কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘বাংলাদেশে অর্থনীতির চলমান ধীরগতি মন্দা ডেকে আনতে পারে’

‘বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা এবং এগিয়ে যাওয়ার উপায়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় কথা বলেন বিআইডিএস’র গবেষণা পরিচালক ড. মনজুর হোসেন। ছবি : কালবেলা
‘বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা এবং এগিয়ে যাওয়ার উপায়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় কথা বলেন বিআইডিএস’র গবেষণা পরিচালক ড. মনজুর হোসেন। ছবি : কালবেলা

বর্তমানে রাজস্ব নীতির (ফিস্কাল পলিসি) মাধ্যমে যেই পদক্ষেপই গ্রহণ করা হোক না কেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য ফলাফল পাওয়া যাবে না। কারণ রাতারাতি এই পরিবর্তন সম্ভব নয়।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর লালমাটিয়ায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল রিসার্চ (বিআইএসআর) ট্রাস্ট অফিসে আয়োজিত ‘বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা এবং এগিয়ে যাওয়ার উপায়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এমন মন্তব্য করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. মনজুর হোসেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে অর্থনীতি যে ধীর গতিতে চলছে তাতে মন্দা হতে পারে। সরকারি খরচ কমলেও, মূলত সরকারি, বেসরকারি বিনিয়োগ অনেকাংশেই কমে গেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আলাদা কোনো গবেষণা সেল (শাখা) নেই। তারাই পলিসি তৈরি করে, আবার তারাই বাস্তবায়ন করে। সে কারণেই সুফল নেই। আর বাংলাদেশের ট্যাক্স-জিডিপির অনুপাত দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম। তাই বর্তমানে আমাদের যে ট্যাক্স পলিসি (নীতি) আছে তা বেশি দিন টেকসই হবে না।

ড. মনজুর হোসেন বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নগদ অর্থের ব্যবস্থা করে দিয়ে ভঙ্গুর ব্যাংকগুলোকে লিকুইডিটি সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করছে। তারপরও ব্যাংকগুলোকে সুস্থ করা কষ্ট হয়ে যাবে। বিগত সরকারের আমলে অর্থনৈতিক নীতিই ছিল না। সে কারণেই আশেপাশের দেশগুলো যেখানে মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে এনেছে আমরা সেখানে পারছি না। একমাত্র মুদ্রানীতি দিয়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না। মুদ্রানীতিতে অতি উচ্চ হার বসালেও শিল্প, বাণিজ্য সব ক্ষেত্র ধসে পড়বে বলে মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, রিজার্ভ ২৫-৩০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে থাকলেই চলে। একসময় ৪৮ বিলিয়ন পর্যন্ত উঠেছিল কারণ করোনা পরবর্তী সময়ে তখন আমদানি করা যায়নি। তখন রপ্তানির অবস্থাও ভালো ছিল। এ ছাড়াও বর্তমানে তিনি গুণগত মানসম্পন্ন বিনিয়োগে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন।

বিআইএসআর ট্রাস্টের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মুনেম আহমেদ চৌধুরির এক প্রশ্নের জবাবে ড. মনজুর আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে স্বায়ত্তশাসন দিলেও এই ধরনের ক্ষমতার দায়িত্বপালন জরুরি। সেক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসনের আওতায় নিরপেক্ষভাবে গভর্নরকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তদবির করা চলবে না।

বিআইডিএস’র গবেষণা পরিচালক আরও বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোও দায়িত্বশীল নয়। প্রয়োজনে যথাযথ তথ্য পাওয়া যায় না।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইএসআর ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. খুরশিদ আলম। তিনি বলেন, কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য, বা কো]নো বিষয়ের সঠিক অবস্থা সম্পর্কে জানার জন্য আমাদের প্রয়োজন তথ্য (ডাটা)। বিগত সরকারের অনেক তথ্য উপাত্তকে অনেকেই এখন ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। তাহলে এখনো কেন মানুষ সরকারি তথ্যের ওপর ভরসা করবে? এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জাবাবদিহিতা অত্যন্ত জরুরি।

ড. খুরশিদ আরও বলেন, যমুনা সেতু, পদ্মা সেতু ও কর্ণফুলী টানেল, এই সবগুলো মেগা প্রজেক্টের ক্ষেত্রেই সাধারণ একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়। আর তা হলো দুর্বল পরিকল্পনা। অথচ কর্ণফুলী টানেলে ব্যয় না করে কর্ণফুলী সেতুতে ব্যয় করলে উপকার হত কি না, প্রশ্ন করেন সমাজবিজ্ঞানী ড. খুরশিদ আলম।

বিআইএসআর ট্রাস্টের সিনিয়র রিসার্চার (জেষ্ঠ্য গবেষক) ড. মো. মুরাদ আহমেদ বলেন, পুঁজি বাজারকে সক্ষম করে গড়ে তুলতে পারলে বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে। মানুষ তখন বিনিয়োগ করবে এতে করে লাভ্যাংশ ও বিনিয়োগে বৈচিত্র্য আসবে। দেশের অর্থনীতিতে এমন কিছু কার্যসম্পাদনের সংযুক্তি (ইনস্ট্রুমেন্ট ইনপুট) ঘটাতে পারলে মুদ্রাস্ফীতি কমে আসবে ও অর্থনীতি সুদৃঢ় অবস্থানের দিকে ধাবিত হবে।

দি হাঙ্গার প্রজেক্টের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো একেএম রিয়াজ উদ্দিন বলেন, মাদকগ্রহণকারীর মাদক বন্ধ করে দিলে তার মধ্যে যেমন কিছু অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দেয়, ঠিক তেমনি অর্থনৈতির অনিয়মগুলো একসঙ্গে পরিবর্তন করতে গেলে অস্বাভাবিকতা দেখা দিবে। তাই ধৈর্য ধরে টেকসই সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

আলোচনার ভিত্তিতে মতামত জানানোর সময় বিশিষ্ট শিল্পপতি স্বপন কুমার দাস বলেন, আগের চুক্তি অনুযায়ী একটি ঋণ চুক্তিতে কোটি টাকার ওপর ক্ষতি। এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা বিরাট বিপদের সম্মুখীন হচ্ছেন। আমরা দেখছি কাজে নয়, কথায় চলছে সব। দ্রুত এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণ ঘটাতে না পারলে, বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারাবে। অর্থনীতি ভেঙে পড়বে।

অল বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট গ্রুপের প্রধান ড. মোহাম্মদ ইয়াকুব, আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গবেষণার গুরুত্বের বিষয়ে মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ও উন্নয়ন সংস্থার কর্মী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও বিআইএসআর ট্রাস্টের গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন।

বিআইএসআর ট্রাস্ট একটি বেসরকারি অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সংস্থা এবং দেশের একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক। সামাজিক ন্যায়বিচার, উন্নয়ন, এবং মানবাধিকারসহ বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ের ওপর গবেষণা, প্রচার ও সহায়তায় আমাদের ফোকাস। বিআইএসআর ট্রাস্ট সামাজিক পরিবর্তন এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনের মান উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করে। আমাদের কাজ গবেষণা পরিচালনা, শিক্ষামূলক সহায়তা প্রদান, এবং নীতি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অ্যাডভোকেসি করা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নাগরিক কমিটিতে সারজিস-তুহিনসহ যুক্ত হলো ৪১ জন

বিয়েতে গান বাজিয়ে শাস্তির মুখে বর

নরসিংদীতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল দুই বন্ধুর

প্রেমের বিয়ের বিপক্ষে পাকিস্তানের বেশিরভাগ মানুষ

সিলেটে হত্যা মামলায় বাবাসহ দুই ছেলের মৃত্যুদণ্ড

বিএনপি ক্ষমতায় এলে ক্রীড়াঙ্গনে রাজনীতিকরণ হবে না : আমিনুল হক 

আইইউবিএটির ইইই অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের কমিটি ঘোষণা

জেতার সুযোগ সিলেটের, শঙ্কায় চট্টগ্রাম

চিন্ময়কে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রংপুরে বিক্ষোভ

টাস্কফোর্সসহ ভোক্তা অধিকারের বাজার তদারকি

১০

ছেলেদের সমান সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন জ্যোতিরা : হাবিবুল বাশার

১১

হজ এজেন্সিগুলোকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা 

১২

চিন্ময়ের মুক্তির দাবিতে লক্ষ্মীপুরে মিছিল

১৩

শাহবাগ থেকে ফিরেই ঋণের লোভ দেখানো সংগঠকের বাড়ি ঘেরাও

১৪

‘আব্দুর রাজ্জাক সাধারণ চালচলনের এক অসাধারণ মানুষ ছিলেন’

১৫

ডিজিটাল নিরাপত্তা এবং জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রচারণা 

১৬

চিন্ময়কে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে খুলনায় বিক্ষোভ

১৭

গর্ভধারণের নামে ভয়ঙ্কর প্রতারণার খেলা

১৮

সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সহিংসতা প্রতিরোধ নিশ্চিত করার আহ্বান

১৯

চিন্ময়কে গ্রেপ্তারের ঘটনায় পূজা পরিষদের উদ্বেগ 

২০
X