যুগ যুগ ধরে চলা ইসরায়েলি দখলদারিত্ব, গণহত্যা এবং বর্বরতায় সমর্থন দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার কথা বলার নামে তাদের ভণ্ডামি প্রমাণ করেছে। ফিলিস্তিনি ভূমি থেকে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের অবসানই ফিলিস্তিন ও লেবাননে শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ।
এমন দাবি উঠেছে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের প্রতিরোধ যুদ্ধ ‘তুফানুল আকসা’-এর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) আয়োজিত ‘অ্যান্টি জায়োনিস্ট র্যালি অ্যান্ড রিদমস অব রেজিস্ট্যান্স’ কর্মসূচি থেকে।
রোববার (৬ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের ব্যানারে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা কবিতা আবৃত্তি, জাগরণী সংগীত ও পথনাটক পরিবেশন করেন।
এ সময় ফিলিস্তিন ও লেবাননের উপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানানো হয়। এরপর সমাবেশ শেষে ফিলিস্তিনের একটি বিশাল পতাকা নিয়ে অ্যান্টি জায়োনিস্ট র্যালি অনুষ্ঠিত হয়, যা রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে ভিসি চত্বর, ফুলার রোড, স্বাধীনতা সংগ্রাম চত্বর হয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে চলচ্চিত্র নির্মাতা জাহিন ফারুক বলেন, ইসরায়েল যুদ্ধের যত ধরনের আইন আছে সেগুলো সব ভঙ্গ করেছে। তারা নির্বিচারে সিভিলিয়ানদের হত্যা করছে। বিশ্বে মানবাধিকারের বুলি যারা আওড়ায়, তারা সবাই এখনো নিশ্চুপ রয়েছে। কিন্তু হামাস যখন ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে গিয়ে সামরিক অভিযান চালিয়েছে তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন ট্যাগ দেওয়া হয়েছে। ফিলিস্তিনের মুসলমানদের ওপর নির্মম নির্যাতন ও হত্যায় দায়সারা বক্তব্য দেওয়া ছাড়া জাতিসংঘ কিছুই করেনি। যুগ যুগ ধরে চলা ইসরায়েলি দখলদারিত্ব, গণহত্যা ও বর্বরতায় নির্লজ্জ সমর্থন দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো প্রমাণ করেছে, তাদের মুখে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার কথা ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়। ফিলিস্তিনি ভূমি থেকে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের অবসানই ফিলিস্তিন ও লেবাননে শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমআইএস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম অপু বলেন, তুফানুল আকসার গাজার নিপীড়িত মানুষের সম্মিলিত প্রতিক্রিয়া ছিল। ইসরায়েল কর্তৃক গাজাতে ৭০ বছর ধরে চলে আসা নির্যাতনের একটি প্রতিবাদ। কিন্তু সে প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বের মোড়লদের আসল চেহারা উন্মোচিত হয়ে গিয়েছে। মিথ্যাচারকে কীভাবে বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সত্যে রূপ দেওয়া হয়। যেভাবে আমাদের একাত্তরের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে সেভাবে বিশ্বমিডিয়া, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশে দেশে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে।
অ্যাক্টিভিস্ট জামালউদ্দিন মোহাম্মদ খালিদ বলেন, ফিলিস্তিন পুরো বিশ্বের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূর্ত প্রতীক। বাংলাদেশের ২য় স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিটি পরতে পরতে আমরা ফিলিস্তিনি জনগণের দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস থেকে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। তাই আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রসংসদ আজকে এ বার্তাটিই দিতে চাচ্ছি যে, আমরা ফিলিস্তিনকে ভুলে যাইনি। আমরা ফিলিস্তিনের পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ পর্যন্ত সর্বতোভাবে তাদের পাশে আছি।
স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ খালিদের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- ফিলিস্তিন উলামা পরিষদের বাংলাদেশের কো-অর্ডিনেটর মোহাইমিনুল ইসলাম রিয়াদ, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য তুহিন খান, ফিলিস্তিনের শিক্ষার্থী ইব্রাহীম কিশকো, পাকিস্তানী শিক্ষার্থী মোহাম্মদ তাহির, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজিদ লশকর ও জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক লুৎফর রহমানসহ অনেকে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্ল্যাটফর্মটির মুখপাত্র হাসান ইনাম ও মারজিয়া মোমো।
মন্তব্য করুন