বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ স্মরণে ‘আগ্রাসনবিরোধী আটস্তম্ভ’ পুনর্নির্মাণে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছে ‘আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদ’।
এছাড়া, আবরার হত্যার দিনকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘আগ্রাসনবিরোধী দিবস’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির আহ্বায়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
সোমবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর পলাশীর মোড়ে আবরার ফাহাদের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় এ দাবি জানান তিনি।
সভায় আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৫৪ বছরের সংগ্রামে শহীদ আবরার ফাহাদ টার্নিং পয়েন্ট। আবরার ফাহাদ এই শতাব্দীর শহীদ তিতুমীর। আমি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সাতটি দাবি জানিয়েছিলাম, যার অন্যতম দাবি ছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউর নাম পরিবর্তন করে শহীদ আবরার ফাহাদ এভিনিউ করা।
শহীদ আবরার ফাহাদ আমাদের সার্বভৌমত্বের পক্ষে ভারতীয় আগ্রাসনে বিরুদ্ধে আগ্রাসনবিরোধী প্রতীক উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু হলেন ফ্যাসিবাদের প্রতীক ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্বৈরশাসক। আমাদের যে তরুণ সমাজ হাসিনার পতনে সংগ্রামের প্রথম ধাপে জয়লাভ করেছে। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে ভারতীয় অগ্রাসনের বিরুদ্ধে এখনো জয়লাভ করতে পারেনি। আমাদের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই আগ্রাসন রুখে দিতে হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, গত পনেরো বছরে যে সংবিধান আমাদের উপর চেপে বসেছিল, সে সংবিধান আবরার ফাহাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী, সে সংবিধান জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শত শত শহীদ হওয়ার জন্য দায়ী, সে সংবিধান হাজার হাজার মানুষের হাহাকারের জন্য দায়ী, সে সংবিধান এখনো বাংলাদেশ রাষ্ট্রে কীভাবে বিরাজমান? আমলারা জয় বাংলার স্টেটমেন্ট দিয়ে বেড়াচ্ছে। আমরা চাই এই সংবিধান অবিলম্বে বাতিল হোক। তিনি বর্তমান রাষ্ট্রপতি ও আবরার ফাহাদের রায় দেওয়া বিচারকদের সমালোচনা করে প্রশ্ন করেন তারা এখনো কীভাবে এই দায়িত্বগুলোতে রয়েছেন?
আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক আখতার হোসেন বলেন, আবরার ফাহাদ একক কোনো ব্যক্তি নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতীক। আবরার ফাহাদের খুনিদের গ্রেপ্তার করলেও বিচার প্রক্রিয়া এখনো সম্পন্ন হয়নি, অতিদ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে হবে। খুনিদের মধ্যে যারা বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদেরও গ্রেপ্তার হতে হবে।
বাংলাদেশে কোনো দেশের আগ্রাসন চলতে দেওয়া হবে না হুঁশিয়ারি প্রদান করে তিনি বলেন, ভারতীয় আগ্রাসনকে বাংলাদেশ মেনে নিবে না। ভারতের জনগণের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। ৭ অক্টোবরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আগ্রাসনবিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।
ছাত্রনেতা সালেহ উদ্দিন সিফাত বলেন, দিল্লির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আবরারের সংগ্রাম ভোলা যাবে না। দিল্লি অন্য দেশের সঙ্গে পানিবণ্টন চুক্তি বাস্তবায়ন করে, কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি শর্ত পূরণ করে না। জাতীয় স্বার্থের প্রশ্ন জনতার আদালতে মীমাংসা করতে হবে।
স্মরণসভা শেষে পলাশী মোড়ে শহীদ আবরার ফাহাদের স্মরণে ৮ ফলকবিশিষ্ট স্তম্ভের পুনর্নির্মাণে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মাহমুদুর রহমানসহ অন্যরা। এসময় আবরার ফাহাদের সহপাঠী, বাবা, ছোটভাইসহ বিশিষ্টজনরা বক্তব্য দেন।
জানা গেছে, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, গণপ্রতিরক্ষা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা, দেশীয় শিল্প-কৃষি ও নদী-বন্দর রক্ষা, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা এবং মানবিক মর্যাদা- এই আটটি বিষয়ের প্রতীক হিসেবে এই স্মৃতিস্তম্ভটি স্থাপন করা হয়।
মন্তব্য করুন