খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) সংস্কার ও ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীরা ৩৭ দাবি জানিয়েছেন।
রোববার (২৭ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত এ আলোচনার আয়োজন করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে শিক্ষার্থীরা এসব দাবি জানিয়েছেন।
এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. নুরুন্নবী, ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর ড. মো. নাজমুস সাদাত ও অন্য শিক্ষকরা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সহকারী ছাত্রবিষয়ক পরিচালক হাসান মাহমুদ সাকি বলেন, রক্ত দেওয়ার পরম্পরা এখনো আমাদের শেষ হয়নি। গত জুলাই মাসে আমরা প্রায় দেড় হাজারের বেশি রক্ত দিয়েছি। স্বৈরাচারী যে পরম্পরা দেশে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছিল সেখানে এই ধরনের আয়োজন প্রশংসনীয়। আমি মনে করি, দাবি করা হয় স্বৈরাচারের কাছে, তাই আমাদের আজকের এই মঞ্চ কোনো দাবির মঞ্চ নয়, এটি আলোচনার মঞ্চ।
অনুষ্ঠানে আন্দোলনের সম্মুখসারির শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদ বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় একটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বিভিন্ন সময় দেখা যায় শিক্ষকরা বিভিন্ন দলের লেজুড়বৃত্তিক কাজে জড়িয়ে থাকেন। দলীয় রাজনীতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা উচিত নয়। বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে এবং অর্ডন্যান্সের ভয় না দেখিয়ে সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। ২৪-এর বিপ্লবের হাত ধরে দেশ ও জাতির কাছে ঘুরে দাঁড়ানোর এখনই সুযোগ। দেশের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কার এখন সময়ের দাবি।
বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্য প্রদানকালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সামনে উল্লেখযোগ্য নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলো তুলে ধরেন।
শহীদ মীর মুগ্ধের স্মরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের নামকরণ এবং সকল শহীদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ।
ক্যাম্পাস সম্প্রসারণের জন্য প্রস্তাবিত জমি অধিগ্রহণ এবং বিক্রীত জমি পুনরায় অধিগ্রহণ।
রাজনৈতিক নামকরণকৃত স্থাপনাগুলোর অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের নামে নামকরণ।
নিরাপদ ও আধুনিক সুযোগসহ শতভাগ আবাসন সুবিধা নিশ্চিতকরণ।
প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সদস্যপদ প্রদানে সহজীকরণ এবং লাইব্রেরি সার্বক্ষণিক খোলা রাখা।
হলগুলোর শৃঙ্খলা বিধি পুনলিখন এবং সেখানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের জন্য একটি সংগঠন ফোরাম গঠন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামে প্রয়োজনীয় আইনসমূহ অন্তর্ভুক্ত করে একটি কোর কোর্স হিসেবে অন্তর্ভুক্তি।
রেজিস্ট্রেশন ফি ২৫০০ টাকা নির্ধারণ এবং মেডিকেলে সেবার মান বৃদ্ধি।
পরীক্ষার খাতায় কোডিং পদ্ধতির প্রচলন এবং অ্যাটেনডেন্সে ৫ মার্ক, কন্টিনিউয়াস অ্যাসেসমেন্টে এ ৩৫ নম্বর নির্ধারণ করা।
চারুকলা স্কুলের জন্য একটি স্বতন্ত্র ভবন এবং খেলার মাঠের সংস্কার।
আবাসিক হলগুলো সারা বছর খোলা রাখার ব্যবস্থা। অভিযোগ গ্রহণের জন্য একটি অভিযোগ সেল গঠন।
কর্মসংস্থানের জন্য একটি কেন্দ্রীয় ক্যারিয়ার প্লেসমেন্ট সেন্টার প্রতিষ্ঠা এবং গবেষণায় শিক্ষার্থীদের সহায়তা প্রদান।
নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতকরণ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘Achievement Corner’ স্থাপন এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বিনাসুদে শিক্ষাঋণ।
মাস্টার্সে ভর্তি ক্ষেত্রে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার প্রদান।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কার এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য এই ধরনের পদক্ষেপ জরুরি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা ও শ্রম দিয়ে উন্নত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে চায় এবং দেশের একটি সুশৃঙ্খল শিক্ষাঙ্গন গড়ে তুলতে অবদান রাখতে বদ্ধপরিকর।
মন্তব্য করুন