কুবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:১৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কুবিতে আইনেই সীমাবদ্ধ রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত

গ্রাফিক্স : কালবেলা
গ্রাফিক্স : কালবেলা

সব ধরনের রাজনীতি বন্ধের প্রজ্ঞাপন নিয়ে গত ২০০৬ সালের ২৮ মে দেশের ২৬তম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। আইনে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও বাস্তবে নেই কোনো পদক্ষেপ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ২০০৬-এর ৪৩-এর (ঘ) অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারবে না। সে অনুযায়ী গত ২০০৭ সালে কুবির প্রথম সিন্ডিকেট সভাতেই শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে ক্যাম্পাসকে রাজনৈতিক দল ও লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতিমুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু ছাত্র-শিক্ষক কেউ তার ধার ধারেনি।

গত ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই শুরু হয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি। শিক্ষকরা গঠন করে ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ’ আর ছাত্রলীগ শুরু করে দমন-পীড়নের রাজনীতি। তাদের অরাজকতার কারণে অনেক শিক্ষককে ছাড়তে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যদিকে অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষাজীবন শেষ করতে না পেরে পাড়ি দিয়েছেন অন্য পেশায়।

রক্তাক্ত জুলাই বিপ্লবের পর ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি উত্থাপন করেছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা জানান, তারা আর কোনো দলের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির শিকার হতে চান না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যার সমাধান সবকিছু ছাত্র সংসদের মাধ্যমে করতে চায় তারা। শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা গবেষণার মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করার এখনই সময়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নিলেই ছাত্র সংসদ সময়ের ব্যাপার। তবে ছাত্র সংসদের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো নীতিমালা নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে।

এদিকে ৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় প্রথম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের আলোকে ক্যাম্পাসে সব রাজনৈতিক দলের সহযোগী, অঙ্গ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রম করতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও এসবের তোয়াক্কা না করে সাম্প্রতিক সময়ে আবারও শিক্ষার্থীদের নিয়ে শোডাউন, হলে দলীয় প্রোগ্রাম, শিক্ষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আনাগোনা এবং কেক কেটে দলীয় কার্যক্রম উদ্‌যাপন করার অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের বিরুদ্ধে।

ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধ তবুও কেন প্রচারণা জানতে চাইলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ কালবেলাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তচিন্তার জায়গা। আমরা এটাকে সম্মান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করছি। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হলে আগামীর বাংলাদেশ হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করি।

ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, কারা ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করছে! যারা ফ্যাসিস্টের সহযোগী ছিল। তারা ভয় পেয়ে তড়িঘড়ি করে সিন্ডিকেট ডেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফ্যাস্টিস্টের কোনো সিদ্ধান্ত মানা হবে না।

ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করলে ছাত্রদলের কেন প্রয়োজন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্র সংসদকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি না থাকলে ফ্যাসিস্টের সহযোগীরা আবারও মাথচাড়া দিয়ে উঠবে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০ ভাগ শিক্ষক ফ্যাস্টিস্টের মাধ্যমে নিয়োগকৃত। তাদের সহযোগিতা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার স্বৈরাচারী আচরণ শুরু করবে।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় রক্তদাতা ‘বন্ধু’র সভাপতি ওসমান গনী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় আইনের কার্যকর ব্যবস্থার নেওয়ার এখনই সময়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে যে রাজনীতি তা লেজুড়বৃত্তিক ছাড়া কিছুই না। তা বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যকার আন্তঃসম্পর্ক উন্নয়নে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরপেক্ষ প্ল্যাটফর্ম ছাত্র সংসদ-এর নীতিমালা প্রণয়নে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

নাজিম উদ্দীন নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা ক্যাম্পাসে কোনো সমন্বয়ক, দল কিংবা শিবিরের রাজনীতি চাই না। ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য একটা ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এতদিন ভিসি ছিল না। এখন ভিসি এসেছে। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মাহামুদুল হাসান খান কালবেলাকে বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর আবারও লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি শিক্ষার্থীদের লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি বয়ে আনবে। রাজনীতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে আধিপত্য বিস্তার, হল দখলকে কেন্দ্র করে গ্রুপিং বা ভয়ের রাজনীতি শুরু হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরই ক্ষতি।

এই আন্দোলনে যদি ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ না হয় তাহলে আবার কোনো স্বৈরাচার ঘাড়ে চাপলে তখন কোনো শিক্ষার্থী স্বৈরাচার তাড়ানোর মনোবল নিয়ে এগিয়ে আসবে না। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হলে শিক্ষক রাজনীতিও বন্ধ হবে।

কিছু স্বার্থান্বেষী শিক্ষকরা ছাত্রদের নিয়েই রাজনীতি করে। ছাত্রদের ব্যবহার করে তাদের স্বার্থ উদ্ধার করে। এই অপরাজনীতির ফলে শিক্ষার্থী, সমাজ, রাষ্ট্র শিক্ষকদের গবেষণা থেকে বঞ্চিত হবে।

এ বিষয়ে নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি আমি তোমার থেকে জানলাম। সবার সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রেমের টানে ফিলিপাইনের দুই তরুণী রাজশাহীতে

লেবানন প্রবাসীদের জন্য জরুরি সেবা চালু বাংলাদেশ দূতাবাসের

১০৫ শহীদ শিশু পরিবারের মাঝে ৫০ হাজার টাকা ও সম্মাননা প্রদান

বৃষ্টি চলবে সপ্তাহজুড়ে / শেরপুর-ময়মনসিংহে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির আভাস

শিশুর সৃজনশীলতা ও ভবিষ্যৎ দক্ষতা বৃদ্ধিতে শিক্ষা উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ

যে আবিষ্কারের জন্য চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পেলেন দুই বিজ্ঞানী

কেন যুদ্ধ ছড়িয়ে দিতে চান ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা?

ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফোকলোর অ্যাসোসিয়েশনের আত্মপ্রকাশ

১০ ডলার ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাবে তিন সপ্তাহের জেল

‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রক্টর-প্রভোস্ট হতেই বেশি আগ্রহী’

১০

আবু সাঈদকে ‘সন্ত্রাসী’ বলা সেই ম্যাজিস্ট্রেটকে গ্রেপ্তারে আলটিমেটাম

১১

১১ অক্টোবর থেকে উন্মুক্ত হবে শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তন

১২

যে কারণে বার্সা একাদশে ছিলেন না কুন্ডে

১৩

সেন্টমার্টিনে পর্যটকের সংখ্যা সীমিত করা হবে : রিজওয়ানা হাসান

১৪

আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে রাবি ছাত্রশিবিরের দোয়া মাহফিল

১৫

জলাবদ্ধ ঘটনার পুনরাবৃত্তি পদ্ধতিগত মানবাধিকারের লঙ্ঘন

১৬

প্লাস্টিক নিষিদ্ধ হচ্ছে সেন্টমার্টিন দ্বীপে

১৭

শহীদ সাঈদকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দেওয়ার প্রতিবাদে গণবিক্ষোভ

১৮

রসিক কাউন্সিলরের দায়িত্ব পেলেন যারা

১৯

সাকিবের অবসর নিয়ে বিসিবি সভাপতির ইতিবাচক মন্তব্য

২০
X