সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে তার পদত্যাগ ও ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা। পরে দুপুর দেড়টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীবের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেন তারা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে মোঃ সাহাবুদ্দিন বক্তব্য দিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে পদত্যাগ করতে হবে। এ ছাড়া ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ এবং সর্বস্তরের আওয়ামী সন্ত্রাসী-কুশীলবদের বিচার করতে হবে। এই দেশে যারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে, তাদের অপচেষ্টা কখনোই সফল হবে না।
বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ‘ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে, ডিরেক্ট অ্যাকশন’, ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে, ডিরেক্ট অ্যাকশন’, ‘লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাচতে চাই’, ‘দিয়েছি যে রক্ত, আরও দেব রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘রায়হান-সাকিব-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘লেজড়বৃত্তিক রাজনীতি চলবে না চলবে না’, ‘দড়ি ধরে মারো টান, চুপ্পু হবে খান খান’, ‘এক দুই তিন চার চুপ্পু তুই গদি ছাড়’ প্রভৃতি স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, চুপ্পু (মোঃ সাহাবুদ্দিন) আপনি ঘোষণা দিয়েছেন, শেখ হাসিনা আপনার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেয় নাই, এ দিয়ে আপনি কী ইঙ্গিত করতে চাচ্ছেন? আমরা স্পষ্ট ঘোষণা দিতে চাই, কোনো অবস্থাতেই আর কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র হতে দেওয়া হবে না। যে কুমিল্লা সীমান্তে আপনারা এক হয়ে এই দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন, আপনাদের এই অপচেষ্টা সফল হতে দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, এই অভ্যুত্থানে দুই হাজারের অধিক শহীদ হয়েছে প্রয়োজনে লাখো শহীদ হবে। আর কোনো অবস্থাতেই আওয়ামী ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার এই দেশের মাটিতে পা রাখতে পারবে না। আওয়ামী লীগ এই দেশে রাজনীতি করার অধিকার রাখে না। এ জন্য ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানাতে হবে। ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে যদি প্রথম শহীদ হতে হয়, সেই শহীদ যেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হয়। ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে যদি প্রথম শহীদ হতে হয়, সেই শহীদ যেন মেহেদী সজীব হয়।
সমন্বয়ক ফাহিম রেজা বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপতির উদ্দেশ্যে বলতে চাই আপনি যদি কোনো স্বৈরতন্ত্রে লিপ্ত হন, তাহলে অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করুন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯টা দাবির মধ্যে একটা ছিল ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। এই ক্যাম্পাসে শোডাউনের রাজনীতি, হল দখলের রাজশাহী, গেস্টরুমের রাজনীতিকে এক হতে দেওয়া যাবে না। আওয়ামী লীগের দোসররা বিভিন্ন সময় আমাদের আন্দোলনকে উৎখাত করার চেষ্টা করেছে। আন্দোলনকারীদের সন্ত্রাসী বলে আখ্যা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সেই দোসরা এখনো ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের পরীক্ষা দিতে সাহায্য করছে। আমরা প্রশাসনকে বলতে চাই তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
হুঁশিয়ারি দিয়ে ফাহিম রেজা বলেন, ‘এই আন্দোলন থেকে রাষ্ট্রপতিকে আমি বলে দিচ্ছি আপনি অতি দ্রুত পদত্যাগ করুন। যদি না করেন তাহলে সেই জুলাই আগস্টের মতো এই প্যারিস রোড আবার স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হবে।’
কর্মসূচিতে সঞ্চালনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাবি সমন্বয় ফজলে রাব্বি মো. ফাহিম রেজা। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সমন্বয় রাশেদ রাজন ও মেহেদী হাসান মুন্না। এসময় বিভিন্ন বিভাগের প্রায় অর্ধ-শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন