চাঁদা দাবি ও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে নিরাপত্তাহীনতার অভাবে ২০ দিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার এটিএম নাসির উদ্দিন। এতে যাতে করে বিঘ্ন ঘটছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথকেয়ার সেন্টারের সেবার। ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
চাঁদা দাবি ও হত্যার হুমকির বিষয়ে ইতোমধ্যে চিকিৎসক এটিএম নাসির উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর একটি অভিযোগ দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথকেয়ার সেন্টারে ডিউটিরত অবস্থায় চিকিৎসকের রুমে এসে তার কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করে স্থানীয় মো. সাইফুল ইসলাম মৃধা, মো. মাসুদ মৃধা, জসীম উদ্দীন (কাস্টম জসিম) ও মো. জসিম মিয়া।
এ সময় চক্রটি ডা. এটিএম নাসির উদ্দিনকে রুমের দরজা আটকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়ার নির্দেশ দেয়। এমনকি টাকা দিতে না পারলে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ক্যাম্পাসে আসতে নিষেধ করা হয়।
জানা গেছে, পরবর্তীতে এ ঘটনা উল্লেখ করে আইনি ব্যবস্থা নিতে পবিপ্রবির রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত অনুমতি চান ডা. নাসির। কিন্তু রেজিস্ট্রারের কাছে আইনি সহায়তা চাওয়ার পর থেকে অভিযুক্তরা নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এ ঘটনায় তিনি পটুয়াখালী ক্যান্টনমেন্ট জিওসির কাছেও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে এ ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার এটিএম নাসির উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, আমি দীর্ঘ ২৩ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছি। এমন ঘটনায় আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানানোর পর তারা ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে আইনি সহায়তা নিতে অনুমতি চাওয়ার পর থেকে চক্রটি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. মাসুদ মৃধা বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয়, টিএসসিসহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রায়ই যাতায়াত করি। তবে ডা. নাসিরের সঙ্গে আমার কোনো ধরনের কথা বা দেখা হয়নি।
এ সময় তিনি ডা. নাসির সম্পর্কে অভিযোগ করে বলেন, ডা. নাসিরকে বিএনপির আমলে আমি নিজে চাকরি দেই। ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে ডা. নাসির বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতা বনে যান। পাশাপাশি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথকেয়ারে আধিপত্য বিস্তার করে একা নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে মো. সাইফুল মৃধা বলেন, বর্তমানে আমি দল গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছি। এ সময় আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক এ ধরণের অভিযোগ আসতে পারে। তবে আমার এ রকম কোনো কিছুতে সংশ্লিষ্টতা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আবুল বাশার খান বলেন, এ বিষয়ে ভুক্তভোগী চিকিৎসক আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করার পর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. এসএম হেমায়েত জাহান বলেন, এ ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বোর্ডকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সেটি স্থানীয় থানায় আইনি প্রক্রিয়ার জন্য পাঠানো হবে।
মন্তব্য করুন