শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পদত্যাগ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও চবি ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি রন্টু দাশ। তিনি এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) দুপুর দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অফিস কক্ষে শিক্ষার্থীদের সামনে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন চবি শিক্ষক রন্টু দাশ ।
উপাচার্য বরাবর পাঠানো পদত্যাগপত্রে রন্টু দাশ লিখেছেন, ‘আমি নিম্নস্বাক্ষরকারী স্বেচ্ছায় ইতিহাস বিভাগের শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগ করছি। এ বিষয়ে আপনাকে অবগত করছি।’
জানা গেছে, পতিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর দাবি করে এ শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করেছেন একদল শিক্ষার্থীরা। পরে তোপের মুখে তিনি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চবি সমন্বয়ক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘রন্টু দাশ হচ্ছেন একজন ফ্যাসিবাদের দোসর। শিক্ষক হওয়ার মতো কোনো যোগ্যতাই তার নেই। ২.৯৪ সিজিপিএ নিয়ে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারে না। তিনি দলীয় প্রভাব কাটিয়ে শিক্ষক হয়েছেন।’
ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. শামীমা হায়দার গণমাধ্যমকে বলেন, শিক্ষক রন্টু দাশের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী যা হওয়ার হবে। এভাবে পদত্যাগ করলেই তো আর পদত্যাগ হয় না, সবকিছুর একটা নিয়ম আছে। দীর্ঘদিনের ঘটনার প্রেক্ষিতে হয়তো শিক্ষার্থীদের মনে হচ্ছে এখনই পদত্যাগ করতে হবে। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের ঘটনাটি তো অনেক পুরোনো। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমি মনে করি প্রক্টর স্যার সময় নিয়ে প্রয়োজনে মামলা করার দরকার হলে তা করবেন।
এ বিষয়ে প্রক্টর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন গণমাধ্যমকে, আমরা খবর পাই সাধারণ শিক্ষার্থী ইতিহাস বিভাগের এক শিক্ষকের পদত্যাগের দাবি তুলেছে। বিভাগ থেকে খবর পাওয়ার আগেই আমি দুইজন সহকারী প্রক্টরকে ঘটনাস্থলে পাঠাই। শিক্ষার্থীরা কয়েকটি পত্রিকায় রিপোর্ট দেখিয়ে জানিয়েছে ওই শিক্ষক হত্যা মামলার আসামি ও পুলিশ গ্রেপ্তারও করেছিল।
প্রক্টর বলেন, বিভাগ থেকে উপাচার্যের আসার কথা বলা হলেও আমাকে জানা হয়নি। পরে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি একজন শিক্ষক পদত্যাগপত্র লিখেছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী চাপের মুখে জোর করে বা অনিচ্ছাকৃত পদত্যাগ গ্রহণ হয় না। তাই আমি শিক্ষার্থীদের সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে তারা তা বুঝতে সক্ষম হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পদত্যাগপত্রের একটি ছবি পেয়েছি। তবে মূল কাগজটি পাইনি। মূল কাগজ পেলে আইন অনুযায়ী যা করণীয়, তারা তা করা হবে।’
গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবির ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষে দুই শিবির নেতা নিহত হন। তারা হলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. মুজাহিদুল ইসলাম মুজাহিদ ও ইংরেজি চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মাসুদ বিন হাবিব।
পরে এ ঘটনায় ওই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি ৪২ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে আদালতে হত্যা মামলা দায়ের হয়। এতে অজ্ঞাতনামাসহ ৩৫ থেকে ৪০ জনকে আসামি করা হয়। সেখানে রন্টু দাশের নামও ছিল।
অভিযোগ রয়েছে, রন্টু দাশ শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত থাকায় যোগ্যতা শিথিল করে চবিতে শিক্ষক হয়েছিলেন। শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে গ্রেডিং পদ্ধতিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের এসএসসি বা সমমান ও এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষার উভয়টিতে ন্যূনতম জিপিএ-৩.০ পয়েন্ট এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে পৃথকভাবে ৩.৫ থাকতে হবে। কিন্তু রন্টু দাশ এইচএসসিতে পেয়েছেন ২.৯২ এবং স্নাতকে ২. ৯৪। ওই সময় চবি উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল আজিম।
মন্তব্য করুন