কারাগারে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় বসছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের দুই নেতা। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশে বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা নেওয়ার এই ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
কারাগারে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আশিকুর রহমান এবং পরিসংখ্যান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অমিত সাহা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নাশকতা মামলায় ৮ অক্টোবর তাদের দুজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে আদালতের আদেশে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আইনজীবীর মাধ্যমে ওই দুজন পরীক্ষার রুটিনসহ জামিনের জন্য চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেছিলেন। আদালত শুধু পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আদালত থেকে আদেশ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুইজন শিক্ষক এসে বৃহস্পতিবার অমিত সাহার একটি পরীক্ষা নিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে একটি আদেশপত্র আসে ওই দপ্তরে। এতে ওই দুজন নেতার পরীক্ষার ব্যবস্থা করার আদেশ দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনুমতি সাপেক্ষে তাদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর। পরিসংখ্যান ও পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগ থেকে দুজন করে পরিদর্শক পরীক্ষা গ্রহণের জন্য কারাগারে যাচ্ছেন। রুটিন অনুযায়ী কারাগারে গিয়ে তাদের পরীক্ষা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন বলেন, আদালতের আদেশে ও উপাচার্যের অনুমতিতে ওই দুই শিক্ষার্থীর পরীক্ষার গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভাগীয় প্রধানেরাও সহযোগিতা করছেন।
কেন্দ্রীয় কমিটির সিলেটের সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব কালবেলাকে বলেন, শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অমিয় শাহ এবং আশিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য গ্রেপ্তার হয়েছে। এই দুজনই জুলাই আন্দোলনে সরাসরি হামলার সাথে জড়িত। এছাড়াও হলে তাদের রুম থেকে অস্ত্র এবং মাদক উদ্ধার হয়েছে। এমন চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের রাষ্ট্রীয় আইনে বিচারের পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী আজীবন বহিষ্কার হওয়ার কথা। কিন্তু এতদিন চলে যাওয়ার পরেও তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে পরিক্ষায় বসার অনুমতি দেওয়া উদ্বেগের বিষয়। এভাবে চলতে থাকলে প্রশাসনের উপর শিক্ষার্থীদের আস্থা কমতে থাকবে। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি তারা যেনো দ্রুত এইসব চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বহিষ্কারের ব্যবস্থা করে।
অমিত সাহা ও আশিকুর দুজনই ১৮ জুলাই শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী রুদ্র সেন হত্যা মামলার আসামি। এ ছাড়া অমিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরাণ হলের ৪২৩ নম্বর কক্ষে থাকতেন। গত ১৭ জুলাই ছাত্রলীগ হলছাড়া হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা ওই কক্ষ থেকে দুটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিপুল মাদক উদ্ধার করে। একই হলের ৪২৭ নম্বর কক্ষে থাকতেন আশিকুর। তার কক্ষ থেকেও মদের বোতল উদ্ধার করা হয়েছিল।
মন্তব্য করুন