বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) শাহজালাল হক হলের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে কিছু শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর দাবি, অভিযুক্তরা নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী। তবে অভিযোগ ওঠা শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের কর্মী ও মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
অভিযোগ ওঠা শিক্ষার্থীরা হলেন, একই হলের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিম-উল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম পলাশ, জাকারিয়া সাঈদ এবং সানজান ইসলাম মুন্না।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে হুমকির বিচার এবং জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত আবেদনপত্র জমা দেন কৃষি প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি অনুষদের চতুর্থ বর্ষের এবং শাহজালাল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী অনুপ পাল।
আবেদনপত্র থেকে জানা গেছে, গত ২৮ অক্টোবর রাতে শাহজালাল হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রভোস্ট স্যারের উপস্থিতিতে হলের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য একটি সাধারণ মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়। মিটিংয়ে একই হলের ছাত্র সাইফুল ইসলাম পলাশ অজানা কারণে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের যেতে নিষেধ করেন। পরবর্তীতে তার নিষেধ অমান্য করে কয়েকজন শিক্ষার্থী মিটিংয়ে উপস্থিত হলে সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী ফাহিম-উল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে সাইদুল ইসলাম পলাশ ও তার সহপাঠীরা আমাকে এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীকে হেনস্থা করে।
তখন প্রতিবাদ জানালে কিছু সময় পর ফাহিম-উল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম পলাশ, জাকারিয়া সাঈদ এবং সানজান ইসলাম মুন্নাসহ আরও অনেকে আমার নিজ কক্ষ ২০১/ক তে প্রবেশ করে আমাকে মেঝেতে ফেলে এলোপাতারি কিল, ঘুষি ও লাথি মারে। পরবর্তীতে রুমমেট ও অন্যান্য সহপাঠীদের বাধা পেয়ে চলে যায়।
অভিযোগের বিষয়ে ফাহিম-উল ইসলাম বলেন, নিজেদের অভ্যন্তরীণ গ্রুপের মেসেজ সিনিয়রকে দেওয়ায় পলাশ রাগ করে। কিন্তু এখানে আমি তার গায়ে কোনো ধরনের হাত তুলিনি। তার সঙ্গে তর্ক হয়েছিলো কেবল, কিন্তু গায়ে হাত তোলা হয়নি। আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছিলাম। আমাদের হলে দ্বিতীয় বর্ষে জোর করে সবাইকে ছাত্রলীগে রাখা হতো এবং আমাকে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে নির্যাতনও করা হয়েছিল।
বিষয়টি নিয়ে সানজান ইসলাম মুন্না বলেন, ব্যাচমেটদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়েছিল। আপনারা চাইলে যাচাই করে দেখতে পারেন। কোনো ধরনের মারধর হয়নি তার ওপর। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, সে আগে ছাত্রলীগ করত এবং জুনিয়রদের পিটাইত। আমার সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
অভিযোগের বিষয়ে জাকারিয়া সাঈদ বলেন, আপনারা হলে এসে দেখেন কি হয়েছে। আমি কখনোই ছাত্রলীগে ছিলাম না, প্রথম বর্ষে ছাত্রলীগের শো-ডাউনে যেতে হয়েছিল।
জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম পলাশ বলেন, এ ধরনের কোনো কাজ হয়নি। ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণেও অভিযোগ দিতে পারে। আমি এমন কিছু করিনি। আমার হলে আর ক্যাম্পাসে সবাই আমাকে চিনে। আমি এখনো হলে আছি। আমার সঙ্গে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততা নেই।
শাহজালাল হলের প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ বদিউজ্জামান খান বলেন, আমরা ওই ছাত্রের অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে এখনি কিছু বলা যাচ্ছে না। প্রক্টর আর আমরা মিলে আলোচনা করে পরবর্তীতে তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলীম বলেন, আমরা তার পত্রটি গ্রহণ করেছি। ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে এখন সুন্দর পরিবেশ বজায় রয়েছে। এই অবস্থাকে কেউ যদি অস্থিতিশীল করে ক্লাস-পরীক্ষার পরিবেশ ব্যহত করতে চায়, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
মন্তব্য করুন