ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় ফেল করা শিক্ষার্থীদের ফলোন্নয়ন পরীক্ষার জন্য গত জুন মাসে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত ডিনস ফি বাবদ জরিমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সাথে পরীক্ষায় অংশ নিতে বিজ্ঞান ইউনিটভুক্ত অনুষদের শিক্ষার্থীদের ১৫ হাজার টাকা দিয়ে কার্জন হল ভাড়া নিতে হয়। এমনকি একজন শিক্ষার্থী হলেও তাকে পুরো কার্জন হল ভাড়া নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। এই প্রথাকে ‘অমানবিক’ আখ্যা দিয়ে তা সংস্কারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের (শিক্ষা) কাছে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে ইউনিভার্সিটি রিফর্মেশন ইনিশিয়েটিভস (ইউআরআই) নামে একটি প্ল্যাটফর্ম।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান এবং উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের নিকট স্মারকলিপি আকারে এ প্রথাগুলোর সংস্কার প্রস্তাব জানানো হয়।
এ সময় প্ল্যাটফর্মটির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন- ঢাবি শিক্ষার্থী আদনান মুস্তারি, রাফিয়া রেহনুমা হৃদি, মো রেদওয়ানুল হাসান, আনোয়ার ইব্রাহীম বিপ্লব, জোবায়ের হোসাইন শাহেদ প্রমুখ।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী একজন নিয়মিত শিক্ষার্থীর জন্য চার বছরের অনার্স ছয় বছরে এবং এক বছরের মাস্টার্স দুই বছরে শেষ করার সুযোগ রয়েছে। চতুর্থ বর্ষে যারা এক বা একাধিক বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হয়, তাদের ক্ষেত্রে পুনরায় পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটির অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। ফলোন্নয়ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য একজন শিক্ষার্থীকে প্রতি বিষয়ের জন্য ডিন’স ফাইন বাবদ জরিমানা করা হয় দশ হাজার টাকা করে। গত ২৪ জুনের ডিনস কমিটির সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তে ফলোন্নয়নে অংশগ্রহণের জন্য কোনো কোনো শিক্ষার্থীকে ষাট হাজার পর্যন্ত জরিমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই জরিমানার বাইরেও বিজ্ঞান ইউনিটভুক্ত অনুষদগুলোর ক্ষেত্রে ফলোন্নয়ন পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীকে নিজ খরচে ভাড়া নিতে হয় কার্জন হল। এমনকি কোনো বিভাগে কেবল একজন শিক্ষার্থীকেও যদি ফলোন্ননয়ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়, তাকেও আবশ্যিকভাবে ভাড়া নিতে হয় পুরো কার্জন হল। যার ভাড়া সেশনপ্রতি পনেরো হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
এতে আরও বলা হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এই পরিমাণ ফি মওকুফের জন্য নানা জায়গায় দিনের পর দিন ধরনা দেওয়ার প্রয়োজন হয় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে। ফলত ইতোমধ্যে হতাশায় নিমজ্জিত থাকা শিক্ষার্থী পরীক্ষায় নিজেকে পুনরায় প্রমাণ করার স্পৃহা সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে ফেলে। এই বিশাল অঙ্কের জরিমানা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এমনকি শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটাতেও বাধ্য হতে হয় শিক্ষার্থীদের। তাই আমরা যে কোনো শিক্ষার্থীর উপর এই পরিমান জরিমানা ধার্য করাটা অমানবিক ও অযৌক্তিক মনে করি।
স্মারকলিপিতে জরিমানা নেওয়ার প্রথা সংস্কারে পাঁচ দফা দাবি জানায় ইউনিভার্সিটি রিফর্মেশন ইনিশিয়েটিভস। সেগুলো হল- স্পেশাল পরীক্ষার ডিনস ফাইনের পরিমাণ কমাতে হবে; স্পেশাল পরীক্ষার জন্য কার্জন হল ভাড়া বাবদ ফি প্রত্যাহার করতে হবে। প্রয়োজনে নিজ নিজ ডিপার্টমেন্টে স্পেশাল পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে; চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল পরীক্ষা শেষ হওয়ার সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে; সব ফ্যাকাল্টিতে ফলাফল প্রকাশের পর সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে; নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সব বিষয়ে ফলোন্নয়ন পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ রাখতে হবে। ফলোন্নয়ন পরীক্ষার সর্বোচ্চ ফলাফলের কোনো সীমা (বর্তমানে যা ৩.২৫ হিসেবে প্রচলিত) নির্দিষ্ট করে দেওয়া যাবে না।
মন্তব্য করুন