চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) থেকে উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন। রোববার (৬ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদে তালা লাগিয়ে এ আলটিমেটাম দেন তারা।
এর আগে কিছুদিন ধরে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকে যোগ্য শিক্ষককে উপাচার্য নিয়োগের জন্য দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছেন সিভাসুর শিক্ষার্থীরা। শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক সংলগ্ন জাকির হোসেন সড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।
ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে রোববার (৬ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে নগরীর খুলশী সিভাসু ক্যাম্পাসে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ অংশ নেন তারা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদে তারা তালা লাগিয়ে নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্যের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম ঘোষণা করেন। চলমান বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আলটিমেটামের পাশাপাশি আওয়ামীপন্থি কোনো শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেনে নেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, বর্তমানে কর্মরত অধ্যাপকদের মধ্য থেকে উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ বছর ধরে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা নিয়োগবাণিজ্য করে গেছেন। এ কারণে বিতর্কিত আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের আর প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে তারা চান না।
রোববার (৬ অক্টোবর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে ভিসি নিয়োগে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। এ পদে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের নিয়োগ না দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে। দাবি মেনে না নিলে প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ ও রাস্তা ব্লকেডসহ কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা কোনোভাবে বাকৃবি (বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) কোনো শিক্ষককে আমাদের ভিসি হিসেবে মানব না। আবার অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ সিভাসুর ভিসি হওয়ার পাঁয়তারা করলে তাকেও আমরা মানব না। আমাদের স্পষ্ট ঘোষণা, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হতে হলে আমাদেরই শিক্ষক হবেন। আগের ভিসিরা রুটিন ওয়ার্ক করেই চলে গেছে, কোনো কাজই করেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের স্নাতকের শিক্ষার্থী মো. শাহরিয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, আমরা সময় দিচ্ছি আপনাদের ৪৮ ঘণ্টার। এই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের যে দাবি রয়েছে সে দাবি সাপেক্ষে যিনি উপাচার্য হওয়ার জন্য যোগ্য সে ব্যক্তিকে আমাদের অভিভাবক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে পাঠাতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের সুস্পষ্ট কথা কোনো আওয়ামী ফ্যাসিবাদ দালালির সঙ্গে সংযুক্ত কেউ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক (ভিসি) হয়ে আসতে পারবে না; বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরপেক্ষ ও যোগ্য অনেক শিক্ষক আছেন। তারা প্রশাসনিক দায়িত্বে এলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বাড়বে। ক্যাম্পাসের বাইরের কোনো ব্যক্তিকে আমরা উপাচার্য হিসেবে মেনে নেব না।
আন্দোলনরত আরেক শিক্ষার্থী জিসান বলেন, আমরা বিভিন্ন সূত্রে খবর পেয়েছি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসবে। যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ২৯ বছর, যেটা কিনা বাংলাদেশের একমাত্র ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানে কীভাবে বাইরে থেকে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে সিভাসুর দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. কামাল কালবেলাকে বলেন, শুধু একবারই বাহির থেকে ভিসি নিয়োগ হয়েছিল। বাকিগুলো এখানকার। বাহির থেকে ভিসি আসতে পারে এমন খবরে শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সবার দাবি, বাহির থেকে কোনো ভিসি না আসুক, আমাদের থেকে যাতে দেওয়া হয়।
ভিসি নিয়োগের সিদ্ধান্তের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিনিয়র অধ্যাপকদের মধ্যে একজনকে আনা হলে আমরা সবাই খুশি। এদিকে সিভাসুর উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে জরুরি সভা ডেকেছে সিভাসু কর্তৃপক্ষ। রোববার (৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় এ জরুরি সভা ডাকেন সিভাসুর দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. কামাল।
জরুরি সভায় ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের সভাপতিত্বে অফিস কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় অনুষদীয় ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, রেজিস্ট্রার, বিভাগীয় প্রধান, হল প্রভোস্ট, পরিচালক (ছাত্রকল্যাণ), প্রক্টরসহ সিনিয়র শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরাজমান পরিস্থিতি এবং ২৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা করা হয়। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার স্বার্থে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠতম অধ্যাপকদের মধ্য থেকেই নতুন উপাচার্য নিয়োগের ব্যাপারে অভিমত ব্যক্ত করা হয়। এ বিষয়ে সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত নিবে বলে সভায় শিক্ষকরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মন্তব্য করুন