শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ঢাবি প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৫ এএম
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ঢাবিতে নবীনবরণের খাবার খেয়ে অসুস্থ অর্ধশতাধিক, সন্দেহে ‘বনফুলের’ পিঠা

বনফুলের খাবার খেয়ে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। ছবি : কালবেলা
বনফুলের খাবার খেয়ে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। ছবি : কালবেলা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ইউনিট বাঁধন-এর নবীনবরণ অনুষ্ঠানে দেওয়া খাবার খেয়ে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাত শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডাঃ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টার থেকেও অনেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের সন্দেহ- রাজধানীর চানখারপুলের নাজিমুদ্দিন রোডস্থ 'বনফুল সুইটস এন্ড কোং' থেকে আনা পাটিসাপটা পিঠা খেয়েই তাদের এই সমস্যা হয়েছে। তবে বনফুল কর্তৃপক্ষ অভিযোগটি নাকচ করে বলেছে, তাদের খাবারে কোনো ঝামেলা নেই।

জানা যায়, গত শুক্রবার (০১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় শহীদুল্লাহ হল মিলনায়তনে এই নবীনবরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী মিলিয়ে শতাধিক লোকের অংশগ্রহণ ছিলো। এই অনুষ্ঠানের জন্য চার আইটেমের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। সেগুলো হল- লাড্ডু, কাপ কেক, সিংগারা ও পাটিসাপটা পিঠা।

শিক্ষার্থীদের দাবি, তারা লাড্ডু ও কেক সরাসরি ফ্যাক্টরি থেকে মেয়াদ ও গুনগত মান দেখে-শুনেই এনেছেন। এই দুই আইটেমে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এছাড়া, সিংগারা হল ক্যান্টিনে নিজেদের তত্ত্বাবধানেই তৈরি করা হয়েছে। এটাতেও সমস্যা নেই বলে দাবি তাদের। তবে তাদের সন্দেহের তীর বনফুলের পাটিসাপটা পিঠার দিকে। তাদের ধারণা, এই পিঠা খেয়েই তাদের পেটে সমস্যা, জ্বর, বমি ইত্যাদি অসুখ হয়েছে।

এ বিষয়ে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের শিক্ষার্থী ও হল ইউনিট বাঁধন-এর সভাপতি আলিম মাহমুদ কালবেলাকে বলেন, আমাদের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে চারটি খাবারের আইটেম ছিল। এর মধ্যে লাড্ডু এবং কাপ কেক অন্যতম। এগুলো ফ্যাক্টরি থেকে প্যাকেজ করে আনা হয়। আর আমরা এটা আনার আগে বারবার ডেট ও মেয়াদ চেক করেছি, এই দুইটাতে কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। আমাদের অনুষ্ঠানে আরও দুইটা আইটেম ছিল, যারমধ্যে রয়েছে হচ্ছে সিঙ্গারা ও পাটিসাপটা পিঠা। সিঙ্গারা আমাদের হলের ক্যান্টিন থেকে তৈরি করা। হলের ক্যান্টিনে তারা সিংগারা রেগুলার তৈরি করে বিষয়টা এরকম নয়, এজন্য পূর্বের খাবার দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তারা সিংগারা তৈরি করেছে আমাদের জন্য এবং আমাদের তত্ত্বাবধানে এটা হয়েছে। পাটিসাপটা পিঠা আমরা চানখারপুলের নাজিমুদ্দিন রোডের বনফুল থেকে নিয়ে এসেছিলাম।

তিনি বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, যারা এই পাটিসাপটা পিঠা বাদে বাকি তিন আইটেমের খাবার খেয়েছে তাদের কোন সমস্যা হয়নি। সমস্যা হয়েছে যারা পাটিসাপটা পিঠা খেয়েছে তাদেরই। যারা অসুস্থ হয়েছেন তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। তাদের কাউকে কাউকে হাসপাতালে পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। অতএব আমরা সন্দেহ করছি, বনফুলের পাটিসাপটা পিঠা থেকেই এই সমস্যাটা সৃষ্টি হতে পারে।

মাজহারুল ইসলাম সৌরভ নামে হলটির আরেক শিক্ষার্থী বলেন, শনিবার সকাল থেকে অনেকেরই পেটে সমস্যা শুরু হয়। বিষয়টি রাতে জানাজানি হয়, পরে আমরা হল অফিসে জানাই। এরপর অনেককেই এম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ইউনিট বাঁধনের সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ কালবেলাকে বলেন, গত শুক্রবার শহীদুল্লাহ হল বাঁধনের প্রোগ্রামে আমি গিয়েছিলাম। প্রোগ্রাম শেষে হলে আসার পর ওইদিন রাত থেকেই পেটের পীড়া ও পাতলা পায়খানা হয়। স্বাভাবিকভাবে মনে করেছি, এটা এমনিতেই হয়েছে। কিন্তু শনিবার দুপুরের দিকে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। এমন অবস্থায় মেডিকেলে যাওয়ার জন্য বের হয়ে হল গেটে যাওয়ার পর বমি করতে করতে অজ্ঞান হয়ে যাই। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়ে হলে আসি।

তিনি বলেন, পরবর্তীতে জানতে পারি ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল বাঁধনের নবীন বরণ অনুষ্ঠানের সরবরাহকৃত খাবার খেয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী একই সমস্যায় চিকিৎসা নিচ্ছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে 'বনফুল সুইটস এন্ড কোং' চানখারপুলের ম্যানেজার আল আমিন কালবেলাকে বলেন, শহীদুল্লাহ হলের শিক্ষার্থীরা ১৪৫ পিস পিঠা নিয়েছেন, প্রতি পিঠা দুইভাগ করে দুইজন খেয়েছেন। সেই হিসেবে ২৯০ জন এই পিঠা খেয়েছেন। এছাড়াও, আমি আরো ৩০ পিস পিঠা অন্য এক জায়গায় বিক্রি করেছি। সেখান থেকে এরকম কোন অভিযোগ আসেনি। আমাদের সব শাখায় একই জায়গা থেকে পিঠা যায়, কোথাও কোন সমস্যা হয় না। অভিযোগ নিয়ে গতকাল যখন উনারা হলটির শিক্ষক সহকারে এসেছিলেন, তখন আমি তাদেরকে চালান দেখিয়েছি, সবই দেখিয়েছি। আমরা মনে করি, আমাদের পিঠায় কোনো সমস্যা নেই।

এ বিষয়ে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাবেদ হোসেন কালবেলাকে বলেন, শিক্ষার্থীদের অসুস্থ হওয়ার খবর শোনার পর আমরা তাদের কাছে ডাক্তার ও ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। শনিবার দুপুর থেকে নাকি তাদের এ সমস্যা দেখা দিয়েছে, তবে আমি জানতে পেরেছি সন্ধ্যায়। শিক্ষার্থীরা সন্দেহ করছে যে, গত শুক্রবারের অনুষ্ঠানের খাবার খেয়ে এরকম হয়েছে। কিন্তু এটা বলা যাচ্ছেনা, আসলে কি কারণ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের শীতবস্ত্র বিতরণ

উইন্ডিজের প্রতিরোধ ভেঙে বাংলাদেশের স্বস্তি

টাইম ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস / ট্রাম্প ব্যবসায়ী, আমরাও একজন ব্যবসায়িক অংশীদার চাই

২০২৪ সালের হাইয়েস্ট কালেকশন দরদের : শাকিব 

নায়িকা পরীমনির প্রথম স্বামী নিহত

রাজনীতিতে আ.লীগের পুনর্বাসন ঠেকাতে হবে: নুর

নির্বাচন যত দ্রুত হবে, সমস্যা তত কমে আসবে : মির্জা ফখরুল

খাসজমির দখল নিয়ে সংঘর্ষে দুজন নিহত

মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ক্রীড়াঙ্গন অন্যতম একটি মাধ্যম : আমিনুল হক 

তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল

১০

আহত রানার পাশে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’

১১

ফেসবুকে দাবি ‘মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ একই ব্যক্তি’, যা বলছে ফ্যাক্ট চেক

১২

একদিকে প্রশান্তি, অশান্তিও বিরাজ করছে: শামা ওবায়েদ

১৩

চোর সন্দেহে খুঁটিতে বেঁধে যুবককে নির্যাতন

১৪

র‍্যানকন মটরসের সঙ্গে ক্র্যাক প্লাটুন চার্জিং সলুশনের চুক্তি

১৫

জনকল্যাণে কাজ করাই বিএনপির মূল লক্ষ্য : নয়ন

১৬

‘এক ফ্যাসিস্টকে হটিয়ে আরেক ফ্যাসিস্টকে ক্ষমতায় দেখতে চাই না’

১৭

জুলাই বিপ্লবে আহত মুক্তিযোদ্ধার ছেলে বাবুকে নেওয়া হচ্ছে থাইল্যান্ড

১৮

মাদকাসক্ত ছেলেকে কারাগারে দিলেন মা

১৯

কপ২৯-এর এনসিকিউজি টেক্সট হতাশাজনক : পরিবেশ উপদেষ্টা

২০
X