আরেকজন শিক্ষার্থী বছরের পর বছর ধরে অনৈতিক সম্পর্ক করে আসছে। সে অভিযোগের যাবতীয় প্রমাণ আমাদের কাছে দিয়েছে। বিষয়টি হাটহাজারী থানার ওসিকেও জানিয়েছিলেন। রোববার ওই অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসা হয়। তার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ছেলেটিকে আটক দেখিয়ে থানায় নিয়ে যায়। পরে ভুক্তভোগী অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা করে।
হাটহাজারী থানার ওসি হাবিবুর রহমান কালবেলাকে বলেন, চবি ছাত্রীর মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা দায়ের করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী সোমবার (৪ নভেম্বর) আদালতে পাঠানো হবে।
মন্তব্য করুন