৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে একই বিসিএস’র প্রিলিমিনারিতে পাস করা প্রার্থীরা।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিরাজুল ইসলাম সোহাগ। তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবে শহীদ হওয়া সকল ভাইবোনদের আত্মার মাগফিরাত ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। গত ২৬ এপ্রিল ৪৬ তম বিসিএস এর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠিত সেই পরীক্ষায় ২ লাখ ৫৪ হাজার ৪২৫ জন পরিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ৯ মে প্রকাশিত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফলে উত্তীর্ণ হন ১০৬৩৮ জন প্রার্থী। গণমাধ্যমের মারফত জানতে পারি, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের কয়েকজন কর্মচারী বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এর মধ্যে এক কর্মচারি নাকি তার দেওয়া জবানবন্দিতে ৪৬তম বিসিএস প্রিলিতে ১৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৩ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ করানোর কথা বলেছেন।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেউ কেউ পুরো বিসিএস পরীক্ষা বাতিলের দাবি করছেন। অথচ আমরা যারা ৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারিতে অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছি, তারা অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে স্বপ্নের পেছনে লেগেছি। কেউ প্রেগন্যান্সির কঠিন সময়ে পরীক্ষার বইকে সঙ্গী করেছেন, কেউ চাকরির স্থায়িত্ব ত্যাগ করে, আবার কেউ সরকারি চাকরির নিশ্চয়তা পেছনে ফেলে বেছে নিয়েছেন নতুন চ্যালেঞ্জ। ডাক্তারদের কেউ এফসিপিএসে ভর্তির সুযোগ পেয়েও ত্যাগ করেছেন, যেন এই রিটেন পরীক্ষার জন্য আরও একটু সময় দিতে পারেন। এই যে আত্মত্যাগ প্রত্যাশা একে কীভাবে বাতিলের খাতায় ফেলা যায়? আমরা জানি পিএসসি নামক আমাদের এই সুশৃঙ্খল প্রতিষ্ঠানটি বরাবরই তার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার জন্য পরিচিত। কিন্তু যদি চাপের মুখে আজ তারা অবিচার করে, তবে দেশের এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি তার গৌরব হারাবে।
প্রশ্নফাঁসে জড়িতদের শাস্তি চেয়ে সিরাজুল ইসলাম সোহাগ বলেন, অসংখ্য মেধাবী তরুণ-তরুণী যাদের কারও কারও জীবন তাদের পড়ার টেবিলে বিয়ের চাপ, পরিবারের দায়িত্ব, কিংবা বাড়তি খরচের বোঝা লুকিয়ে থাকা কষ্টের গল্পে ভরপুর। ৪৬তম বিসিএস বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত তাদের কাছে অভিশাপ হয়ে আসবে। ১৬৪ ধারায় দেওয়া ওই কর্মচারীর জবানবন্দি যদি সত্যি হয় তবে জড়িদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষা বাতিল না করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ক্ষেত্রে যেন ন্যায্য বিচারটি হয়, যাতে পরিশ্রমের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকে। বাতিল নয়, বরং দ্রুত লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হোক। যাতে প্রতিটি পরীক্ষার্থী তাদের স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতে পারে। এরপরেও যদি নতুন কমিশন মনে করে, স্বচ্ছতার স্বার্থে আবার তদন্ত হওয়া দরকার তাহলে আমরা সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। প্রশ্নফাঁসের তদন্ত করে করে যদি প্রমাণ পায় তবে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে যেন সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করে। সেই সাথে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের কাছে অতিদ্রুত ৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানাচ্ছি।
মন্তব্য করুন