শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) নবাব সিরাজুদ্দৌলা হলের ক্যান্টিনে ১২ লাখ টাকার বাকির একটি লিস্ট প্রকাশিত হয়েছে । বাকির ওই লিস্ট তালিকায় বেশিরভাগই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর নাম পাওয়া গেছে। রোববার (৭ অক্টোবর) রাতে হল প্রভোস্টের কাছে জমা দিয়েছেন ক্যান্টিন ম্যানেজার।
পাওনা টাকার তালিকা বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ৪০৯ নম্বর রুমের শিক্ষার্থী অনিক হাসান দুর্জয়ের কাছে সর্বোচ্চ ৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে। তিনি শেকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে ২২৭ নম্বর রুমের ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক একেএম তমাল আব্দুল্লাহর কাছে।
২০১ নম্বর রুমের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিদোয়ানের কাছে ৫৬ হাজার ৮০০ টাকা, ৪০৭ নম্বর রুমের ছাত্রলীগ কর্মী রমজান আলীর কাছে ৩৬ হাজার টাকা, উপ-মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক শেরেবাংলা হলের হৃদয় হাসান রাসেলের কাছে ৩৩ হাজার টাকা, তিনি এখন দেশের বাইরে আছেন।
৬০৮ নম্বর রুমের দপ্তর বিষয়ক উপ-সম্পাদক জেনিথ খানের কাছে পাওনা রয়েছে ২১ হাজার ২৭৫ টাকা। ২২০ নম্বর রুমের মোক্তার হোসেনের রয়েছে ৬৬ হাজার ৮৭০ টাকা। তিনি ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক উপসম্পাদক। এছাড়াও টাকা পাওনা রয়েছে আরও অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর কাছে।
এদিকে তালিকা পেয়ে হল প্রভোস্ট ও প্রক্টরিয়াল বডি হলে অবস্থানরত অভিযুক্ত একাধিক শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় অভিযুক্তরা শিগগিরই টাকা পরিশোধের কথা জানান।
অভিযোগ রয়েছে, বকেয়া অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে মাসের পর মাস খাবার রুমে নিয়েছেন। কারও ভাই, কারও বন্ধু পরিচয়ে অবৈধভাবে হলে রেখে ক্যান্টিন থেকে খাবার খাওয়ানো হতো। টাকা চাইলে ক্যান্টিন থেকে ম্যানেজারকে বের করে দেওয়াসহ বিভিন্ন হুমকি দেওয়া হতো।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা বলেন, এতদিন ধরে ছাত্রলীগের নামে জুলুম করা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের হক নষ্ট করা হয়েছে। ছাত্র হয়ে এরকম ঘৃণ্য কাজ ভবিষ্যতে আর কেউ যাতে না করে সেজন্য এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
নবাব সিরাজুদ্দৌলা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ফিরোজ মাহমুদ বলেন, আমরা বাকির একটি তালিকা পেয়েছি। অভিযুক্ত যাদের হলে পেয়েছি তাদের নিয়ে বসা হয়েছে। সর্বোচ্চ যারা বাকি খেয়েছেন শিক্ষার্থীর সার্টিফিকেট ও অন্য ডকুমেন্টস জমা রাখা হয়েছে। টাকা পরিশোধ করে নিয়ে যাবে। অন্য যারা হলে নেই তাদেরও টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিচ্ছি। অন্যথায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের ক্লিয়ারেন্স আটকে দেব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আবুল বাশার বলেন, আমরা শিগগিরই সব হলের বিষয়ে অফিসিয়াল নোটিশ দেব। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ক্যান্টিন, ডাইনিংয়ে কোনো জুলুম চলবে না। শিক্ষার্থীদের জন্য হলে নিরাপদ ও সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য আমরা কাজ করছি।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি নবাব সিরাজুদ্দৌলা হলের শিক্ষার্থীরা ক্যান্টিনের খাবার মান উন্নত করার জন্য একাধিকবার মিটিং করে ম্যানেজারের কাছে বকেয়া লিস্ট চায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শুরুতে এ তালিকা দিতে গড়িমসি করলেও শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে তা প্রকাশ করতে বাধ্য হন ক্যান্টিন ম্যানেজার।
মন্তব্য করুন