খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থীরা একের পর এক পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাত থেকে বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী পেটের পীড়া, ডায়রিয়া ও বমির সমস্যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আবাসিক হলে পানির ট্যাঙ্ক নিয়মিত সঠিকভাবে পরিষ্কার করা হয়নি। এতে ট্যাঙ্কে ব্যাকটেরিয়া বাসা বেঁধেছে। দূষিত ওই পানি পান করায় তারা ডায়রিয়াসহ পেটের পীড়ায় ভুগছেন। পানির সমস্যা, শুরুতে জানানো হলে কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি, পরে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে। এই অবহেলার দায় কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ পানি সমস্যার সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের আসন সংখ্যা ৫৭৬টি। হলটিতে ১৯ জন বিদেশি শিক্ষার্থী থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি হলের মধ্যে ছয়তলা বিশিষ্ট সবচেয়ে বড় আবাসিক হল এটি। পানি সরবরাহ করা হয় আলাদা সাবমার্সিবল পাম্পের মাধ্যমে। হলের ক্যান্টিনের লিটন হোসেন নামে একজন স্টাফ পেটের পীড়া নিয়ে মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি আছেন। এ ছাড়া এই আবাসিক হলে আট থেকে দশজন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু তাদের ভেতর কেউ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার বলেন, হলের দূষিত পানি খেয়ে পেটের পীড়া নিয়ে মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছি। আমার মতো অনেক শিক্ষার্থীই নানা রোগে ভুগছেন। আমার পাশের রুমের এক বন্ধু বমি করতে করতে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিল।
পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের মাহেদুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলসহ অন্যান্য হলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে পানির সংকট ও দূষণ আমাদের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানিতে ময়লা ও পোকা এখন নিত্য দিনের ঘটনা। হলের প্রতিটি ব্লকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র স্থাপন করা হোক। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জোরালো দাবি জানাই বঙ্গবন্ধু হলসহ অন্যান্য হলে পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র স্থাপন করা হোক এবং পানির মান উন্নত করা হোক।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো.আল মারুফ বলেন, গতকাল সকাল থেকে জ্বর। মেডিকেলে গেলে ডাক্তার জানালেন বঙ্গবন্ধু হলের অনেকে নাকি একইভাবে অসুস্থ। আমার পাশের রুমের দুজনকেও দেখলাম রাত হতে পেটের সমস্যায় ভুগছেন।
স্বরেজমিনে হলের দায়িত্বে থাকা কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তারা কাজ শুরু করেছে। পাইপের সব পুরোনো পানি ফেলে দিয়ে নতুন করে পানি উত্তোলন করেছে। পানির ট্যাঙ্ক নতুন করে আবার পরিষ্কার করেছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. এস এম মাহবুবুর রহমান বলেন, গত কয়েক দিনের অতিবৃষ্টিতে আমাদের পানির সাবমার্সিবল পাম্পগুলো তলিয়ে যায়। তখন যতবার পানি উত্তোলন হয়েছে ততবারই দূষিত পানি পাইপ দিয়ে ঢুকেছে। যা পানির ট্যাঙ্কগুলোতে জমা হয়েছে। সেখান থেকেই এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সব পুরোনো পানি ফেলে দিয়েছি। নতুন করে আবার সব পরিষ্কার করে, নতুন পানি উত্তোলন করেছি। আর সমস্যা থাকবে না আশা করি।
মন্তব্য করুন