নোয়াখালী ব্যুরো
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

এক কমেন্টেই শিক্ষা জীবন শেষ নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীর 

সংবাদ সম্মেলনে কান্নায় ভেঙে পরেন নোবিপ্রবি শিক্ষার্থী। ছবি : কালবেলা
সংবাদ সম্মেলনে কান্নায় ভেঙে পরেন নোবিপ্রবি শিক্ষার্থী। ছবি : কালবেলা

সাময়িক বহিষ্কার করে পাঁচদিনের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে দীর্ঘ চার বছর ক্লাসে ফেরার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ তুলেছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ফয়েজ আমহেদ।

রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিকভবনের সামনে সাংবাদিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এদিন দুপুরে নিজ পরিবারসহ সাংবাদিক সম্মেলনে ফয়েজ আহমেদ নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া দুর্বিষহ কাহিনী তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ১৪ অক্টোবর ২০২০ সালে মুহম্মদ মুমিন আদদ্বীন নামক একটি আইডি থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ নামক একটি গ্রুপে নোবিপ্রবির বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ভিপি নুরের ছবি এডিট করে পোস্ট করেন। সেই পোস্টটি সমালোচনা করে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি শাহরিয়ার নাসের আবার পোস্ট করে। সেখানে আমি কমেন্ট করে বলি এখানে দুঃসাহসের কিছু তো দেখছি না। এই একটি কমেন্টের কারণে আমাকে জেল জুলুম খাটিয়েও বেআইনিভাবে ক্লাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

ফয়েজ জানায়, পরে কোনো তদন্ত না করে ঐদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তর সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আমাকে সাময়িক বহিষ্কার দিয়ে পাঁচদিনের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এই ঘটনায় শিক্ষা বিভাগের চেয়ারম্যান বিপ্লব মল্লিককে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

যেখানে সদস্য হিসেবে ছিলেন তৎকালীন প্রক্টর নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ফিরোজ আহমেদ, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক আফসানা মৌসুমী, ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলের প্রভোস্ট আনিসুজ্জামান রিমন এবং সদস্য সচিব হিসেবে ছিলেন, নোবিপ্রবি বিএনসিসির পিইউও এ কিউ এম সালাউদ্দিন পাঠান।

১৬ অক্টোবর নোবিপ্রবি ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেতা প্রিতম আহমেদ বাদী হয়ে আমার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুকে অবমাননার মামলা দায়ের করে। যেখানে সাক্ষী হিসেবে ছিল তৎকালীন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার নাসের, শিক্ষা প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সজিব এবং বিএমএস বিভাগের শিক্ষার্থী ও পরবর্তীতে ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির। দীর্ঘ চার মাস আমি কারাগারে থেকে পরবর্তীতে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে জামিন পেয়ে বের হয়ে আসি।

ফয়েজ অভিযোগ করে বলেন, আমি কারাগারে থাকা অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাকে কোনো সাহায্য সহযোগিতাতো করেনি বরং আমার পরিবারকেও নানাভাবে হেনস্তা করেছে। কারাগারে থাকা অবস্থায় ১৯ অক্টোবর ২০২০ তারিখে আমার পরিবারের পক্ষ থেকে আমার বড় ভাই রাজু আহম্মদ বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করে। কিন্তু সেই প্রত্যাহার আবেদনটি রেজিস্ট্রার বরাবর ফরওয়ার্ডিং করতে বাধা দেয় আইন বিভাগের চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া।

পরে প্রায় প্রতিদিনই আমার পরিবার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করত কিন্তু আমার নিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ফরওয়ার্ডিং না দিয়ে উল্টো আমার পরিবারকে হেনস্তা করেছিল।

তিনি বলেন, আমি যখন কারাগার থেকে বের হই, ক্লাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য আমি এবং আমার পরিবার প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে যেতাম। তারা বলত, তোমার বিভাগের চেয়ারম্যান অনুমতি দিলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আবার যখন চেয়ারম্যানের কাছে যেতাম তখন তিনি বলতেন আমার হাতে কিছু নেই। বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের বিষয়ে কোনো আপস আমি করতে পারব না।

ফয়েজ বলেন, এভাবে দীর্ঘ চার বছর নানাভাবে চেষ্টা করেও আজ পর্যন্ত ক্লাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারিনি আমি। আমার সহপাঠীরা যখন ক্লাস করত তখন আমি চেয়ারম্যানের অফিসে বসে বসে চোখের পানি ফেলতাম। আমার বাবা একজন আলেম মানুষ, আমার ভাই শিক্ষক। তারা আমার পরিবারকে দিনের পর দিন লাঞ্চিত করত। আইন বিভাগের চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া আমার পরিবারকে নানাভাবে হেনস্তা করত। আজকে পড়ালেখা করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। মিথ্যা মামলা এবং হয়রানির কারণে ঋণে জর্জরিত হয়ে আমার পরিবার আজ নিঃস্ব হয়ে গেছে।

ফয়েজ তার সঙ্গে করা অন্যায়ের বিচার চেয়ে বলেন, আমি এর বিচার চাই। নোবিপ্রবি প্রশাসন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে আমার সঙ্গে এবং আমার পরিবারের সঙ্গে ঘটা অন্যায়ের বিচার চাই।

অভিযোগের বিষয়ে আইন বিভাগের চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। প্রথমত বহিষ্কার করা এবং ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ড এবং একাডেমিক কাউন্সিলের হাতে। সেখানে চেয়ারম্যান হিসেবে তার ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছি আমি। কিন্তু মামলা চলায় অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল তা আমলে নেয়নি।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক শিক্ষা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বিপ্লব মল্লিক বলেন, এতদিন আগের ঘটনা এখন মনে পড়ছে না। এর বাইরে কোনো কথা বলতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চাকরি দেবে আগোরা, সপ্তাহে ২ দিন ছুটি

শীতে জবুথবু কুড়িগ্রাম

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি সত্ত্বেও কৃষি উৎপাদন ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়েছে : রাষ্ট্রদূত

পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূতের বৈঠক, কী আলোচনা হলো?

‘ভুয়া সংবাদ’ ধরিয়ে দেবে যে টুল

ঈদে আসছে জুয়েলের পিনিক

বায়ু দূষণের শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার খবর কী

‘জনগ‌ণের সম্পদ খাওয়া আর জাহান্না‌মের আগুন খাওয়া সমান’

কমছে তাপমাত্রা, শীত জেঁকে বসবে কবে?

‘আ.লীগ নির্বিচারে মানুষ মেরে রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে’

১০

তারেক রহমান সবসময় পাশে আছেন, থাকবেন : মীর হেলাল

১১

দশ দিনেও মুক্তি মেলেনি ৪ বাংলাদেশির

১২

আজ টিভিতে যেসব খেলা দেখা যাবে

১৩

ছাত্রদল নেতাকে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে

১৪

লেবাননে এক দিনে নিহত ৫৯

১৫

টাইম জোনের ধারণা এসেছে যেভাবে

১৬

সরকারের চাপে বাধ্য হয়ে ওজন কমালেন ৫৪২ কেজি

১৭

উত্তর আফ্রিকার মুসলিম দেশে নজর জিনপিংয়ের

১৮

‘উন্নয়নের নামে লুটপাট করেছে আ.লীগ সরকার’

১৯

২৩ নভেম্বর: ইতিহাসের আজকের এই দিনে

২০
X