জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপদ ক্যাম্পাস তৈরি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আক্রমণকারীদের বিচারের ব্যবস্থা, ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি সংস্কারসহ ৪১ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির।
রোববার (৩ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের কনফারেন্স কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাবনা তুলে ধরেন সংগঠনের সভাপতি হারুনুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক মুহিবুর রহমান মুহিব।
প্রচার সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন সাকির সঞ্চালনায় লিখিত বক্তব্যে হারুনুর রশিদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী আদলে চলতে চলতে বিশ্ববিদ্যালয়ে উদার গণতান্ত্রিক চর্চা, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা ভয়াবহভাবে ব্যাহত হয়েছে। কোনোরকম পরিকল্পনা ছাড়াই উন্নয়ন প্রকল্পের নামে কৌশলে লুটপাট চালিয়ে সবুজ ক্যাম্পাসকে কংক্রিটের নগরে পরিণত করা হয়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানামুখী সংকট চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে।
নারীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস তৈরির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, পোশাকের কারণে কোনো শিক্ষার্থীকে হয়রানি করা যাবে না। এ ছাড়া নারী নির্যাতন ও নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে যৌন নির্যাতনবিরোধী সেলের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপসারণ করে অবিলম্বে এ সেলের নতুন কমিটি গঠন করতে হবে। নিয়মানুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগগুলোর সুরাহা করতে হবে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত ছাত্রী হলগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে এবং যানবাহনের শব্দের প্রভাব লাঘব করতে মহাসড়ক সংলগ্ন কক্ষগুলো সাউন্ডপ্রুফ করতে হবে।
৪১ দফার মধ্যে অন্যান্য উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হলো প্রশাসন কর্তৃক আবাসিক হলের নিয়মতান্ত্রিক আসন বণ্টন নিশ্চিত করা, আবাসিক হলসমূহে সেবা বৃদ্ধি, ডাইনিং-ক্যান্টিন, ক্যাফেটেরিয়া ও বটতলার খাদ্যমান উন্নয়ন, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা, বিভাগগুলোর জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো নিশ্চিত, মেধাবৃত্তির পাশাপাশি অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি চালু, অ্যাকাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন, বাণিজ্যিক শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ, ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কার, গবেষণায় পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ, পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল সুবিধা, মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন, অযাচিত বিভিন্ন ফি বাতিল ও ভর্তি ফি কমানো, শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতি সংস্কার, লাইব্রেরির মান উন্নয়ন, ক্যাম্পাস নিরাপত্তা জোরদার করা, সব ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের উপাসনালয়ের ব্যবস্থা, র্যাগিং প্রতিরোধ, মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
১৬ জুলাইকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সন্ত্রাস প্রতিরোধ দিবস’ ঘোষণার দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নির্যাতনকারীদের বিচার নিশ্চিত, আহত শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা ও পুনর্বাসন, গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের নামে স্থাপনার নাম পরিবর্তন করে শহীদদের নামে নামকরণের করতে হবে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু রাজনীতির পরিবেশ নিশ্চিত করতে জাকসু, হল ও বিভাগীয় শিক্ষার্থী সংসদ চালু করে সিনেটে শিক্ষার্থী প্রতিনিধির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
সাধারণ সম্পাদক মুহিবুর রহমান মুহিব বলেন, ‘সব শিক্ষার্থীর জন্য সমান সুযোগ ও সম্মান নিশ্চিত করে সুষ্ঠু, নিরাপদ এবং আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে আমরা কাজ করে যাব। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও বিশ্বাস নির্বিশেষে ইনসাফ নিশ্চিত করা। সব শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় একটি কার্যকর ও প্রতিনিধিত্বমূলক শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
মন্তব্য করুন