‘হাসিনা যেমন স্থানে স্থানে ম্যুরাল নির্মাণ করে ব্যক্তিপূজার রীতি চালু করেছিল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এখন সে পথে হাঁটছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ফের ব্যক্তিপূজার রীতি শুরু করে তাদের রাজনৈতিক ফায়দা আদায়ের চেষ্টা করছে। আমরা ম্যুরাল বা নাম ফলক স্থাপনের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কোনো ব্যক্তিপূজার সংস্কৃতি মেনে নিব না। স্মৃতি রক্ষার্থে নামফলক থাকবে কিন্তু কোনো স্ক্যাচ বা ছবি না।’
মঙ্গলবার (০৮ অক্টোবর) দুপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে খালেদা জিয়ার ম্যুরাল স্থাপনের প্রতিবাদ জানিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আজকের (মঙ্গলবার) মধ্যে এই ম্যুরাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে আগামীকাল বুধবার এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গণস্বাক্ষর নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর অভিযোগ জমা দেওয়ার ঘোষণাও দেন তারা। এছাড়া দাবি আদায়ে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণাও দেন শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ১৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী একেএম রাকিব বলেন, সম্প্রতি আমরা লক্ষ করেছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রায় ১১ ফুট দৈর্ঘ্যের ম্যুরাল স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা বলতে চাই, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি খালেদার জিয়ার অবদান আমরাও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। আমরা চাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশ্যই তার কোনো স্মৃতি থাকুক। ফ্যাসিবাদ আমলে তার নামের যে নামফলক ভেঙে ফেলা হয়েছে সেটা সুন্দরভাবে গড়ে তোলাই হতে পারে তার স্মৃতিরক্ষার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হাঁটছেন স্বৈরাচার হাসিনার দেখানো পথে। হাসিনা যেমন স্থানে স্থানে ম্যুরাল নির্মাণ করে ব্যক্তিপূজার রীতি চালু করেছিল, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এখন সেই পথে হাঁটছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুনরায় ব্যক্তিপূজার রীতি শুরু করে তাদের রাজনৈতিক ফায়দা আদায়ের চেষ্টা করছে বলে আমরা মনে করছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন নতুন ব্যক্তিপূজা শুরু হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর দেশের সব জায়গায় পরিবর্তনের যে হাওয়া লেগেছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আমরা আশা করেছিলাম ফ্যাসিবাদের পতনের নতুন যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হবেন তিনি ২৪-এর আন্দোলনের স্পিরিটকে (প্রেরণা) ধারণ করবেন। তবে ভিসি স্যারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে আমরা আশাহত হয়েছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি, তিনি পূর্বের ফ্যাসিবাদের আমলের ভিসিদের পথেই হাঁটছেন।
এদিন শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হকের সাথে আলোচনা করেন। প্রক্টর বলেন, প্রশাসনিক ভবনের সামনে ছোট নামফলক হবে, মূর্তির মতো কিছু থাকবে না। যার স্মৃতিফলক স্থাপন করা হচ্ছে তিনি যদি জানেন, তার একটি স্মৃতিফলক স্থাপন নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে, তাহলে অবশ্যই তিনি নিজে কষ্ট পাবেন। ম্যুরাল স্থাপনের বিষয়ে জবির শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট বিষয় সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে ম্যুরাল সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। এটা কোন ম্যুরাল নই। শুধু ছবি সংবলিত নামফলক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, এটা কোনো মুর্যাল বা ভাস্কর্য নয়। এটা ছবি সংবলিত ঘোষণা ফলক।
মন্তব্য করুন