ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৪১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সংকট নিরসন ও ফ্যাসিবাদমুক্ত ক্যাম্পাস নির্মাণে ঢাবি শিবিরের স্মারকলিপি

সংকট নিরসন ও ফ্যাসিবাদমুক্ত ক্যাম্পাস নির্মাণে উপাচার্যকে ঢাবি শিবিরের স্মারকলিপি প্রদান। ছবি : কালবেলা
সংকট নিরসন ও ফ্যাসিবাদমুক্ত ক্যাম্পাস নির্মাণে উপাচার্যকে ঢাবি শিবিরের স্মারকলিপি প্রদান। ছবি : কালবেলা

চলমান সংকট-সীমাবদ্ধতা নিরসন এবং জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটের আলোকে ফ্যাসিবাদমুক্ত ক্যাম্পাস বিনির্মাণের লক্ষ্যে কিছু প্রস্তাবনা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানকে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনস্থ উপাচার্য লাউঞ্জে সংগঠনটির সভাপতি সাদিক কায়েম ও সাধারণ সম্পাদক এসএম ফরহাদের নেতৃত্বে এই স্মারকলিপি উপাচার্যের হাতে তুলে দেন নেতাকর্মীরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।

স্মারকলিপিতে ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন, আবাসন সংকট নিরসন, নিরাপত্তা, গবেষণার মানোন্নয়ন, টিএসসি, লাইব্রেরি, শিক্ষক নিয়োগ, ধর্মীয় উপাসনালয়, শরীরচর্চা কেন্দ্র, মেডিক্যাল সেন্টার, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম ও ডাকসু সংক্রান্ত মোট ১২টি বিষয়ের ওপর বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।

এ প্রসঙ্গে ঢাবি শিবির সভাপতি সাদিক কায়েম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান সংকট সমাধান এবং জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটের আলোকে ফ্যাসিবাদমুক্ত ক্যাম্পাস বিনির্মাণের প্রস্তাবনা নিয়ে আমরা উপাচার্য মহোদয়ের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেছি। আশা করি, ক্যাম্পাসের সংকট ও শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা বিবেচনা করে প্রদত্ত প্রস্তাবনার আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুততম সময়ে টেকসই সমাধানের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এরই প্রেক্ষিতে বৈষম্যহীন, নিরাপদ ও ফ্যাসিবাদমুক্ত ক্যাম্পাস গঠনের মাধ্যমে জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটের প্রতিফলন ঘটবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। একটি আদর্শ, নিরাপদ ও বৈষম্যবিহীন ক্যাম্পাস বিনির্মাণে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সর্বাত্মক সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, স্বৈরাচারী আওয়ামী শাসনামলে বাংলাদেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তৈরি করা হয় ফ্যাসিবাদী মনস্তত্ত্ব উৎপাদন ও অপশাসন কায়েমের ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত করে চলেছে শিক্ষার্থী নিপীড়ন। গেস্টরুম-গণরুমের করাল থাবা অসংখ্য শিক্ষার্থীর স্বপ্নকে গলাটিপে হত্যা করেছে। ফ্যাসিবাদের ঠিকাদাররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ে কৃত্রিম সংকট জিইয়ে রেখে ক্যাম্পাসে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল।

এতে আরও বলা হয়, নানা কৌশলে বরাদ্দকৃত অর্থের অপব্যয় ও লুটপাট চালিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে তথাকথিত উন্নয়নের ভাগাড়ে পরিণত করেছিল। শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস পরিণত হয়েছিল ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে। দলীয় রাজনীতি ও পদলেহন ছাড়া ক্যাম্পাসের সমস্যা নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ অতীতে দেখা যায়নি। তাই ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে একটি ‘বৈষম্যহীন ও নিরাপদ ক্যাম্পাস’ বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রয়োজন যথাযথ পরিকল্পনা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। মৌলিক সংকট চিহ্নিত করে দ্রুততম সময়ে পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করার মধ্য দিয়ে এই ক্যাম্পাস সত্যিকার অর্থেই শিক্ষার্থীদের প্রাণের ঠিকানা হয়ে উঠবে এটাই সকলের প্রত্যাশা।

স্মারকলিপিতে ছাত্রশিবির বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সংকট-সীমাবদ্ধতা এবং তা নিরসনের নিমিত্তে প্রশাসনের নিকট কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরে। সেগুলো হলো :

ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন সংক্রান্ত :

১. চব্বিশের জুলাই বিপ্লবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট যে সব ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী ফ্যাসিবাদের ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করেছিল, প্রত্যক্ষভাবে গণহত্যাকে সমর্থন ও পরোক্ষভাবে গণহত্যার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছিল তাদের চিহ্নিত করে অতিদ্রুত তাদের বিরুদ্ধে একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ২. বিগত ফ্যাসিবাদের শাসনামলে হলগুলোতে ছাত্র নির্যাতনের সাথে সম্পৃক্ত হল প্রভোস্ট, হাউস টিউটর এবং প্রক্টোরিয়াল বডির সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনের আওতায় যথাযথ বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৩. পতিত ও পলাতক ফ্যাসিবাদের দোসর ও আইকনদের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেসব স্থাপনা, সড়ক, সেন্টার, বৃত্তি-সম্মাননা, চেয়ার ও ফলকের নামকরণ করা হয়েছে, তা অবিলম্বে পরিবর্তন করে জুলাই বিপ্লবের শহীদদের নামে নামকরণ করতে হবে। শহীদ আবু সাঈদ, শহীদ মুগ্ধ, শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্ত, শহীদ ওয়াসিম, শহীদ আলী রায়হান, শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া, শহীদ নাইমা, শহীদ সুমাইয়াসহ সব শহীদ আমাদের জাতীয় বীর ও প্রেরণার বাতিঘর। জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটকে ভাস্বর রাখতে এবং ফ্যাসিবাদ ও সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস গঠনে শহীদদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাদের নামে স্থাপনা, সড়ক, ফলক, সেন্টার, বৃত্তি-সম্মাননা ইত্যাদি স্থাপন করতে হবে। ৪. চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে স্মরণীয় করে রাখতে একটি বিশেষায়িত সেন্টার ও সংগ্রহশালা গড়ে তুলতে হবে। যেখানে অভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট ইতিহাস, গুরুত্বপূর্ণ ছবি, সাহিত্য, ম্যাগাজিন, প্রকাশনা, পত্রিকা ও চিত্রকর্ম ইত্যাদি সংরক্ষিত থাকবে। ৫. জুলাই গণহত্যা বিষয়ে আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আয়োজন করতে হবে এবং পর্যাপ্ত গবেষণার উদ্যোগ গ্রহণ করার মাধ্যমে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের নির্মম ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরার ব্যবস্থা করতে হবে। ৬. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ১৭ জুলাই সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ মুক্তকরণ এবং যৌথবাহিনীর নৃশংস হামলার ভয়াবহতা স্মরণ করে ‘১৭ই জুলাই’-কে ‘ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। ৭. সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের হাতে শহীদ আবু বকর হত্যার সুষ্ঠু (পুনঃ)বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার, সার্টিফিকেট বাতিল কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ৮. গত ১৬ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামবিদ্বেষসহ নানাবিধ নিপীড়ন ও বৈষম্যের ঘটনায় ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করতে হবে। এই আমলে আওয়ামী লীগ ও তার ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ কর্তৃক নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার সব শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যৌক্তিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ৯. ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য সৃষ্টি, বিগত ১৬ বছরের নিপীড়ন, সন্ত্রাস ও জুলাই গণহত্যার দায়ে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে। ১০. বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অভ্যন্তরে প্রকাশিত সকল দুর্নীতির তথ্য শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নিতে হবে।

আবাসন সংক্রান্ত :

১. চলমান আবাসন সংকট নিরসন করে শতভাগ আবাসিক ক্যাম্পাস বিনির্মাণের জন্য ‘এক শিক্ষার্থী, এক সিট’ নীতি গ্রহণ করে, প্রয়োজনে দ্রুত হল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আর্থিক সংকট থাকা সত্ত্বেও যেসকল শিক্ষার্থীকে হলে সিট বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হবে না তাদের জন্য সিট ভাড়া বাবদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে উপযুক্ত পরিমাণ মাসিক বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ২. ‘হল চালাবে প্রশাসন’ নীতিতে হল পরিচালনা, সিট বন্টনসহ সকল কর্মকান্ড পরিচালনা করবে হল প্রশাসন। প্রশাসনিক কর্মকান্ড পরিচালনায় যাতে কোন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। ৩. নারী শিক্ষার্থীদের বিশেষ নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনা করে প্রত্যেককেই প্রথম বর্ষ থেকে আবাসিক সিট বরাদ্দ দিতে হবে। সিট সংকট সমাধানের সাময়িক পদক্ষেপ হিসেবে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসের নিকটবর্তী এলাকায় ছাত্রী হোস্টেল চালুর কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং টেকসই সমাধান হিসেবে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে দু’টি নতুন হল নির্মাণ করতে হবে। ৪. ক্যাম্পাসে ঝুঁকিপূর্ণ সকল ভবন সংস্কার ও পুনঃনির্মাণের উদ্যোগ নিতে হবে। ৫. আবাসিক হলগুলোর ক্যান্টিন ও দোকানগুলোতে খাবারের যথাযথ মান নিশ্চিত করতে হবে। খাবারের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রয়েজনীয় ভর্তুকির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া কলা ভবন ক্যাফেটেরিয়া, সেন্ট্রাল লাইব্রেরি, হাকিম চত্বর, টিএসসি, ডাকসু, কলা ভবনের শ্যাডো সংলগ্ন দোকানগুলোর খাবারের মান বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ৬. পরিচয় শনাক্তকরণ সাপেক্ষে ছাত্রীদের এক হল থেকে অন্য হলে প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে। অনাবাসিক ছাত্রীদেরকে পরিচয় শনাক্তকরণ সাপেক্ষে হলে প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে। ৭. আবাসিক হলগুলোতে পড়ালেখার সুস্থ পরিবেশ সংরক্ষণের স্বার্থে রিডিং রুম ও লাইব্রেরির পরিসর বৃদ্ধি করতে হবে। প্রত্যেকটি আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যাধুনিক কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সাথে ডায়ালগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংস্কার উদ্যোগ নিতে হবে। ৮. আবাসিক হলগুলোতে প্রাথমিক চিকিৎসা ও মেডিসিন কর্নার স্থাপন করতে হবে। প্রাথমিকভাবে কাছাকাছি অবস্থিত হলগুলোর জন্য একটি করে ফার্মেসি স্থাপন কিংবা প্রয়োজনীয় ওষুধের হোম ডেলিভারি সার্ভিস চালু করা যেতে পারে। ৯. কার্জন হল এবং কাজী মোতাহার হোসেন ভবন এরিয়ায় ক্যান্টিন স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে। ১০. হলগুলোতে সার্বিক কার্যক্রমে হাউজ টিউটরদের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। ১১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেদখল হয়ে যাওয়া জমি পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিতে হবে। পূর্বাচলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ জমির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

নিরাপত্তা সংক্রান্ত :

১. বহিরাগত প্রবেশ ও অবাধ যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে প্রক্টরিয়াল বডির তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ মুখগুলোয় স্থাপিত নিরাপত্তা চৌকিগুলোকে কার্যকর করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও সার্বক্ষণিক তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে। ২. পড়ালেখার পরিবেশ সংরক্ষণে একাডেমিক এরিয়ায় দীর্ঘসময় উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করতে হবে। ৩. বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনৈতিক দলগুলোর সভা-সমাবেশের স্থান, যাত্রা বিরতি ও বাসস্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেয়া যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ভারী যানবাহন চলাচল ও উচ্চস্বরে হর্ণ বাজানো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ৪. ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ( যেমন মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ, পলাশী, টিএসসি, কার্জন হল, মল চত্বর ইত্যাদি) প্রক্টরিয়াল টিমের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। ৫. ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ফুটপাতে থাকা সকল মাদকাসক্ত ও ভবঘুরে চক্র উৎখাত করতে হবে। ৬. ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে হবে।

গবেষণার মানোন্নয়ন সংক্রান্ত :

১. গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের জন্য সরকারের কাছে জোরালো আবেদন ও প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া গবেষণা কাজে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থ সংস্থানকারী সংস্থা থেকেও অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ ‘এন্ডাউমেন্ট ফান্ড’ গঠন করেও অ্যালামনাই সহ অন্যান্য উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করা যেতে পারে। সংগৃহীত অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ২. বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ব্যুরো ও রিসার্চ ইন্সটিটিউটগুলোর আমূল সংস্কার ও সক্রিয় করার উদ্যোগ নিতে হবে। স্বনামধন্য গবেষক ও আগ্রহী শিক্ষার্থীদের এসব প্রতিষ্ঠানে যুক্ত করতে হবে। ৩. প্রত্যেক বিভাগে মৌলিক গবেষণার উপর কোর্স অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ৪. শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহিত করতে গবেষণার জন্য আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে। শিক্ষকদের অধীনে গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করার বৈতনিক সুযোগ তৈরি করতে হবে। ৫. প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে 'গবেষণা সপ্তাহ' পালন করতে হবে। যেখানে দেশ-বিদেশের প্রতিথযশা গবেষকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বিভিন্ন সেশন আয়োজন, নবীন গবেষকদের গবেষণা প্রদর্শন, মৌলিক গবেষণা কোর্স, এবস্ট্রাক্ট প্রতিযোগিতা, বাছাইকৃত নবীন গবেষকদের সঙ্গে অভিজ্ঞদের নেটওয়ার্কিং ইত্যাদির আয়োজন করতে হবে।

টিএসসি সংক্রান্ত :

১. টিএসসিতে বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ২. টিএসসিতে বিদ্যমান নামাজের স্থান সংস্কার ও বর্ধিত করতে হবে। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নামাজের স্থান নির্ধারণ করতে হবে। ৩. টিএসসির ওয়াশরুম সংস্কার, ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের মান বৃদ্ধি, গেমস রুমে পর্যাপ্ত ক্রীড়া সামগ্রী সরবরাহ এবং টিএসসির চায়ের দোকান সংলগ্ন ঝুঁকিপূর্ণ দেওয়ালগুলো পুনর্নির্মাণ করতে হবে।

লাইব্রেরি সংক্রান্ত :

১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও সায়েন্স লাইব্রেরির পরিধি বৃদ্ধি ও নতুন ভবন নির্মাণ করতে হবে। ২. লাইব্রেরিতে নিয়মিত বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ সাময়িকী, পত্রিকা, জার্নাল সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হবে। ৩. লাইব্রেরিতে ফ্রি ওয়াইফাই এর এক্সেস রাখতে হবে। ৪. পুরাতন পাণ্ডুলিপি, বই, পত্রিকা ও গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টগুলোর সফট কপি তৈরি ও শিক্ষার্থী-গবেষকদের জন্য অনলাইন এক্সেস রাখতে হবে। ৫. লাইব্রেরির বইগুলো নিয়মিত চেক ও পুরাতন বইগুলোর নতুন সংস্করণ সংগ্রহে রাখতে হবে। ৬. ১৯৭২-১৯৭৫ পর্যন্ত সকল পত্রিকা, ম্যাগাজিন ও প্রকাশনার অক্ষত কপির ব্যবস্থা করে তা লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত রাখতে হবে এবং সকলের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।

শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত :

১. সর্বপ্রকার দলীয় সুপারিশ বা রাজনৈতিক পরিচয়ে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ করে যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। ২. শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে।

ধর্মীয় উপাসনালয় সংক্রান্ত :

১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জায়গা বৃদ্ধি, আধুনিকায়ন ও ইসলামী স্থাপত্যরীতিতে নান্দনিকতা বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন হলে শিক্ষার্থী সংখ্যা বিবেচনায় মসজিদের জায়গা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়ন করতে হবে। ২. ছাত্রী হলে মুসলিম–অমুসলিম সকল শিক্ষার্থীর জন্য নিজ নিজ ধর্মীয় আচার পালনের জন্য উপাসনাকক্ষ উন্নত ও আধুনিকায়ন করতে হবে। ৩. জগন্নাথ হলসহ অন্যান্য হোস্টেলে সংখ্যালঘু সকল সম্প্রদায়ের জন্য উপাসনালয় এবং নিজ নিজ ধর্ম পালনের উপযুক্ত পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

শরীরচর্চা কেন্দ্র সংক্রান্ত :

১. কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, সুইমিং পুল, জিমনেশিয়ামের নিয়মিত পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে। ২. মাঠে বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ৩. শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে অদক্ষ ও দুর্নীতিবাজদের সরিয়ে সৎ, দক্ষ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃত প্রশিক্ষকদের নিয়োগ দিতে হবে। প্রশিক্ষকদের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। ৪. হল ও ডিপার্টমেন্ট ভিত্তিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা গুলো নিয়মিত আয়োজন করতে হবে। প্রতিযেগিতা আয়োজনের পূর্ণাঙ্গ সূচী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডারে সংযুক্ত করে বছরের শুরুতেই প্রকাশ করতে হবে। ৫. বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করে স্পোর্টসের সামগ্রিক কাঠামো সংস্কার করে শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। ৬. সুইমিংপুল বহিরাগতদের জন্য বরাদ্দ না রেখে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য বেশি সময় বরাদ্দ রাখতে হবে।

মেডিক্যাল সেন্টার সংক্রান্ত :

১. সার্বক্ষণিক ও দ্রুত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। ২. অদক্ষ ডাক্তারদের অপসারণ করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। ৩. মেডিক্যাল সেন্টারের সামগ্রিক কাঠামোর আধুনিকায়ন, জনবল বৃদ্ধি এবং মেডিকেল সেন্টারকে একটি পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সহায়তা কেন্দ্রে পরিণত করতে হবে। ৪. বিনামূল্যে প্রদানের জন্য ঔষধের সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে। ৫. অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি চিকিৎসা সেবা আরো তৎপর ও দ্রুততর করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম সংক্রান্ত :

১. বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রমে আধুনিকায়ন নিশ্চিত করতে হবে। ২. বিভিন্ন ধরণের আবেদন, টাকা জমা ইত্যাদি সকল কার্যক্রম অনলাইনে নিয়ে এসে প্রশাসনিক জটিলতা, সময়ক্ষেপণ এবং শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ দূর করতে হবে। ৩. রেজিস্ট্রার বিল্ডিং-এর প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতা ও জটিলতা দূর করে এর সকল কার্যক্রম শিক্ষার্থীবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ৪. ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের আর্থিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে ভর্তি আবেদন ফি কমাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আর্থিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে প্রতিটি বিভাগে বর্ষভিত্তিক ভর্তি ফি কমাতে হবে এবং বিভাগের উন্নয়ন ফি-র যৌক্তিক সংস্কার অথবা বাতিল করতে হবে। হেলথ ইন্স্যুরেন্স কাঠামোকে কার্যকর করে তুলতে হবে।

ডাকসু সংক্রান্ত :

১. অবিলম্বে ডাকসু সক্রিয় করার মধ্য দিয়ে সুস্থ ধারার ছাত্র রাজনীতির প্রবর্তন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দাবি-দাওয়া পেশের একটি সুন্দর সংযোগ স্থাপন করতে হবে। ২. ডাকসু জাদুঘরের সংস্কার এবং একে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য সমৃদ্ধ সেন্টারে পরিণত করতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাকার যেসব এলাকায় আজ মার্কেট বন্ধ

আজকের নামাজের সময়সূচি

প্রথম দিনে উইন্ডিজ তুলল ২৫০ রান

গাঁজা-জাল নোটসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের শীতবস্ত্র বিতরণ

উইন্ডিজের প্রতিরোধ ভেঙে বাংলাদেশের স্বস্তি

টাইম ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস / ট্রাম্প ব্যবসায়ী, আমরাও একজন ব্যবসায়িক অংশীদার চাই

২০২৪ সালের হাইয়েস্ট কালেকশন দরদের : শাকিব 

নায়িকা পরীমনির প্রথম স্বামী নিহত

রাজনীতিতে আ.লীগের পুনর্বাসন ঠেকাতে হবে: নুর

১০

নির্বাচন যত দ্রুত হবে, সমস্যা তত কমে আসবে : মির্জা ফখরুল

১১

খাসজমির দখল নিয়ে সংঘর্ষে দুজন নিহত

১২

মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ক্রীড়াঙ্গন অন্যতম একটি মাধ্যম : আমিনুল হক 

১৩

তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল

১৪

আহত রানার পাশে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’

১৫

ফেসবুকে দাবি ‘মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ একই ব্যক্তি’, যা বলছে ফ্যাক্ট চেক

১৬

একদিকে প্রশান্তি, অশান্তিও বিরাজ করছে: শামা ওবায়েদ

১৭

চোর সন্দেহে খুঁটিতে বেঁধে যুবককে নির্যাতন

১৮

র‍্যানকন মটরসের সঙ্গে ক্র্যাক প্লাটুন চার্জিং সলুশনের চুক্তি

১৯

জনকল্যাণে কাজ করাই বিএনপির মূল লক্ষ্য : নয়ন

২০
X