শিক্ষার্থীদের মানসিক নির্যাতন, হিজাব ও বোরকা নিয়ে কটূক্তিসহ নানা অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক সুভাষ চন্দ্র সূতারকে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির ৩১ তম জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী।
তিনি বলেন, বিভাগের শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত অধ্যাপকের বিরুদ্ধে আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করে। যার প্রেক্ষিতে আজ দুপুরে বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির ৩১তম জরুরি সভা আহ্বান করি। সভায় অভিযোগের বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়।
সেখানে বিভাগের শিক্ষকদের প্রায় দুই ঘণ্টা আলোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে অধ্যাপক সুভাষ চন্দ্র সূতারকে বিভাগের সকল অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের আবেদন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
এর আগে, শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক নির্যাতন, সাম্প্রদায়িক বৈষম্যমূলক ও অপেশাদার আচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগে অধ্যাপক ড. সুভাষ চন্দ্র সূতারকে। অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এদিন বিকাল ৩টার দিকে বিভাগের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা। পরে বিভাগের সভাপতির কাছে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা দেন।
বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা, ‘এক দফা এক দাবি, সুভাষের চাকরিচ্যুতি’, ‘সুভাষের চামচারা হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘চারুকলায় তেলবাজি চলবে না চলবে না’, ‘সুভাষের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’, ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা, চলবে না চলবে না’, ‘হৈ হৈ রৈ রৈ, তামা সুভাষ গেলো কই’ প্রভৃতি লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
অধ্যাপক সুভাষ চন্দ্র সূতারের বিরুদ্ধে বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যারা মুসলিম শিক্ষার্থী বোরখা-হিজাব পড়তেন বা দাড়ি রাখতেন তাদের শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত অপমান-অপদস্থ করা, নিকাব না খুললে শ্রেণিকক্ষের কাজ না দেখা এবং কাজ মেঝেতে ছুড়ে ফেলা, পরীক্ষায় মার্কস কম দেওয়া, ফেইল বা ইয়ার ড্রপ করানো এবং বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দেওয়া, পরিবার নিয়ে কটাক্ষ, শিক্ষার্থীদের বোরখা ছেড়ে আধুনিক খোলামেলা পোশাক পরতে উদ্বুদ্ধ করা, নিজে সনাতন ধর্মাবলম্বী হওয়ায় নিজ ধর্মের শিক্ষার্থীদের কাজের মান তুলনামূলক অন্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় কম মানসম্মত হলেও ক্লাস পরীক্ষায় তাদের বেশি মার্কস দেওয়া। এছাড়া বিভাগের ক্লাস/ল্যাবে কোনো ধরনের ডিজিটাল কাজ না শিখিয়ে নিজ বাসায় শিক্ষার্থীদের ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে কোর্স করানোর অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রুবাইয়া ফাহমিদ বলেন, ‘আমি বোরকা পড়ি বলে তিনি আমার ফাইনাল ইনকোর্সের কোনো কাজই দেখেননি। আমিসহ আমার অন্য সহপাঠীদের বোরখা নিয়ে কটাক্ষ করে কথা বলেন। তার ব্যবহারে প্রায়ই কান্না চলে আসে। প্রায়ই বলেন বোরকা পরলে চারুকলায় পড়ার কোনো যোগ্যতা নেই। আমি ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে এখানে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। তাহলে একজন শিক্ষক এমন কথা কিভাবে বলেন। এখন অবস্থা এমন যে উনাকে দেখলে আমি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে যাই।
বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের আরেক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রাফিন চৌধুরী বলেন, ‘আমাকে নামাজ পড়তে দেখে বলতেন নামাজ পড়ে কোনো লাভ হবে না বরং অ্যাকাডেমিক ফলাফলে বাজে প্রভাব পড়বে। চারুকলার মতো জায়গায় এমন ধর্মীয় গোঁড়ামি চলবে না। এছাড়া ফ্রিল্যান্সিং করি বলে তিনি প্রায়ই আমাকে বলতেন তোর তো টাকার লোভ, তোর পড়ালেখা হবে না।’
মন্তব্য করুন