মো. জাফর আলী
প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩০ পিএম
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধে ছাত্রনেতাদের প্রতিক্রিয়া

মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানালেন ছাত্রনেতারা। ছবি : সংগৃহীত
মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানালেন ছাত্রনেতারা। ছবি : সংগৃহীত

আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করার ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের নেতারা।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) কালবেলার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এ প্রতিক্রিয়া জানান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদিক কায়েম, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা এবং বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি।

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় ছাত্ররাজনীতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে মন্তব্য করে ছাত্রদল সেক্রেটারি নাছির বলেন, ছাত্রলীগ একটি খুনি সংগঠন। খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, ভোট ডাকাতি থেকে শুরু করে গণহত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে ছাত্রলীগ। সব জঙ্গি সংগঠন মিলে যত মানুষ খুন করেছে ছাত্রলীগ এককভাবে তার চেয়ে বেশি মানুষ খুন করেছে। ২০০৯ সাল থেকে সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী তাণ্ডবের বিরুদ্ধে ছাত্রদল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। এতে ছাত্রলীগ এবং সরকারি বাহিনীর হাতে ছাত্রদলের শতাধিক নেতাকর্মী গুমের শিকার হয়েছে এবং শহীদ হয়েছে। ছাত্রলীগ ছাত্ররাজনীতির ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছিল। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে রেহাই পেতে যখন বিভিন্ন মহল থেকে বুয়েটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি উঠেছিল, তখন ছাত্রদল শুধু সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি করেছিল। আজ ছাত্রলীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে ছাত্ররাজনীতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। গণতন্ত্রকামী সকল ছাত্রসংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পরিবেশে সুস্থ ধারার রাজনীতি চর্চার পথ উন্মুক্ত হয়েছে। শুধু ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করা চূড়ান্ত সমাধান নয়। ছাত্রলীগের হয়ে যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছে তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

ঢাবি শিবির সভাপতি জানান, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম বৃহৎ একটি অর্জন। প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তা একটি যৌক্তিক ও সাহসী সিদ্ধান্ত। আমরা দেখে আসছি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী রেজিমে ছাত্রলীগ ও তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম কী রকম ভয়ানক রূপ ধারণ করেছিল। খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজ, ক্যাম্পাস দখল, ছাত্র-শিক্ষক নির্যাতনসহ অপরাধের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে তাদের বিচরণ ছিল না। তাছাড়া আমাদের চব্বিশের বিপ্লবে শতসহস্র ভাইবোনকে পৈশাচিকভাবে রক্তাক্ত করে শিশু হত্যা ও গণহত্যা চালিয়েছে। তাদের এহেন অপরাধ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না বরং তার ধারাবাহিকতার মাত্রা দিন দিন আরও বর্বরোচিত হচ্ছিল। এখনো তারা বিভিন্নভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করতে পাঁয়তারা করছে। ছাত্রলীগ কেন নিষিদ্ধ করা হলো তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের জরুরতও দেখি না। পুরো দেশের আকাঙ্ক্ষারই এখানে বাস্তবায়ন ঘটেছে। শুধু নিষিদ্ধ নয়, যারা খুন, ধর্ষণ, গণহত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল ও মৌন সমর্থন দিয়ে গেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। পরবর্তী সময়ে যেন দেশকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে না পারে সেদিকেই ছাত্রজনতা ও সরকারের সচেতন দৃষ্টি প্রত্যাশিত।

নিষিদ্ধ করলেই হবে না, বিচারের আওতায় আনতে হবে মন্তব্য করে ছাত্র অধিকার সভাপতি বলেন, সারাদেশের অসংখ্য শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ কর্তৃক অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আমি নিজেও বহুবার নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমার কাছে মনে হচ্ছে, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করায় শিক্ষার্থীরা একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে এবং তাদের মধ্যে একটা প্রশান্তির আবহ বয়ে যাচ্ছে। এই নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়েই সব কাজ শেষ হয়ে যায়নি। বরং ছাত্রলীগের প্রত্যেক সন্ত্রাসীকেই তাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ বিচারের আওতায় আনা উচিত। তাহলে সর্বস্তরের জনগণ স্বস্তি অনুভব করবে। কারণ, তারা এখনো দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে যাচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতেও তারা বড় ধরনের বিশৃঙ্খলার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে।

অন্যদিকে, বিচারে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসবাদী আদর্শ নির্মূল সম্ভব হতো, নিষিদ্ধ করে নয় মন্তব্য করে ইউনিয়ন সেক্রেটারি বলেন, স্বৈরাচারের সন্ত্রাসী বাহিনী হিসেবে গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যেসব দমন-পীড়ন ও অপকর্ম করেছে, সেই প্রতিটি ঘটনার বিচার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে সমাজে এটা প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ রয়েছে যে ‘শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি’র কথা বলে ক্ষমতার প্রতি মূর্খ আনুগত্য, সন্ত্রাস ও পশ্চাৎপদতার দৃষ্টান্ত স্থাপনকারীরা কোনোভাবেই শাস্তি এড়াতে পারে না। এই প্রক্রিয়ায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসবাদী আদর্শ নির্মূল করা সম্ভবপর হতে পারে। নিষিদ্ধ করে তা সম্ভব কি না, তা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পাসপোর্টে এক্সেপ্ট ইসরায়েল পুনর্বহালসহ ৪ দফা দাবি

অবসরের পর কী করবেন মেসি? জানালেন নিজের ভাবনা

শনিবার থেকে শহীদ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা শুরু

টিউশনি শেষে ফেরার পথে ইবি শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম

দুর্নীতির অভিযোগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষের এমপিও স্থগিত

পিরোজপুরে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা বিপ্লব গ্রেপ্তার

পৃথিবীর মানুষ দেশের তরুণদের দিকে তাকিয়ে আছে  : উপদেষ্টা নাহিদ

ছেলেকে আর দ্বীনদার আলেম বানানো হলো না মনসুরের

‘দেশটাকে সুন্দর করতে সময় লাগবে না’

চিন্ময় প্রভুর বিরুদ্ধে মামলার বাদীকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার

১০

তরুণ প্রজন্মই বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে : নাহিদ ইসলাম

১১

সাবেক মন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদির ৫ দিনের রিমান্ডে

১২

শিক্ষার্থীদের মাঝে স্কুল ব্যাগ ও পুষ্টিকর খাদ্য বিতরণ গুড নেইবারসের

১৩

গণমাধ্যমকে জামায়াত আমির / সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে হবে

১৪

ব্যালন ডি’অর জয়ী রদ্রিকে দলে নিতে মরিয়া রিয়াল

১৫

বিশ্বজয়ী হাফেজ মুয়াজকে ছাত্রদলের শুভেচ্ছা

১৬

শেখ পরিবারের কারোরই রাজনীতিতে ফেরার সম্ভাবনা নেই : তাজকন্যা

১৭

‘জলাবদ্ধতার কারণে ছোট নদীগুলোতে পানি নামতে পারে না’

১৮

ছুটির দিনেও চলছে বাজার মনিটরিং

১৯

অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেন ইসরায়েলি সেনাপ্রধান

২০
X