সাংগঠনিক শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান হাবীবকে সাংগঠনিক পদ এবং ছাত্রনেতা হাসিবুল ইসলাম হাসিবকে প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক, সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক আহসান হাবীবকে সাংগঠনিক পদ থেকে এবং ছাত্রনেতা হাসিবুল ইসলাম হাসিবকে প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হল। ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির আজ এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাতে ছাত্রলীগের এক কর্মীর সঙ্গে ছাত্রদল নেতা আহসান হাবিব ও হাসিবুল ইসলামের ২ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের দুটি কল রেকর্ড ফাঁস হয়।
কল রেকর্ডে হাসিবুল ইসলাম হাসিব ছাত্রলীগের ওই নেতাকে বলেন, শুনেন এখন আপনাদের (ছাত্রলীগ) সব থেকে বড় শত্রু কে জানেন? জবাবে ছাত্রলীগ কর্মী বলেন, কে ভাই? হাসিব বলেন, কে বড় শত্রু বলেন তো? ছাত্রলীগ কর্মী বলেন, এ বিষয়ে আমার আইডিয়া নেই ভাই। হাসিব বলেন, সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থী। এরা হচ্ছে শিবির। সাধারণ শিক্ষার্থী মানেই শিবির। তারা কিন্তু আপনাকে ছাড় দেবে না। আমাদের মামলার লিস্ট দেখছেন? জবাবে ছাত্রলীগ নেতা বলেন, জি ভাই দেখলাম। ফোনের অপর পাশ থেকে হাসিব বলেন, আমাদের মামলা এখনো এন্ট্রি হয়নি, কাল হবে। আমরা তো একটা মামলা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসন আরেকটা মামলা করবে। লিস্ট তো দেখেছেনই। এ লিস্ট অনুযায়ী আরেকটা মামলা হবে। যেটা হলো প্রশাসন করবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের রাজনীতিতে গ্রুপিংয়ের কথা উল্লেখ করে হাসিব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নেতাকে বলেও লাভ হবে না। আমাদের একটা গ্রুপ আছে। রাজনীতিতে একটা গ্রুপিং আছে। ছাত্রলীগ নেতা বলেন, অবশ্যই জি ভাই। হাসিব বলেন, আপনি মনে হয় জানেন না। আপনি যদি আবিরকে বলেন, এখন আবির যার সঙ্গে রাজনীতি করে তাকে দিয়েও যদি বলানো হয় লাভ নাই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সর্বোচ্চ নেতা কে? আহ্বায়ক রাহি ভাই। উনিও যদি আমাকে মানা করে মামলাটা করো না তাও লাভ হবে না। ছাত্রলীগ নেতা বলেন, জি ভাই। হাসিব বলেন, আমরা এন্টি রাজনীতি করি। সভাপতি-সেক্রেটারির এন্টি রাজনীতি করি ক্যাম্পাসে। ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ভাই বুঝতে পারছি। হাসিব বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত আমরা নেই। আমরা যেটা করব সেটাই। তবে আমি একটু আপনার বিষয়ে কথাবার্তা বলি।
এ ছাড়া ছাত্রলীগ কর্মীর সঙ্গে ছাত্রদল নেতা মোহাম্মাদ আহসান হাবিবের ৫১ সেকেন্ডের কল রেকর্ডে আহসান হাবিবকে বলতে শোনা যায়, আসামি তো অনেকগুলো। তোমার জায়গায় আরেকটা নাম বসিয়ে দেব। নিজে বাঁচলে বাপের নাম। দলের দিক দেখে লাভ নাই। তুমি নিজে বাঁচো আগে। একটা মামলা খেয়ে গেলে কেউ দেখবে না। একটা পলিটিক্যাল মামলা ১০/১৫ বছর চলে। এ ছাড়া ফোনের অপর পাশে থাকা ছাত্রলীগ কর্মীকে রুনু-কিবরিয়ার কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা পাঠাতে বলেন ছাত্রদলের এই নেতা। তবে, কল রেকর্ডের বিষয়কে এডিট বলে দাবি করেছেন ছাত্রদল নেতা আহসান হাবিব। তিনি বিষয়টি অস্বীকার করলেও হাসিবুল ইসলাম হাসিব স্বীকার করেছেন।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ১০১ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলা করেন শাখা ছাত্রদলের এই যুগ্ম আহ্বায়ক। মামলায় অজ্ঞাত আরও ২০০ থেকে ২২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ার বিষয়ে ছাত্রলীগ কর্মীর সঙ্গে মামলার বাদী মোহাম্মদ আহ্সান হাবিব ও আরেক ছাত্রদল নেতা হাসিবুল ইসলাম হাসিবের কথোপকথনের দুইটি কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে।
মন্তব্য করুন