আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলা, হত্যা চেষ্টা ও হুমকির মুখে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি বাংলাদেশের (এআইইউবি) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া রবিউসসানী শিপু ও তার পরিবার।
আন্দোলন চলাকালে গুলি খেয়ে গুরুতর আহত হওয়া শিপু সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, ইউজিসি চেয়ারম্যান এবং সচিবসহ অনেকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের কারণেই এই পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে বলে দাবি তার।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে (ডুজা) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে নিজেই জানান শিপু। এ সময় তার মা ও বন্ধুবান্ধব উপস্থিত ছিলেন।
এক লিখিত বক্তব্যে রবিউসসানী শিপু বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে প্রথম থেকেই সক্রিয় ছিলাম। আমি বিগত ১৬ জুলাই থেকে নিজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে নিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের বৈষম্যমূলক নীতি ও ছাত্র নিপীড়নের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলি। তৎকালীন সরকার ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অপতৎপরতা ও চাপে আমি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে আমার নিজ এলাকা আশুলিয়ায় চলে যাই এবং সেখানে আন্দোলনের সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা রাখি।
তিনি বলেন, ‘৪ আগস্টে আনুমানিক বিকাল ৩টায় আমরা ডেইরি গেট থেকে বাইপাইলের দিকে যেতে থাকি। আমি মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ায় আন্দোলনে বেশিরভাগ সময় মিছিলের সামনেই থাকতে হয়। যার কারণে পুলিশ আমাকে টার্গেট করে। হঠাৎ করেই আনুমানিক বিকেল ৪টার দিকে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী বাইপাইলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিতেভাবে গুলি ছোড়ে। আন্দোলনের ফ্রন্ট লাইনে অবস্থান করার কারণে বাইপাইল জামে মসজিদের ছাদের উপর থেকে আমাকে গুলি করে, আমার পেটের এক পাশ দিয়ে গুলি ঢুকে আরেক পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়।
পরপর আমার শরীরে এবং পায়ে চারটি গুলি করে, সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। তখন আমার সহযোদ্ধারা সরকারি, বেসরকারি তিন/চারটি হসপিটাল ঘুরে আমাকে চিকিৎসাসেবা দিতে ব্যর্থ হয়। অতঃপর আমার ইউনির্ভাসিটির (এআইইউবি) শিক্ষক এবং সহযোদ্ধাদের হস্তক্ষেপে ঢাকা মেডিকেলে টানা ৬ ঘণ্টার অপারেশন করে আমার শরীর থেকে চারটি গুলি বের করা হয়। কিডনি, ইউরোলজি ড্যামেজসহ আমি বিকলাঙ্গ হয়ে যাই। সামান্য সুস্থ হওয়ার পর স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, ইউজিসির চেয়ারম্যান এবং সচিবসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করি।’
শিপু আরও বলেন, পূজার বন্ধে আমি আমার গ্রামের বাড়ি আশুলিয়াতে যাই এবং ১৪ অক্টোবর রাত ৯টা ৩০ মিনিটে ফারুকনগর ইসমাইল বেপারী হাইস্কুল মাঠে হাঁটতে গেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র ছুরি ও লাঠিসোঁটা নিয়ে আমার ওপর অতর্কিত হামলা করে। আমাকে উপর্যুপরি আঘাত করার পর আমি জ্ঞান হারাই এবং স্থানীয় লোকেরা আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। এমতাবস্থায় আমার মা, আমি, আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। অতি দ্রুত মানবতাবিরোধী অপরাধী, খুুনি এবং সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনাসহ আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি প্রার্থনা জানাচ্ছি।
মন্তব্য করুন