প্রায় তিন মাস পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সশরীরে ক্লাস শুরু হয়েছে। রোববার (৬ অক্টোবর) নতুন পরিবেশে ক্লাস শুরুর প্রথম দিনে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা গেছে ক্যাম্পাসজুড়ে। তবে সবাই ক্লাসে ফিরলেও ফেরেনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত চবির দুই শিক্ষার্থী হৃদয় তরুয়া ও ফরহাদ। ১৭ জুলাই ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে বন্ধ হয়ে যায় চবি।
গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এলাকায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন হৃদয় চন্দ্র তরুয়া। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৩ জুলাই মারা যান তিনি। অন্যদিকে গত ৪ আগস্ট নিজ জেলা মাগুরায় আন্দোলন চলাকালে নিহত হন ফরহাদ হোসেন। শহীদ হৃদয় ও ফরহাদের টেবিলটা আজ ফাঁকা। তাদের স্মরণে বন্ধুরা সেখানে ফুল রেখেছেন। তাদের শোকাহত বন্ধুরা প্রিয় সহপাঠীকে ভোলেনি, কখনো ভুলতে পারবে না।
এদিকে সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে সচল হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এর আগে শুক্রবার (৪ অক্টোবর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর আসন বরাদ্দ দেয় প্রশাসন। প্রায় ৭ বছর পর বৈধভাবে হলে উঠছেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হল। ক্যাম্পাসে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল আওয়ামী লীগের এ ছাত্র সংগঠনের।
এদিকে শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর প্রথম দিন ভিন্নভাবে শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘লাল ব্যাজ’ পরে সকাল সাড়ে ৯টায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী সমবেত হন। পরে নিজ নিজ ধর্ম অনুসারে প্রার্থনা ও মোনাজাত করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, প্রক্টর, বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে চবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলা নিয়ে অনেক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রশাসন। নিরাপত্তাজনিত ব্যাপার দেখভাল করার জন্য নিরাপত্তা দপ্তরের নিজস্ব কর্মীরা নিয়োজিত থাকবেন। পাশাপাশি প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ একাধিক স্থানে সচেষ্ট থাকবে। হলের আসন বরাদ্দের কাজও শেষ হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ রয়েছে, যা দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, আমরা দীর্ঘদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পেরে আনন্দিত। ৩ মাস পর শিক্ষার্থীদের মধ্য বাঁধভাঙা আনন্দ দেখতে পাচ্ছি। অপরদিকে ফ্যাসিস্ট সরকারের রেখে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনেক কাজ বাকি রেখেছে। আমরা সবস্তরে সংস্কারের চেষ্টা করব।
মন্তব্য করুন