কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগত, ছাত্রলীগ ও পুলিশি হামলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা ও শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক হল ত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রশাসনের প্রতি ধিক্ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ সমাবেশ আয়োজন করেন একদল শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীরা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন তুঙ্গে, যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছিল পুরো দেশব্যাপী তখন ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদিন সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় সিন্ডিকেট। এই আদেশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে স্তিমিত করার অপচেষ্টা চালানোর দায়ে ঢাবির তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিচার দাবি করছি।
তারা বলছেন, গত ১৭ জুলাই মাকসুদ কামাল প্রশাসনের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের রক্তাক্ত করেছে স্বৈরাচারের পেটুয়া বাহিনী। অথচ এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
সমাবেশে বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আবিদ হাসান রাফি বলেন, আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৫ জুলাই যখন ছাত্রলীগ তাদের গুণ্ডাপান্ডা নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে নারী শিক্ষার্থীসহ আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে তখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয় নির্লজ্জ প্রশাসনকে নিরব ভূমিকায় দেখেছি। যখন আমাদের নারী শিক্ষার্থীরা রক্তাক্ত হয়েছিল তখন মাকসুদ কামালের মতো নির্লজ্জ প্রশাসকরা দরজা লাগিয়ে বসে ছিল।
তিনি আরও বলেন, পরে ১৭ জুলাই ছিল আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি কলঙ্কিত দিন। যেদিন পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ারগ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের রক্তাক্ত করেছিল। যখন আমরা হল থেকে ছাত্রলীগকে বের করে দিয়ে হলগুলোকে কলঙ্কমুক্ত করেছিলাম তার বিনিময়ে আমাদের হল ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল।
এ ছাড়া তিনি বলেন, আমাদের নতুন প্রশাসনের কাছে দাবি থাকবে তৎকালীন স্বৈরাচার অথর্ব প্রশাসন যেন কোনোভাবেই আর প্রশাসনে ফিরে না আসতে পারে।
আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী সায়েদুজ্জামান নুর আলভী বলেন, তারা কোনো প্রতিবাদ না করে এই হামলার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে এই হামলার বিরুদ্ধে সমর্থন দিয়েছিল। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে থাকা এই গোষ্ঠীর বিচার হওয়া দরকার।
সালমান শাহেদ বলেন, ভিসি মাকসুদ কামাল শুধু নয় প্রোভিসি, প্রক্টরসহ সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। সেদিন সিন্ডিকেট মিটিংয়ের নামে প্রহসন করেছে এরা।
মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মেফতাহুল মারুফ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাকসুদ কামাল প্রশাসন ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ইতিহাসের এক কলঙ্কিত ঘটনা উপহার দিয়েছিল সেই ১৭ জুলাইতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করার পরও এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের দৃশ্যমান পদক্ষেপ আমরা দেখছি না। এটি আমাদের জন্য লজ্জার। আমরা এই স্বাধীন দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো স্বৈরাচারী প্রশাসককে আর দেখতে চাই না।
মন্তব্য করুন