নিরাপত্তা অফিসের তালা ভেঙে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লার ওপর হামলা চালানোর ঘটনায় জড়িত ৫ ব্যক্তির পরিচয় জানা গেছে।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেটে আটক করে শামীম মোল্লাকে মারধর করে প্রক্টর অফিসে হস্তান্তর করে শিক্ষার্থীরা। পরে প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে শামীম মোল্লার ওপর দ্বিতীয় দফায় হামলা চালানো হলে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পরে রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আহত শামীম মোল্লাকে পুলিশে হস্তান্তর করলে পুলিশের গাড়িতে করে গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নিরাপত্তা কার্যালয়ের ভেতরে জিন্সের প্যান্ট ও শার্ট পরা এক ব্যক্তি শামীমকে মারধর করছেন। কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ওই ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ ভুইয়া।
চেক শার্ট পরা আরেক ব্যক্তিকে গাছের ডাল দিয়ে শামীমকে পেটাতে দেখা যায়। তিনি ৪৫ ব্যাচের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ। এ ছাড়া মারধরে অংশ নেওয়া লাল হাফ শার্ট পরা আরেক ব্যক্তি হলেন, একই বিভাগের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী রাজন হাসান।
সর্বশেষ পুলিশের গাড়িতে তোলার সময় শামীমকে মারধর করেন ইংরেজি বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী হামিদুল্লাহ সালমান। এ ছাড়া কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী এম এম সোহাগকে লাঠি হাতে মারধর ও উসকানি দিতে দেখা যায়।
মারধরের সম্পৃক্ততার বিষয়ে সাঈদ বলেন, কেউই হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে মারধর করেনি। একজন সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে আমি দেখতে গিয়েছিলাম। আর একজন মানুষ যিনি হেঁটে পুলিশের গাড়িতে গেছে আর কিছুক্ষণের মধ্যে মারা গেছেন। এর রহস্য উদঘাটন করা জরুরি।
এ বিষয়ে রাজু আহমেদ বলেন, আমি সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে শোনার পর সেখানে গেছিলাম। সেখানে গিয়ে আমি শামীমকে ধমক দিই, তাকে মারধর করিনি।
রাজন হাসান বলেন, আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু মারার জন্য সেখানে যায়নি। যারা তালা ভাঙার চেষ্টা করছিল তাদের আমি নিষেধ করেছিলাম।
এ বিষয়ে হামিদুল্লাহ সালমান বলেন, আমি সন্ধ্যায় হলে ছিলাম। পরে খবর পেয়ে প্রক্টর অফিসে যায় কিন্তু শামীম মোল্লাকে মারধর করিনি।
আরেক অভিযুক্ত সোহাগ বলেন, আমি টিউশন থেকে ফেরার পথে হইচই দেখে সেখানে গিয়েছিলাম কিন্তু মারধর করিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেট সংলগ্ন একটি দোকানে অবস্থান করছিলেন শামীম মোল্লা। তার অবস্থানের খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী সেখানে গিয়ে তাকে আটক করে মারধর করে। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম উপস্থিত হয়। একপর্যায়ে নিরাপত্তা কর্মীদের সহায়তায় তাকে নিরাপত্তা শাখায় নিয়ে আসা হয়। এ সময় তাকে নিরাপত্তা অফিসে রাখা হলে গেটের তালা ভেঙে পুনরায় তার ওপর হামলা চালান অভিযুক্তরা। মূলত, এ হামলায় শামীম গুরুতর আহত হয়ে পড়েন। এরপর পুলিশের গাড়িতে তোলার সময় তৃতীয় দফায় তার ওপর হামলা চালানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহিন বলেন, শামীম মোল্লাকে প্রান্তিক গেটে হালকা মারধর করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসা হয়। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিরাপত্তা অফিসে নিয়ে গেলে সেখানে গেট ভেঙে তার ওপর হামলা করে শিক্ষার্থীরা। তখনই সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তালা ভাঙার সময় আমি প্রক্টর অফিস থেকে বের হতে গেলে কয়েকজন শিক্ষার্থী আমাকে বাধা দেয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা করা হবে।
নিহত শামীম মোল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯ ব্যাচের ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের জুয়েল-চঞ্চল কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। শামীম বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশেপাশের এলাকায় মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, জমিদখল, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত। এ ছাড়া তার বিরদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে। গত ১৫ জুলাই রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় তিনি সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
মন্তব্য করুন