জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল কালো কালি দিয়ে মুছে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ভিসি ভবনের সামনে নির্মাণ করা হচ্ছে কলেজ থেকে জবিকে বিশ্ববদ্যালয়ে মর্যাদা দেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নামফলক ও ম্যুরাল। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠাতার নামফলক চাইলেও কোনো দলীয় ম্যুরাল চান না শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (০৭ অক্টোবর) বিকাল চারটার দিকে উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ দাবি জানান শিক্ষার্থীদের একাংশ।
শিক্ষার্থীদের দাবি, যদি ম্যুরালের বিপরীতে আরেকটি ম্যুরাল তৈরি করা হয়, তাহলে ক্যাম্পাসে আবার দলীয়করণ করা হবে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি চান না। তেমনি দলীয় কোনো প্রতীকও চান না।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী একেএম রাকিব বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার নামফলক স্থাপনে কারও কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু ক্যাম্পাসে আবার কারও ম্যুরাল স্থাপন করলে পুরাতন মডেলে ক্যাম্পাস দলীয়করণ হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ইভান তাহসীব বলেন, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এসেছি। আমরা চাই না ক্যাম্পাসে দলীয় কারও ম্যুরাল তৈরি হোক। শিক্ষার্থীরাও এটা চায়। একটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রতিষ্ঠাতার নামফলক বসাতে পারে। কিন্ত যখন ম্যুরাল স্থাপনের দিকে যাবে, তখন আবার ক্যাম্পাস দলীয়করণের দিকে যাবে।
শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট সমন্বয়ের জন্য একটা কমিটি করা হয়েছে। তারা যেহেতু ম্যুরাল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ফলে আমি ম্যুরালের তৈরির পক্ষে। তবে তোমাদের দাবির প্রশ্নে আমার উত্তর হলো, সংশ্লিষ্ট কমিটি এ কাজটি করছে। এখানে আমার কিছু করার নেই।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় :
এদিকে জবি ক্যাম্পাসে খালেদা জিয়ার ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
আমরা জকসু চাই গ্রুপে সামিউল ইসলাম সামীম লেখেন, ‘আমি তো ভাবছিলাম নামফলক, এখন দেখি ম্যুরাল হবে। আবারও ছবি রাজনীতি। এগুলোকেই বলে দলীয় লেজুড়বৃত্তি।’
আরেক শিক্ষার্থী সাজরিয়ান রহমান কাকন বলেন, ‘যখন নাকি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙা হলো তখন সবাই বাহবা দিল। কারণ ম্যুরাল নাকি হিন্দু সংস্কৃতি। আর এখন ম্যুরাল বানানো হবে, এখন আর হিন্দুয়ানা নাই। এখন নাকি প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে দেখা লাগবে। বাঙালি সুবিধামতো দৃষ্টিকোণ বদলায়। ভালোই। আবার সেই রাজনীতি শুরু।’
এ দিকে শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট বিষয় সমন্বয়ের কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রইস উদ্দিন বলেন, এটা কোনো ম্যুরাল নয়। এটা হচ্ছে ছবি সংবলিত নামফলক। ফ্যাসিবাদ দীর্ঘদিন ধরে একটি ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল। এখন আবার ইতিহাস সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
তবে একই কমিটির সদস্য ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন বলেন, নামফলক আর ম্যুরাল এক জিনিস নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার স্বীকৃতি হিসেবে নামফলক থাকা দরকার। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নতুন কোনো ম্যুরাল জবি ক্যাম্পাসে স্থাপন করবে না। খালেদা জিয়াকে চেনানোর জন্য নামই যথেষ্ট, নামফলকের পাশে ছবির কোনো প্রয়োজন নাই। আল্লাহ এই মজলুম নেত্রীর সম্মান বাড়িয়ে দিন।
মন্তব্য করুন