গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুট, হত্যা, উপাসনালয়ে হামলাসহ তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের ঘটনার বিচার ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিতকরণ এবং সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়নসহ ৮ দফা দাবি জানিয়েছে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এসব দাবি জানান প্লাটফর্মটির শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রী সুশ্মিতা কর। এসময় সত্যজিৎ চ্যাটার্জি ও স্বর্ণা রাণীদেসহ প্লাটফর্মটির আরও কয়েকজন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
প্লাটফর্মটির দাবিগুলো হলো- সংখ্যালঘু নির্যাতন বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শান্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে; অনতিবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে : সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে; হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশন এ উন্নীত করতে হবে।
পাশাপাশি বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে; দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে; সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনাকক্ষ বরাদ্দ করতে হবে; "সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড" আধুনিকায়ন করতে হবে এবং, শারদীয় দুর্গাপূজায় ৫ দিন ছুটি দিতে হবে।
এর সঙ্গে প্রতিটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রধান প্রধান উৎসবে প্রয়োজনীয় ছুটি প্রদান করতে হবে।
সুস্মিতা কর তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন থেকে বাংলাদেশে নির্বাচনব্যবস্থা কিংবা যেকোনো ক্রান্তিকালে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন ও সহিংসতা সংঘটিত হয়ে আসছে। আপনারা অবগত আছেন, সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনের ন্যায্যতা নিয়ে দেশের ছাত্র জনতা যে আন্দোলন করেছে, তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে আমরাও রাজপথে ছিলাম।
অথচ ছাত্র জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট তৎকালীন সরকার পদত্যাগের পর গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংস নির্যাতন শুরু হয়েছে এবং এখনো চলমান।
সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন-এর সূত্র অনুযায়ী, সারাদেশের প্রায় ৪৮ টি জেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার, লুটপাট, হত্যা, নারীর শ্লীলতাহানি, মন্দির ভাঙচুর, গির্জায় হামলা, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত ১৩ ই আগস্ট 'সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন' এর সাধারণ শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সাথে অন্তর্বর্তী সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া'র সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আলোচনা সম্পন্ন হয়।
প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছিলেন, তারা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, ক্ষতিপূরণসহ ৮ দফা দাবি যথাযথ বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। কিন্তু গত ৩৬ দিনেও অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে আশানুরূপ কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয় নি।
একইসঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি সংহিতার ঘটনায় জাতীয় গণমাধ্যমের নীরবতা লজ্জাজনক ও দুঃখজনক।
নিজেদের ৮ দফা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে সুষ্মিতা বলেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতা করছি না, কেননা বিগত ৫৩ বছরে কোনো সরকারই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। একটি দেশের অগ্রগতি, উন্নতি, অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রকাশ পায়, সে দেশের সংখ্যালঘুদের অধিকারের যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তার মাধ্যমে।
আমরা আমাদের আগামী দিনের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় ৮ দফার বাস্তবায়ন চাইছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ন্যায়বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা বিশ্রাম নেবো না, ৮ দফা বাস্তবায়ন না হলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এদেশে নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারবে না।
সুষ্মিতা আরও বলেন, আমরা চাই, আগামীতে যে সরকারই আসুক, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিরাপদ থাকুক। বাংলাদেশ আমাদের সবার। আমরা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সফল পরিণতি হিসেবে বৈষম্য বিরোধী চেতনার এক নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি যেখানে আমাদের দায়িত্ব সকল প্রকার ধর্মীয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা।
মন্তব্য করুন