বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) এক ছাত্রলীগ পরিচয়দানকারী নেতা রাজীব মণ্ডলের কাছেই স্থানীয়রা পান ৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকার কর্ণকাঠিতে স্থানীয় দোকানদাররা ও জোর করে চাঁদা দাবির টাকা মিলিয়ে মোট ৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা পাবেন বলে জানা যায়।
এ ঘটনায় স্থানীয়রা রাজীব মন্ডলকে টানা ৫ ঘণ্টা আটক করে রাখে। পরে জামিনদার হয়ে চেকে আল আমিন নামে এক যুবকের স্বাক্ষর নিয়ে তাকে (রাজীব) ছেড়ে দেওয়া হয়।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোলা রোড সংলগ্ন কাঁচাবাজার থেকে স্থানীয়রা রাজীব মন্ডলকে আটক করে। এর আগে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগকর্মী নাহিদ রাফিনের বাসায় ওঠেন রাজীব। আটকের সময় স্থানীয় লোকজন চড়াও হয় এবং নির্যাতিত ব্যক্তি ও পাওনাদাররা জড়ো হতে থাকে। পরে স্থানীয় ছাত্রদল নেতাকর্মীরা তাকে ঘরোয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে আটকে রাখে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের উপস্থিত হতে দেখা যায়। নানান অভিযোগ নিয়ে হাজির হয় স্থানীয়রাও।
স্থানীয় যুবক জাকির মৃধা জানান, ছাত্রলীগ নেতা রাজিব মণ্ডলের নেতৃত্বে আমাকে রাতের আধারে দপদপিয়ার পুরাতন ফেরিঘাট মাদ্রাসার একটি জায়গায় আমাকে তুলে নেয়। আমাকে অনেক নির্যাতন করে এবং চাঁদার টাকা চায়। জীবনের ভয়ভীতি দেখায় তারা। এক পর্যায়ে জীবন বাঁচাতে আমি তাদের (ছাত্রলীগ) ৭০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম।
স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন জানান- রাজিব মন্ডল, সিফাত, আল সামাদ শান্ত, আরাফাতসহ বেশ কয়েকজন হেরা আমাকে ভার্সিটির পাশে হিরন্ময় প্লাজা জসিমের ভবনে তুইলা আনে ও আটকে রাখে। এটাই মনে হয় তাদের টর্চার সেল। তারা বলে, তোর ভাই ছাত্রদল করে তারে আইনা দে, নইলে টাকা দে। আমাকে ছাপরছোপড় দিয়েছে আল্লার নাম লইয়া। আমার বাবা নেই কিন্তু মা বোনকে গালাগাল করছে তারা। হের পরে ঘাড়ে বিড়ির ছ্যাঁকা দিয়েছে, পিটাইছে। জোর করে দেড় লাখ টাকার স্বীকারোক্তি নিয়েছে আমার থেকে। কারণ, আমার ভাই (রিফাত) ছাত্রদল করে। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে ধার করে ৫০ হাজার টাকা দেই তাদের।
এ ছাড়া রাজিব মন্ডলকে আটকানোর সময়ে তাদের পাওনা টাকার কথা জানান স্থানীয়রা। ৩৫ জনেরও অধিক মানুষ রাজীবের কাছে টাকা পাবে বলে স্থানীয়রা জানায়। তবে উপস্থিত বেলা ৪টায় মোট ৩৫ জন পাওনাদার তাদের পাওনার কথা বলে। এতে মোট পাওনা দাঁড়ায় ৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।
পরে রাজীব মণ্ডলের পক্ষ হয়ে একটি ব্যাংকের চেকে স্বাক্ষর করেন আল আমিন নামে এক যুবক। তিনি জানান, ওই সময়ে একজন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আমি জামিন নিয়ে চেকে স্বাক্ষর করি। এ ছাড়া কিছু না।
এ সময় উপস্থিত কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তার (রাজিব মন্ডল) কাছে প্রায় দোকানদার টাকা পায়। এমনকি মুচি ও নাপিতও তার (রাজিব) কাছে টাকা পায়।
আল-মদিনা হোটেলের স্বত্বাধিকারী জানান, রাজিব মন্ডল আমার দোকানে আসত। বলতো যা যা আইটেম আছে সব খাবার নিয়ে আয়। সব খাবো। গরুর মাংস, ডিম সব খাইছে। কিন্তু টাকা দেয়নি। টাকা চাইলে বলতো চুপ, ফিসফিস করবি না। তিন হাজার টাকা পাবো কিন্তু তিন চারমাস ধরে তার (রাজিব) আর দেখা পাইনি।
শুধু রাজীব মন্ডল নয়, কর্ণকাঠিবাসী জিম্মি ছিলেন ক্যাম্পাসের পরিচয়ধারী কিছু ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে। বাড়িঘর ভাঙচুর, জমি দখল, অবৈধ বালুর ব্যবসা, বাকী খাওয়া থেকে শুরু নানান অপকর্মে যুক্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে অনেক ছাত্রলীগ পরিচয়দানকারী নেতাদের বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও হতেন নানান নির্যাতনের শিকার। তবে নির্যাতনকারীর মধ্যে অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রাজীব মন্ডলকে এলাকাবাসী আটকালে একে একে সব সামনে আসে তাদের (ছাত্রলীগের) অপকর্ম।
তবে এসব অভিযোগের ব্যাপারে রাজীব মন্ডলকে ফোন করা হলে সাড়া মেলেনি। তবে একটি গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। রাজীব বলেন, এখানে বেশি করে লিখে রেখেছে। আমার কাছে এত টাকা পাবে না। যদি কেউ প্রমাণ দেখাতে পারে তাহলে আমি তাকে এর দ্বিগুণ দেব। তিনি আরও বলেন, বরং আমি মানুষের কাছে টাকা পাব। সেগুলো উঠাতে এসেছি। এখানে আমাকে রাজনৈতিকভাবে ফাঁসানো হচ্ছে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ছাত্রলীগের কোনো কমিটি ছিল না। তবে দুটি গ্রুপ বিদ্যমান ছিল। সাবেক বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী ও অন্যদিকে বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের অনুসারী ছিলেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বর্তমানে এসব নেতারা ক্যাম্পাস থেকে লাপাত্তা রয়েছেন। তবে ঘুরে ফিরে উভয় পক্ষের অন্তত ১২ জনের বিরুদ্ধে নানান অপকর্মের অভিযোগ আসলেও সামনে আসেনি এখনো।
মন্তব্য করুন