টিউশনির বকেয়া টাকা চাওয়ায় বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় যশোর শহরের কাঁঠালতলার আবাসিক এলাকার একটি বাসায় এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় সোমবার রাত ১টায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নেছার বাদী হয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন- সাংবাদিক আলমগীর কবীরের স্ত্রী তানিয়া আলম (৩৫), ফরিদ (২৫), ফারুক (২৫), বাচ্চু (৩০), বেলো (২৪), লুত্বসহ (৩০) অজ্ঞাতনামা ২-৩ জন। অভিযুক্ত তানিয়াকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টিউশনির পাওনা ১৬ হাজার টাকা চাওয়া নিয়ে মারধরের খবর পেয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে গেলে তার সহপাঠীদের উপরও হামলা চালানো হয়। এর পরপরই শহর ও ক্যাম্পাস থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে আসেন। তারা বিচারের দাবিতে ওই সাংবাদিকের বাড়ির সামনেই বিক্ষোভ শুরু করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরে যশোরের ৫৫ পদাতিকের সেনাবাহিনীর একদল সদস্য এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। এ সময় অভিযুক্ত তানিয়া আলমকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, বর্তমানে তারা যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী এজহারে বলেন, আমি আসামি তানিয়া আলমের বাড়িতে তার মেয়েকে প্রাইভেট পড়াই। পড়ানো বাবদ ১৬ হাজার টাকা পাই। অনেকবার চাওয়ার পরও তিনি আমাকে বিভিন্ন কথা বলে পাওনা পরিশোধ করেননি। একপর্যায়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার সময় আমি, আমার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস রিসা ও আমার বন্ধু শান্ত (২২) আসামি তানিয়ার বাড়িতে যাই। পরে তানিয়া আমাকে আট হাজার টাকা দিতে চাইলে তাকে বলি আমার পাওনা সব টাকা দিতে হবে, নয়তো আমি টাকা নেব না। তখন আসামি তানিয়ার সঙ্গে আমার তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। একপর্যায়ে আসামিরা আমাকে এবং আমার বন্ধু শান্তকে অবৈধভাবে আটকে রেখে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়িভাবে মারধর করে।
এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে ইইই বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ইমরান খান, ড. মো. আমজাদ হোসেন, ড. মো. মজনুজ্জামান, শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের বোরহানুল আসফিয়াসহ আরও কয়েকজন শিক্ষক উপস্থিত হন।
ইইই বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ইঞ্জি. ইমরান খান বলেন, আমি এই ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। যে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে আমরা এই নতুন বাংলাদেশ পেলাম তাদের কৃতজ্ঞতা না জানিয়ে তাদের ন্যায্য পাওনা থেকেই বঞ্চিত করা হচ্ছে। ন্যায্য টিউশনির পাওনা টাকা চাইতে গেল আমার ছাত্র-ছাত্রীর ওপর সন্ত্রাসী লেলিয়ে দেয় কোন সাহসে? আমি জানতে পেরেছি এই বিষয়ে মামলা হয়েছে। আশা করব অতিদ্রুত অভিযুক্ত সবাইকে আইনের আওতায় এনে প্রশাসন যেন শাস্তি নিশ্চিত করে। আর একজন শিক্ষক হিসেবে যবিপ্রবি প্রশাসনকে অনুরোধ করব যেন আমার আহত ছাত্র-ছাত্রীদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করে এবং অভিযুক্তদের দ্রুত বিচারের আওতায় নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নেছার বলেন, আমাকে বিভিন্ন রড, পাইপ, কাঠের বাটম দিয়ে পিটিয়েছে ওরা। আমার শরীরের হাত, পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে কালশিটে হয়ে গেছে। আমি আমার ন্যায্যবিচার ও পাওনা টাকা চাই।
অভিযুক্ত তানিয়া গ্রেপ্তারের পূর্বে সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের পারিবারিক সমস্যার কারণে তাকে প্রতি মাসে বেতন দিতাম না। প্রথমে তিন হাজার টাকা ছিল, পরে একটা সাবজেক্ট বেশি পড়াতে বললে ছয় হাজার টাকা দাবি করে। পরে সে চার হাজার টাকায় রাজি হয়। সে অনুযায়ী গত দুই মাসের বেতন পেত আট হাজার টাকা। কিন্তু চলতি মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত পড়িয়ে পুরো মাসের বেতন দাবি করে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আমার ওপর চড়াও হয়। এ সময় বাড়ির সামনে কে বা কারা তাদের মেরেছে আমি তাদের চিনি না।
মামলার বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মামলা হওয়ার পর ১নং আসামি তানিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরই মধ্যে তাকে কোর্টে চালান করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে আমাদের চেষ্টা চলমান রয়েছে।
মন্তব্য করুন