কোটা সংস্কার আন্দোলন দিয়ে শুরু হওয়া চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থান চলাকালে ১৮ থেকে ২০ জুলাই ও ৪ থেকে ৭ আগস্ট এই সাত দিনে ৮৫২ নিহত হয়েছেন। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের দিন ৫ আগস্ট কমপক্ষে ২৯৪ জন নিহত হয়েছেন। তার দায়িত্ব থাকা অবস্থায় ১৬ জুলাই থেকে ০৫ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে কমপক্ষে ৭৭২ জন নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) প্রকাশিত মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) এক তথ্য বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ভিকটিমের পরিবার, ১২ টি জাতীয় দৈনিক, এইচআরএসএসের তথ্য অনুসন্ধানী ইউনিট ও সারাদেশ থেকে স্বেচ্ছাসেবকদের পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে সংগঠনটি এই গনঅভ্যুত্থানে নিহতদের বিষয়ে এই পর্যালোচনা প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করে।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ৯৮৬ জনের মধ্যে ১৬ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত ৩৪৬ জন ও ৪ আগস্ট থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত ৬৪০ জন নিহত হয়েছেন। শুধুমাত্র ৭ দিনে (১৮ থেকে ২০ জুলাই ও ৪ থেকে ৭ আগস্ট) ৮৫২ নিহত হয়েছেন। শেখ হাসিনার পতনের দিন ৫ ই আগস্ট কমপক্ষে ২৯৪ জন নিহত হয়েছেন। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের দায়িত্ব থাকা অবস্থায় ১৬ জুলাই থেকে ০৫ আগস্ট সারাদেশে কমপক্ষে ৭৭২ জন নিহত হয়েছেন। ৬ থেকে ৮আগস্ট যখন দেশে কোন সরকার বিদ্যমান ছিল না তখন কমপক্ষে ১৬৪ জন নিহত হয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ৯ আগস্ট থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৯ জন মারা গেছেন যাদের অধিকাংশই পূর্ববর্তী ঘটনায় আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন।
নিহতদের তথ্য বিশ্লেষণ করে এইচআরএসএসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ভিকটিমের পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী, হাসপাতাল ও জাতীয় দৈনিক গুলোর সূত্র থেকে আমরা এ পর্যন্ত ৯৮৬ জনের মৃত্যুর তথা পেয়েছি। এর মধ্যে ৮৬৮ জনের নাম জানা গেলেও ১১৮ জনের নাম জানা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও আমরা গণমাধ্যম, হাসপাতাল ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে যেসকল বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাচ্ছি তার উপর ভিত্তি করে আমরা বলতে পারি যে নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ১২০০ জন হবে। নিহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী শ্রমজীবী, সাংবাদিক, পেশাজীবি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, শিশু ও নারীসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থক রয়েছেন। আন্দোলনে কমপক্ষে ১২৭ জন শিশু, ৬ জন সাংবাদিক, ৫১ জন আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য, এবং ১৩ জন মেয়ে শিশু ও নারী নিহত হয়েছেন।
বয়সভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে এতে বলা হয়, ৯৮৬ জনের মধ্যে ৭৬০ জনের বয়স সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে ৪ বছরের আহাদ ও ৬ বছরের রিয়া গোপসহ প্রায় সকল বয়সী মানুষই রয়েছেন। ৭৬০ জনের মধ্যে ১৮ বছরের কমবয়সী শিশু ১২৭ (১৭ শতাংশ) জন, তরুণ বয়সী ৪১৮ (৫৫ শতাংশ) জন, মধ্যবয়সী ১৮১ (২৪ শতাংশ) জন, এবং বয়স্ক ব্যক্তি আছেন ৩৪ (৪ শতাংশ) জন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো নিহতদের মধ্যে যাদের বয়স জানা গেছে তাদের ৭২ শতাংশ এর বয়স ৩০ এর মধ্যে।
পেশাভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহতদের মধ্যে ৫৫৬ জনের পেশা সম্পর্কে তথা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে শিক্ষার্থী ২৬৫ (৪৮ শতাংশ) জন, শ্রমজীবী আছেন ১৩৩ (২৪ শতাংশ) জন, আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য ৫১ (৪ শতাংশ) জন, বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী ৪১ (৭ শতাংশ) জন, অন্যান্য পেশায় রয়েছেন ৬৬ (১২ শতাংশ) জন। নিহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী ও শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা ৭১ শতাংশ এর বেশি।
নিহতদের ধরণ সম্পর্কে তথ্য বিশ্লেষণ করে এতে বলা হয়, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মোট ৮৭৯ জনের মৃত্যুর ধরণ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬৭৯ (৭৭ শতাংশ) জন গুলিতে, ৯১ (১০ শতাংশ) জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে, ৮৪ (১০ শতাংশ) জনকে পিটিয়ে এবং অন্যান্য কারণে মারা গিয়েছেন ২৫ (৩ শতাংশ) জন।
সম্পৃক্ত বাহিনী বা গোষ্ঠীর তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গণঅভ্যুত্থানে ঘটে যাওয়া বিপ্লবে হত্যার সাথে সম্পৃক্ত বাহিনী বা গোষ্ঠীর বিষয়ে ৬৬০ জনের তথ্য পাওয়া গিয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, শুধুমাত্র পুলিশের হামলায় ৫১৮ (৭৮৯) জন, অন্যান্য আইন শৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনীর হাতে ৫২ জন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাতে ৫২ জন, এবং গণপিটুনিতে ৩৮ জন নিহত হয়েছেন।
মন্তব্য করুন