ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শহীদ বুদ্ধিজীবী ডাক্তার মো. মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারের প্রধান মেডিকেল অফিসার (সিএমও) মো. তানভির আলীর বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) এবং হেলথ বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বরাবর অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ডাক্তার, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
রোববার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) কার্যালয়ে ২০ থেকে ২৫ ডাক্তার, কর্মকর্তা ও কর্মচারী উপস্থিত হয়ে এ অভিযোগ দায়ের করেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেডিকেল সেন্টারের কয়েকজন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, প্রধান মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. তানভির আলীর নানা অনিয়ম এবং অপকর্মে অতিষ্ঠ হয়ে প্রো-ভিসি ম্যাডামের কাছে অভিযোগপত্র দিয়েছি। আমাদের সঙ্গে সম্মানিত ডাক্তাররা ছিলেন, কর্মচারীও অনেকেই ছিলেন। আমরা মোট ২০-২৫ জন গিয়েছিলাম। এক্ষেত্রে আমরা একটু গোপনীয়তা রক্ষা করেছি। শুধু আমরাই নই, মেডিকেল সেন্টারের সবাই তার কাছে এক প্রকার জিম্মি। আমরা তার পদত্যাগ চাই।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আমরা মেডিকেল সেন্টারের সর্বস্তরের ডাক্তার, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা প্রধান মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মো. তানভির আলীর নানা অনিয়ম এবং অপকর্মের শিকার। প্রধান মেডিকেল অফিসার ডাক্তার তানভীর আলীর প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকাণ্ডের কারণে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের সুনাম এবং কর্মপরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে।
অভিযোগপত্রে মেডিকেল সেন্টারের বর্তমান প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. মো. তানভীর আলীর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডগুলো তুলে ধরা হয়। অভিযোগকারীদের ভাষায় সেগুলো হলো :
১. ডা. মো. তানভীর আলী বহুল আলোচিত সাবেক উপাচার্য আক্তারুজ্জামান স্যারের শেষ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিগত সরকারের মন্ত্রী-এমপির সুপারিশে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. হাফেজা জামানকে বিরোধী রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে, বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাকে সরিয়ে তিনি প্রধান মেডিকেল অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান।
২. প্রধান মেডিকেল অফিসার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ছাত্রছাত্রীদের সেবা দেওয়ার জন্য ৪টি (চার) অ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক তাহার নিজের এবং পারিবারিক কাজের জন্য ব্যবহার করেছেন; এ বিষয়ে কিছু বললে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, যা বিভন্ন পত্রিকায় বিস্তারিত উল্লেখ আছে।
৩. সেন্টারে কর্মরত বিশেষ করে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের তাহার পারিবারিক কর্মচারী হিসেবে ব্যবহারসহ বাসার বাচ্চা পালনসহ ব্যাক্তিগত বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতেন। এ বিষয় ও অনলাইন/অফ লাইন পত্রিকায় নিউজ হয়েছে এবং সেন্টার থেকে কর্মচারী-কর্মকর্তারা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের গাছ কাটায় বিধি-নিষেধ থাকলে ও তিনি কোনো প্রকার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নির্বিচারে মেডিকেল সেন্টারের প্রায় ৫০ (পঞ্চাশ) ঊর্ধ্বে বিভিন্ন প্রকার ঔষধি এবং ফলনশীল গাছ কেটে রাতের আঁধারে প্রায় ৩ লাখ টাকার গাছ বিক্রি করেন, কিন্তু উক্ত টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজের ইচ্ছামতো ব্যয় করেন। বিষয়টিও জাতীয় পত্রিকায় উল্লেখ আছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে।
৫. তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অতি প্রয়োজনীয় অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সীমিত করেন যার কারণে প্রায় সময় ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের তোপের মুখে পড়তে হয়।
৬. সেন্টারের প্রয়োজন ব্যতীত নিজের প্রয়োজনে তাহার পছন্দ মতো একাধিক কর্মচারীকে ওভারটাইম ভাতা দিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী গড়ে তুলেছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থের অপচয়।
৭. মেডিকেল সেন্টারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে তিনি সব সময় খারাপ আচরণ করে যাচ্ছেন এবং কথায় কথায় চাকরি খাওয়া এবং এসিআর রিপোর্টের ভয়ভীতি দেখানোর কারণে দুজন কর্মচারী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে, উক্ত বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে।
৮. তিনি বিগত সরকারের ছাত্র সংগঠন ও ছাত্রলীগের সাথে যোগসাজশে নামমাত্র মূল্যে সেন্টারের অনেক মেশিনারিজ ও আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত দেখিয়ে বিক্রি করেন।
৯. ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি খুবই বিতর্কিত মানুষ, বর্তমানে দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে উনার সংসার, স্ত্রী চাকরি সূত্রে কুড়িগ্রামে সার্বক্ষণিক অবস্থানের কারণে ঢাকায় উনি একাই থাকেন। প্রথম স্ত্রীর ডিভোর্সের পর মেডিকেল সেন্টারের লোকজন ওনার প্রথম স্ত্রীর আত্মীয়ের সাথে কয়েকবার মামলা ও বাদানুবাদের প্রত্যক্ষদর্শী।
১০. উনার বসার কক্ষের পিছনে আরেকটি কক্ষে শোবার ঘরের যাবতীয় উপাদান রয়েছে এ ব্যাপারে সেন্টারে নানা আপত্তিকর কথা শোনা যায়, যা গোপন তদন্তে বের হয়ে আসবে।
১১. মেডিকেল সেন্টারের অনেকগুলো পদ খালি থাকায় সেই সকল পদ-এর বিপরীতে নিয়োগ তো দূরে থাক নিজ স্বার্থের জন্য তা কর্তৃপক্ষকে অবহিতও করেননি।
১২. যে কোনো বিষয়ে তিনি তার রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করছেন এবং কোনো অভিযোগই তার কিছু করতে পারবে না বলে সব সময় জোর গলায় বলে থাকেন।
মন্তব্য করুন