শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২১ পিএম
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ঢাবির হলে পিটিয়ে হত্যা : আজই প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ

হলে চোর সন্দেহে নির্যাতন ও ঢাবির লোগো। ছবি : সংগৃহীত
হলে চোর সন্দেহে নির্যাতন ও ঢাবির লোগো। ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে হলটির কিছু শিক্ষার্থী কর্তৃক মারধরের পর তোফাজ্জল নামে এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনায় সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। আজই এ ঘটনার প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শাহ্ মো. মাসুম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই কমিটি গঠন করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফজলুল হক মুসলিম হলে গত ১৮/০৯/২০২৪ তারিখ রাতে সংগঠিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য নিম্নলিখিত কমিটি গঠন করা হলো। উপরোক্ত বিষয়ে অদ্য সন্ধ্যা ৬.০০ ঘটিকার মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমাদানের জন্য অনুরোধ করা হলো।

কমিটিতে আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক ড. আলমগীর কবীরকে আহ্বায়ক হিসেবে রাখা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফিউল আলম খান, অধ্যাপক ড. শেখ জহির রায়হান, জনাব মো. মাহাবুব আলম আবাসিক শিক্ষক, ড. আছিব আহমেদ, ড. এম এম তৌহিদল ইসলাম এবং এ. কে. এম. নূর আলম সিদ্দিকী।

এর আগে হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যায় হলে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলছিল। এমন সময় হঠাৎ তোফাজ্জল নামে যুবক হলে প্রবেশ করলে শিক্ষার্থীরা দুপুরে ছয়টি মোবাইল চুরির ঘটনার চোর সন্দেহে মূল ভবনের অতিথি কক্ষে নিয়ে তাকে মারধর ও জেরা করতে থাকে। একপর্যায়ে, তাকে নিয়ে হল ক্যান্টিনে খাওয়ানো হয়। এরপর এক্সটেনশন ভবনের অতিথি কক্ষে নিয়ে দ্বিতীয় দফায় বুক, পিঠ, হাত ও পায়ে ব্যাপক মারধর করেন একদল শিক্ষার্থী।

মারধরের ফলে ওই যুককের পা থেকে রক্ত বের হতে থাকে। এরপর রাত পৌনে ১০টার দিকে ফের মূল ভবনের অতিথিকক্ষে নিয়ে মারধর করা হয়। এরপর ১০টার দিকে প্রক্টোরিয়াল মোবাইল টিমের সদস্যরা এলে মারধরকারীরা তাকে তাদের হাতে তুলে দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে কিছু শিক্ষার্থী ও কয়েকজন হাউস টিউটরের সহায়তায় তাকে প্রথমে শাহবাগ থানায় এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ভারসাম্যহীন যুবককে পিটিয়ে হত্যা, ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা করবে ঢাবি মানসিক ভারসাম্য হারানোর আগে ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন তোফাজ্জল এ ঘটনায় পরের দিন ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদসহ কয়েকজন সহকারী প্রক্টর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ফজলুল হক হল পরিদর্শন করে বিস্তারিত খোঁজখবর নেন এবং হল প্রশাসনকে ঘটনায় জড়িতদেরকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেন। এ ছাড়া এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের কেউ না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

কবির কানন নামে ঢাবির সাবেক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পেরেছি যে, ফজলুল হক হলে চোর সন্দেহে ধরে মারধর করা লোকটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন, তিনি পেশাদার চোর নন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহু সময় কাটিয়েছেন তিনি, সে কারণে হয়তো হলে ঢুকে পড়েছেন। তার বাবা-মা-ভাই কেউ বেঁচে নেই। আঘাতজনিত ও ট্রমার কারণে তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। তার বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলি ইউনিয়নে।

শাহরিয়ার কবির শোভন নামে এক শিক্ষার্থী ঘটনার বর্ণনায় বলেন, তখন আনুমানিক সন্ধ্যা ৭টা বা সাড়ে ৭টা। আমাদের ফজলুল হক মুসলিম হলের ফুটবল খেলা চলছিল। শহীদ ইমতিয়াজ বনাম শহীদ আবু সাঈদ একাদশের খেলা হচ্ছিল তখন। আমি শহীদ ইমতিয়াজ একাদশের গোলকিপারের দায়িত্ব পালন করছিলাম। সেই মুহূর্তে হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা চোর সন্দেহে একজনকে আটক করে।

(উল্লেখ্য, আমাদের হলের ৬ জনের ৬টি মোবাইল ফোন সকালে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালীন চুরি হয়ে যায়)। পরবর্তীতে কী হয়েছে আমি জানি না।

তিনি বলেন, খেলা শেষে আমি রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে শহীদুল্লাহ্ হলে খেতে যাই, তারপর হলে আসি। হলে আসার পর হলে আমার হলের একজন স্যারের সঙ্গে দেখা হয়। তখন আনুমানিক রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টা। আমার সঙ্গে আরো ২ জন ছিল যাদের একজনের ফোন চুরি হয়েছে। সে স্যারকে বিষয়টা বলে। বলে রাখা ভালো, এই সময়ের মধ্যে চোর সন্দেহে যাকে ধরা হয়েছে তাকে হলের কিছু শিক্ষার্থী ক্যানটিনে নিয়ে গিয়ে খাওয়ায়, যা আমি পরে জেনেছি। স্যারের সঙ্গে যখন কথা বলি তখনও আমি চোর সন্দেহে যাকে ধরা হয়েছে তার ফেস দেখিনি এবং সে কোথায় তাও জানি না। তাই আমি ফিল্ডে চলে যাই খেলা দেখার জন্য।

তিনি আরও বলেন, কিছুক্ষণ খেলা দেখার পর মেইন বিল্ডিংয়ের সামনে এসে দেখি অনেক শিক্ষার্থী। সঙ্গে হলের ৪-৫ জন স্যার। সেই সময় আমি চোর সন্দেহে আটক ব্যক্তিকে গেস্টরুমে দেখতে যাই। ওইসময় কেউ হয়তো ছবি তুলেছে। যেটা ভাইরাল হয়েছে। সেখানে আমি ৪-৫ মিনিট অবস্থান করি এবং আমি একটা ফুলের টোকাও দেই নি। যখন গিয়ে দেখি তখনই তার অবস্থা ভয়াবহ। পরবর্তীতে সেই ব্যক্তিকে প্রক্টরিয়াল টিমের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

ওই শিক্ষার্থী বলেন, এই কাজের সঙ্গে যারা সত্যিকার অর্থে জড়িত তাদের খুঁজে বের করা হোক। ফজলুল হক মুসলিম হলের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এই ঘটনা হল তথা পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কিত করেছে।

নিজ হলে সংঘটিত এই ঘটনায় হল প্রশাসনের ভূমিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. শাহ মো. মাসুম বলেন, আমাকে ঘটনার শুরুর দিকে কিছু জানানো হয়নি। যখন কয়েকজন কল দিয়েছেন তখন আমি ঘুমিয়েছিলাম, রিং বুঝতে পারিনি। পরে সকালে উঠে জানতে পারলাম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এখন আমরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মোটরসাইকেলের ধাক্কায় প্রাণ গেল গৃহবধূর

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান আটক

দেশের ৩ অঞ্চলে হিট ওয়েভের শঙ্কা

ঢাকাস্থ গণচীনের দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ

চট্টগ্রামে হাতকড়া পরে ফিরল সাবেক এমপি ফজলে করিম

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা প্রতিরোধে একমত যুক্তরাষ্ট্র-ফ্রান্স

প্রধান উপদেষ্টার / সহকারী প্রেস সচিব হলেন দুই তরুণ সাংবাদিক

শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব, শিক্ষাব্যবস্থায় অচলাবস্তা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে ধূম্রজাল

গণপিটুনির ঘটনায় / জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার

১০

জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন তারেক রহমান

১১

বিশেষ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার দাবি লায়ন ফারুকের

১২

জাবিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যা, এক সমন্বয়ককে অব্যাহতি

১৩

ড. ইউনূসকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের

১৪

মাদারীপুরে কৃষককে পিটিয়ে হত্যায় মানববন্ধন

১৫

জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন গ্রিডের টাওয়ার পদ্মায় বিলীন

১৬

দীঘিনালায় দুপক্ষের সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

১৭

তিন মাস ধরে ১৪০০ চা শ্রমিকের মজুরি বন্ধ

১৮

নীতিমালার খসড়া অনুমোদন / সম্পদের হিসাব দিতে হবে উপদেষ্টাদেরও

১৯

জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন গ্রিডের টাওয়ার পদ্মায় বিলীন

২০
X