যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) অস্তিত্বহীন এক লিফট অপারেটরের নামে প্রায় ১৫ মাসের বেতন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রভাষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি দৃষ্টিগোচর হলে নিজস্ব অ্যাকাউন্টে লিফট অপারেটরের মাসিক বেতনের টাকা আসার কারণ জানতে চেয়ে হিসাব পরিচালক ও রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন ওই শিক্ষক। তবে বিষয়টি ভুলবশত হয়েছে বলে দাবি করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব দপ্তর।
জানা যায়, দীর্ঘ এক বছরেরও অধিক সময় ধরে অস্তিত্বহীন এক লিফট অপারেটরের প্রতি মাসে বেতনের ১৪ হাজার ৪০৬ টাকা করে যবিপ্রবির প্রভাষক মুহাইমিনুল ইসলামের (ছদ্ম নাম) অগ্রণী ব্যাংকের নিজ অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে। যার মোট পরিমাণ ২ লাখ ১৬ হাজার ৪৭২ টাকা। ওই শিক্ষক অনলাইনে নিজের ব্যাংক স্টেটমেন্ট চেক করতে গিয়ে তার বেতনের অতিরিক্ত অর্থ দেখতে পেয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও হিসাব দপ্তরকে লিখিতভাবে অবহিত করেন।
রেজিস্ট্রার বরাবর অবহিত পত্রে ওই শিক্ষক লেখেন, অগ্রণী ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আমার অজান্তে অতিরিক্ত অর্থ সংযুক্ত হয়েছে। বিষয়টি আমি অনলাইনে আমার ব্যাংকের হিসাব বিবরণী দেখে জানতে পারি। অতিরিক্ত অর্থ আমার নিয়োগের পরবর্তী সময় থেকে যোগ হয়ে আসছে। বিষয়টি আমি যবিপ্রবি হিসাবরক্ষক দপ্তরে অবহিত করেছি এবং কারণ জানতে চেয়ে আবেদন করেছি।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা মহলে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, একজন শিক্ষকের নাম কেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর খাতায় থাকবে! এতে ওই শিক্ষকের চরমভাবে সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং এত মাস ধরে বেতন শিট পাস হচ্ছে, সেটা দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্তরা খেয়ালই করেননি! ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, পনেরো মাসের জমাকৃত অর্থ শিক্ষক মুহাইমিনুল ইসলামের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এখনো আছে, তিনি ওই টাকা উত্তোলন করেননি।
এক শিক্ষক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ কোনো পদে নিয়োগ পাওয়ার পর যোগদানপত্র হিসাব দপ্তরে পাঠালেই কেবল ওই ব্যক্তির নামে বেতন ইস্যু হয় নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাব নম্বরে। যখন লিফট অপারেটরের নাম হিসাব শাখায় তালিকাবদ্ধ করা হয়, তখন সবকিছু দেখেই বেতন ইস্যু করা হয়। ওই নামে কোনো অপারেটর নেই, তাহলে কীভাবে একজন অপারেটরের নামে বেতন আসে? নিশ্চয়ই এর মধ্যে হিসাব শাখার ঊর্ধ্বতনের গাফিলতি বা অসৎ উদ্দেশ্য ছিল। এ ছাড়া চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর জায়গায় একজন প্রভাষকের নাম নিয়ে আসা শিক্ষক সমাজকে লাঞ্ছিত করা। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রশাসনকে আহ্বান করছি।
এ বিষয়ে যবিপ্রবি শিক্ষক মুহাইমিনুল ইসলাম বলেন, অনলাইন স্টেটমেন্ট চেক করতে গিয়ে দেখি অতিরিক্ত অর্থ আমার অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। ব্যাপারটি জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গেই হিসাব শাখাকে মৌখিকভাবে জানাই। পরে লিখিতভাবে রেজিস্ট্রার ও হিসাব পরিচালককে অবহিত করি এবং আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমাকৃত অতিরিক্ত অর্থ ফেরত নেওয়ার জন্য আবেদন করেছি। হিসাব শাখার মতো একটি সংবেদনশীল জায়গা থেকে এমন ভুল কখনো আশা করিনি। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর জায়গায় আমার নাম যাওয়া এবং ওই অস্তিত্বহীন ব্যক্তির টাকা আমার অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া শিক্ষক হিসেবে সম্মানহানিকর বিষয়। এর জন্য যে বা যারা দায়ী, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
ঘটনার কারণ কম্পিউটার অপারেটরের উদাসীনতা দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব শাখার ডিরেক্টর মো. জাকির হোসেন কালবেলাকে বলেন, শিক্ষক মুহাইমিনুল ইসলামের বেতন প্রদানের বিষয়টি আমি জানার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করি। তিনি জানান ভুলবশত ওই শিক্ষকের নাম ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নম্বর লিফট অপারেটরের জায়গায় ডাটা এন্ট্রি করা হয়। যদি কম্পিউটার সফটওয়্যারে ডুপ্লিকেট অ্যাকাউন্ট চেক করার পদ্ধতি থাকত, তবে এমন ঘটনা ঘটার কোনো সুযোগ থাকত না। বিষয়টি ওই শিক্ষক অবহিত করলে ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। ওই কমিটি চার কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেবেন। তদানুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আহসান হাবীবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মন্তব্য করুন