ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ ও বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির (বিসিপিএস) উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের ফ্রি মেন্টাল হেলথ অ্যাসেসমেন্ট ও কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা হয়েছে।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) দিনব্যাপী নাসিরুল্লাহ কনফারেন্স হল (কক্ষ-৫০৪০, কলা ভবন), অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স ডিপার্টমেন্ট ভবনের সম্মুখে (কার্জন হল এলাকা) ও বিজয় একাত্তর হলের সম্মুখে অস্থায়ী বুথের মাধ্যমে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্তভাবে ঢাবি শিক্ষার্থীদের এ সেবা প্রদান করা হয়।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের তত্ত্বাবধানে একদল তরুণ ও উদ্যমী ট্রেইনি ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, এমফিল ও পিএইচডি গবেষকগণ অ্যাসেসমেন্ট ইভেন্টগুলো পরিচালনা করেন। এ সময় অস্থায়ী বুথে গিয়ে ২২৪ জন শিক্ষার্থী ফ্রি মেন্টাল হেলথ অ্যাসেসমেন্ট সেবা নিয়েছেন এবং ৪০ জন শিক্ষার্থী নিজেদের বিভিন্ন মানসিক সমস্যার বিষয়ে বিশেষ কাউন্সেলিং সেবা নিয়েছেন।
ফ্রি মেন্টাল হেলথ অ্যাসেসমেন্ট ও কাউন্সেলিং সেবা প্রদানের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, সমাজ, পরিবার, রাষ্ট্র এই পরিমণ্ডলে আমাদের বাস করতে হয়। অধিকাংশ সময়েই আমরা প্রচণ্ড মানসিক চাপের মধ্যে থাকি। তবে এ বিষয়ে কথা বলার মতো সুযোগ নেই বললেই চলে। এ সেবা প্রদানের বিষয়ে প্রচারণা দরকার। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের বিশেষ এ উদ্যোগকে তারা স্বাগত জানিয়েছেন।
সেবা প্রদানের অভিজ্ঞতার বিষয়ে একজন কাউন্সেলর বলেন, শিক্ষার্থীদের মাঝে সেবা গ্রহণের ব্যাপারে বেশ আগ্রহ দেখা গেছে। তবে এদের অনেকেই জানেন না যে কাউন্সেলিং কী, কীভাবে আমরা সেবা প্রদান করি। তাদেরকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে বলতে হচ্ছে। অনেকে জানেনই না তাদের যেসব সমস্যা রয়েছে সেটার জন্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবা অর্থাৎ কাউন্সেলিং নিতে হবে। বুথে যারা আসছেন তাদের আমরা বুঝিয়ে বলার পরে তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে। তখন তারা সেবা গ্রহণের জন্য আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এভাবে সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে।
এ আয়োজন সম্পর্কে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির (বিসিপিএস) সাধারণ সম্পাদক ড. মো. শাহানূর হোসেন বলেন, মানুষের জীবনের সকল অর্জনে মানসিক স্বাস্থ্য প্রধান ভূমিকা পালন করে। তবে বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে নানা কুসংস্কারের কারণে মানুষ তার মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা লুকিয়ে রাখতে চায় যা তার কষ্ট বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের বিষয়ে তিনি বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য সেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বিসিপিএস ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ যৌথভাবে কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে আজকের এ আয়োজন। এ ধরনের আয়োজন খুবই ফলপ্র। তাই আমরা ধারাবাহিকভাবে এ ধরনের আয়োজন চালু রাখব যেন মানুষ সচেতন হয়ে শুরুতেই তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য সেবা নিতে পারে এবং জটিল মানসিক রোগ প্রতিরোধ করতে পারে।
উল্লেখ্য, বিসিপিএস ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ যৌথভাবে ১৯৯৭ সাল থেকে নিয়মিতভাবে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন করে আসছে। এ বছর দিবসটি উদযাপনের প্রাথমিক পর্যায়ে গত ১০ অক্টোবর মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয় এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৮ অক্টোবর ফ্রি মেন্টাল হেলথ অ্যাসেসমেন্ট ও কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা হয়। এরই অংশ হিসেবে আগামী ১১ নভেম্বর থেকে ১২ নভেম্বর বিভাগীয় সেমিনার কক্ষে দুদিনব্যাপী মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা মেলা অনুষ্ঠিত হবে এবং আগামী ৬ ডিসেম্বর থেকে ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মশালা।
মন্তব্য করুন