বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বেরোবির ২ শিক্ষক, ৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ৭২ শিক্ষার্থীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে দুজন শিক্ষক ও সাত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বহিষ্কার ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জড়িত ৭২ শিক্ষার্থীর মধ্যে যাদের শিক্ষাজীবন শেষ হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৮তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ তথ্য জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. শওকাত আলী বলেন, এর আগে ১০৭তম সিন্ডিকেট সভায় আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তাদের দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে ও আবু সাঈদ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি মশিউর রহমান, লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মণ্ডলসহ সাত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলা করা হবে।
তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে শতাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত আছেন। তাদের ছুটি না মঞ্জুর করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অনুপস্থিত থাকার কারণে তাদের বেতন কাটা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শৃঙ্খলা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেসব শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এ ঘটনায় জড়িত তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী শাস্তির আওতায় আনা হবে।
জানা গেছে, হামলাকারীর তালিকায় চার কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন রাফিউল হাসান রাসেল, তৌহিদুল জনি, হাফিজুর রহমান তুফান এবং মনিরুজ্জামান পলাশ। ৩ কর্মচারী হলেন নুরুন্নবী, আশিকুন্নাহার টুকটুকি ও আমির হোসেন আমু ।
হামলাকারীর তালিকায় যেসব শিক্ষার্থী রয়েছেন তারা হলেন- বেরোবি ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামীম, দপ্তর সম্পাদক বাবুল হোসেন, সহসভাপতি বিধান বর্মন, মো. রেজওয়ান-উল-আনাম তন্ময়, মো. তানভীর আহমেদ, মো. শাহীন আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সাকিব-আল-হাসান, ধনঞ্জয় কুমার দাস টগর, মো. সেজান আহমেদ (আরিফ), মৃত্যুঞ্জয় রায়, সুদীপ্ত সরকার বাধন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মেজবাউল সরকার জয়, ইমরান চৌধুরী আকাশ, কফি আনান মান্নান, মুসান্নাবিন আহম্মেদ নাবিল, আবু সালেহ নাহিদ, মাসুদুল হাসান, হাবিবুর রহমান, জামাল, এসএম লাবু ইসলাম, সেজান আহমেদ (ওরফে আরিফ), সাব্বির (ইংরেজি ১২ ব্যাচ), গ্লেসিয়ার রাব্বি (ভূগোল ৯ম ব্যাচ), মুসান্নাবিন আহম্মেদ নাবিল, (ইইই ১১ ব্যাচ), সেজান আহমেদ (এমজিটি ১৩ ব্যাচ), আবির (জিইএস ১৪ ব্যাচ), হৃদয় (ইংলিশ ১৪ ব্যাচ), নাহিদ (পরিসংখ্যান ১২ ব্যাচ), মোশারফ (সমাজবিজ্ঞান বিভাগ), জামাল (রাষ্ট্রবিজ্ঞান ১৫ ব্যাচ), এসএম লাবু ইসলাম (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), মেহেদী হাসান মিরাজ (ইতিহাস ১৩ ব্যাচ), মেজবাউল সরকার জয় (ইতিহাস ১১ ব্যাচ), ইমরান চৌধুরী আকাশ (ইতিহাস ১১ ব্যাচ), শাহিন (রাষ্ট্রবিজ্ঞান ১১ ব্যাচ), মাসুদুল হাসান (রাষ্ট্রবিজ্ঞান ১১ ব্যাচ), শাহিন ইসলাম (রাষ্ট্রবিজ্ঞান ১১), উজ্জ্বল মিয়া (ইংরেজি ১১ ব্যাচ) ,হাবিবুর রহমান (অ্যাকাউন্টটিং ১২ ব্যাচ), তৌফিক (ইতিহাস ১২ ব্যাচ), শাখাওয়াত হোসেন (মার্কেটিং ১২ ব্যাচ), শোয়াইবুল (সাল্লু) (লোক প্রশাসন ১৩ ব্যাচ), ফিলিপ রায় (বাংলা ১৩তম ব্যাচ), মোজ্জামেল (এমআইএস ১৩ ব্যাচ), মাহমুদ (পদার্থ ১২ ব্যাচ) ,সম্রাট (বাংলা ১৪ ব্যাচ), দেবাশীষ (ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং ১৩), আব্দুল্লাহ আল রায়হান (গণিত ১২ ব্যাচ), বায়জিদ মোস্তাফি (গণিত ১৩ ব্যাচ), আতিফ আসাব দিপ্র মণ্ডল (গণিত ১৪ ব্যাচ), আব্দুল্লাহ আল নোমান খান (রাষ্ট্রবিজ্ঞান ১১ ব্যাচ), রিফাত, রাসেল (পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ১৩ ব্যাচ), সিয়াম আল নাহিদ (ইইই ১১ ব্যাচ), ফারহাদ হোসেন এলিট (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), সিয়াম আরাফাত (লোকপ্রশাসন ১২ ব্যাচ), মোমিনুল (জেন্ডার ৮ম ব্যাচ), তানজিল (পদার্থ বিজ্ঞান ১৩ ব্যাচ), অমিত (লোক প্রশাসন ১৩ ব্যাচ), আরিফুজ্জামান ইমন (লোক প্রশাসন ৮), কোমল দেব নাথ (লোক প্রশাসন ১৫ ব্যাচ) এবং গালিব হাসান (মার্কেটিং ১৫ ব্যাচ)।
শিক্ষার্থীদের তিন ক্যাটাগরিতে শাস্তি দেওয়া হবে। যাদের শিক্ষাজীবন শেষ হয়েছে এবং সার্টিফিকেট নিয়ে গেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। যাদের এখনো ছাত্রত্ব আছে তাদের মধ্যে যারা আত্মপক্ষ সমর্থন করেছে তাদের এক ধরনের শাস্তি এবং যারা আসেনি তাদের আরেক ধরনের শাস্তি দেওয়া হবে। ছাত্রত্ব বাতিল, ১-২ কিংবা ৩ সেমিস্টার বাতিল করা হবে। তবে জড়িতদের সংশ্লিষ্টতা বিশ্লেষণ করে শাস্তির সিদ্ধান্ত নেবে শৃঙ্খলা কমিটি।
মন্তব্য করুন