মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আহসান হাবিব নিষাদ প্রথমবার বিসিএস দিয়েই ৪১ তম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) এ প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি ভোলা সদরের চরনোয়াবাদের ফরহাদ হোসেন এর ছেলে।
প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার বিষয়ে আহসান হাবিব নিষাদ জানান, বিশ্ববিদ্যালয় বলতে আমি যেটা বুঝতাম ক্লাব আর মুক্তমঞ্চ। পড়াশোনা একদমই করতাম না। আমি একজন ব্যাকবেঞ্চার। আমার সিজিপিএ ছিল ২.৯২।
তিনি আরও বলেন, তখন কেবল অনার্সের পরীক্ষা দিলাম। পরীক্ষার ফলাফলও প্রকাশ হয়নি। বিসিএস দেওয়ার কোনো ইচ্ছে ছিল না এবং বিসিএস সম্পর্কে আমার খুব একটা ধারণাও ছিল না। আমি প্লান করেছিলাম আইবিএ করব। ইএসআরএম বিভাগের সেলিম ভাই এখন দুদক এর এডি আর গণিতের রিওন ভাই এখন অগ্রনী ব্যাংকে কর্মরত। তারা জোর করেই আমাকে বিসিএস এর আবেদন করান। অনার্স এর এপিয়ার্ড দিয়ে আবেদন করি। তারা না জোর করলে হয়ত আজ কিছুই সম্ভব হতো না। বাসায় বসে বসে পড়াশোনা করেছি। কোথাও কোচিং করিনি। লাইভ এমসিকিউ তে পরীক্ষা দিতাম। তা ছাড়াও আমার ডিপার্টমেন্টের রিফাত ফারাবি সৌরভ ভাই এখন অডিট ক্যাডার, উনি বেশ হেল্প করেছিল। ভাইদের কাছে অনেক কৃতজ্ঞ।
আরও পড়ুন: স্বামীর প্রেরণায় বিসিএস ক্যাডার লাবনী
তিনি জানান, ৪১ তম বিসিএসের রিটেনের পর আমি এনএসআই এ লিখিত পরীক্ষায় পাশ করি, কিন্তু ভাইভা দেইনি। কারণ সেখানে যোগদান করার পর তিন বছর কোথাও পরীক্ষা দেওয়া যায় না। শুধুমাত্র বিসিএস পরীক্ষার জন্য এত বড় একটা রিস্ক নেই। মাঝে মাঝে খুব টেনশন হতো বড় একটা সুযোগ হাতছাড়া করলাম। আল্লাহর রহমতে ফাইনালি তো হয়েই গেল।
আরেকটা মজার কাহিনী হলো- বিসিএস এর ফর্ম পূরণের সময় রিওন ভাই জিজ্ঞাসা করেছিল, প্রথমে কী চয়েজ দিবি? এডমিন নাকি পুলিশ? পরে আমি ভাইয়ের থেকে জানতে চাইলাম, এডমিন হলে আর পুলিশ হলে কী আসবে প্রথমে? তিনি বললো, এডমিন হলে ম্যাজিস্ট্রেট আর পুলিশ হলে এএসপি। ম্যাজিস্ট্রেট এর কথা শুনে আগ্রহ অনেক বেড়ে যায়। আমি যখন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছি তখন পরীক্ষার হলে ম্যাজিস্ট্রেট আসতো। আর স্যাররা আগে থেকেই সংকেত দিত। সে সময় ভয়ও কাজ করত। তাই ভাইকে বলি এডমিন দিতে আর পরেরগুলো তার মন মতো দিয়ে দিতে। আমি নিজেও জানি না কী কী চয়েজ দিয়েছিল। ভাইবার আগে দেখলাম এডমিন, পুলিশ, কাস্টম, অডিট এভাবে ছিল। বিসিএস ভাইভা ছিল আমার জীবনের প্রথম এবং একমাত্র ভাইভা।
আহসান হাবিব নিষাদ ২০১১ সালে চরনোয়াবাদ মুসলিম হাই স্কুল থেকে জিপিএ-৫ নিয়ে এসএসসি পাস করেন। সে সময়ে একমাত্র তিনিই তার স্কুলে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। ২০১৩ সালে আলতাজের রহমান কলেজ থেকে জিপিএ-৫ নিয়ে এইচএসসি সম্পূর্ণ করেন।
২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর থেকে যুক্ত হন সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনে। এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন ধ্রুবতারার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। মিউজিকের প্রতিও ছিল তার প্রবল আগ্রহ। তখন প্রতিষ্ঠা করেন MBMC (MBSTU and Music Community)। তিনি এর কো-ফাউন্ডার ছিলেন এবং পরে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। গিটারিস্ট হিসেবে অন্বেষণ এবং ফানুস নামে দু'টি ব্যান্ডেও যুক্ত ছিলেন। ধ্রুবতারা ক্লাবের সামনে ধ্রুব গিটার স্কুল নামে একটা গিটার শিখার স্কুল চালু করেন। সেখানে বিনা পারিশ্রমিকে সবাইকে গিটার শেখাতেন।
মন্তব্য করুন