যবিপ্রবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

যবিপ্রবি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঢাবি শিক্ষার্থীকে হত্যাচেষ্টা মামলা

যবিপ্রবি কর্মকর্তা সাইফুর রহমান । ছবি : কালবেলা
যবিপ্রবি কর্মকর্তা সাইফুর রহমান । ছবি : কালবেলা

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) কর্মকর্তা সাইফুর রহমানের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) তৎকালীন পাঁচ শিক্ষার্থীকে হত্যাচেষ্টার মামলা করা হয়েছে। অভিযুক্ত সাইফুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের সংস্থাপন প্রশাসন-১ কর্মরত কর্মকর্তা এবং তৎকালীন ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক।

গত ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের শাহবাগ থানায় ভুক্তভোগী ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মাসরুর, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বাপ্পি মিয়া, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ইবরাহীম হোসেন, মেহেদী হাসান এবং আবদুল গাফফারের পক্ষে মাসরুর বাদী হয়ে এ হত্যাচেষ্টা মামলা করেন।

মামলার আসামিরা হলেন- হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমানে যবিপ্রবির কর্মকর্তা মো. সাইফুর রহমান, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী, একই হলের শিক্ষা ও পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদক এসএম খালেদ চৌং, সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ আশিকুর রহমান, সাবেক দপ্তর সম্পাদক মেহেদী হাসান মিজান, সাবেক সহসম্পাদক হাসিবুল আলম সৌরভ, সাবেক ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন, সাবেক পাঠাগার সম্পাদক শেখ আরিফুল ইসলাম,

সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত ইমতিয়াজ, সাবেক সহসম্পাদক নাঈম আহমেদ, সাবেক উপ-ছাত্র ও বৃত্তিবিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দিন এবং সাবেক উপপ্রচার সম্পাদক ইমরান হাসান।

এজাহারে মামলার বাদী মাসরুর অভিযোগ করেন, তৎকালীন মুহসীন হল ছাত্রলীগের উল্লিখিত ৪ থেকে ১৩নং আসামিরা আমাদের নামের লিস্ট করে ‘শিবির ট্যাগ’ দিয়ে তৎকালীন মুহসীন হল ছাত্রলীগ সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম, সেক্রেটারি মেহেদী হাসান সানি ও ঢাবি আইন সম্পাদক মো. সাইফুর রহমানের কাছে তালিকাটি পাঠান।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ১৬ আগস্ট রাত ১১টায় এজাহারভুক্ত আসামিরা আমাকে ডাকতে এসে এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করে। রগ কাটার জন্য পাশের রুম থেকে ছুরি নিয়ে আসে। চিৎকার যাতে বাইরে না যায় সেজন্য উচ্চশব্দে সাউন্ড বক্স মিউজিক বাজিয়ে দেওয়া হয়। আমাকে মারতে মারতে একজন ক্লান্ত হয়ে পড়লে আরেকজন আসে, সে জিরিয়ে নিলে আরেকজন আসে। এভাবে দীর্ঘসময় ধরে আমাকে মারতে থাকে।

একপর্যায়ে আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গা ফেটে গিয়ে রক্ত ফ্লোরে টপ টপ করে পড়তে থাকে। আজরাইল আসন্ন মনে করে আমি কালেমা পড়তে থাকি। এভাবে নানান মধ্যযুগীয় কায়দায় এজাহারভুক্ত আসামিরা অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন চালায়। এরপর তারা আমাদের মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে টেনে হলগেটে ফেলে রাখে।

এ সময় সাংবাদিকরা এলে তাদের সঠিক তথ্য নিতে বাধার সৃষ্টি করে। আসামি জহির ও সানি পুলিশকে কল দেয়। পুলিশ এসে আমাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ঢামেকে আমাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখান থেকে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের সহযোগিতায় মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিই। প্রাণনাশের হুমকির কারণে মুগদা মেডিকেল থেকে সম্পূর্ণ চিকিৎসা সম্পন্ন না করেই বাড়ি চলে যেতে বাধ্য হই।

আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত ও ক্ষতের চিহ্ন এখনো বয়ে বেড়াচ্ছি। এই মর্মান্তিক নির্যাতনের ঘটনা আমার জীবনটাকে এলোমেলো করে দিয়েছে। তৎকালীন মুহসীন হলের প্রভোস্ট নিজামুল হক ভূঁইয়া, ভিসি মো. আখতারুজ্জামান ও প্রক্টর এএম আমজাদ আমাদের নির্যাতনের বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

ভুক্তভোগী ও মামলার বাদী মাসরুর বলেন, এ ঘটনার পরপরই আমার বাবা স্ট্রোক করেন। আমিসহ আমার পরিবার আর্থিক, শারীরিক, মানসিকভাবে প্রচুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ভার্সিটিতে আমার সঙ্গে কাউকে কথা বলতে দেওয়া হতো না, আমাকে সবার থেকে একদম একা করে দেওয়া হয়েছিল।

আমি এখনো সে রাতের ক্ষত-যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছি, আমরা একপ্রকার পঙ্গু হয়ে গেছি। সেদিন রাতে মরে গেলে, আবরার ফাহাদের মৃত্যুর মতো আমার মৃত্যু নিয়েও হয়তো নিউজ হতো, ছাত্রসমাজ সোচ্চার থাকত। আমাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

এ বিষয়ে যবিপ্রবির কর্মকর্তা ও ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক মো. সাইফুর রহমান কালবেলাকে বলেন, আমি ২০০৯-১০ সেশনে ঢাবিতে ভর্তি হই। ২০১৬ সালে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি হয়, তখন তৎকালীন ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহের হোসেন প্রিন্সের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো থাকায় ২০১৬ সালে আমি ঢাবি ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক হই।

২০১৭ সালের যে ঘটনায় আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার সঙ্গে আমার ন্যূনতম সম্পৃক্ততা নেই। আমি সরকারি চাকরি করি বিধায় সম্মান ক্ষুণ্ন করার জন্য আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করা হয়েছে।

মামলার তদন্ত প্রসঙ্গে এসআই সোহেল সিদ্দিক বলেন, আমরা ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি এবং ঘটনার সাক্ষীও রয়েছে। আমরা অভিযুক্তদের কাউকে এখনো আটক করতে পারিনি। তবে দ্রুত আটক করার চেষ্টা চলছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রোহিত-কোহলিদের সফরে পরিবারের উপস্থিতি সীমিত করছে বিসিসিআই

বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

সংস্কার প্রস্তাব জমা দিয়েছে চার কমিশন

তল্লাশির সময় পুলিশের ওপর হামলা, গ্রেপ্তার ২

ম্যানসিটির শিরোপা বাতিল হলে পার্টি দিবেন ক্লপ

শিশু বলাৎকারের অভিযোগে সেই বিএনপি নেতা বহিষ্কার

সেন্টমার্টিনে আগুনে পুড়ল রিসোর্ট

সালমান-পলক ফের রিমান্ডে

কয়রার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে হলদে ফুলের সমাহার

উইজডেনের বর্ষসেরা ওয়ানডে একাদশে জায়গা পেলেন তাসকিন

১০

টিউলিপের পতনের ঘণ্টা বেজেছিল ১২ বছর আগেই, নেপথ্যে একটি ছবি

১১

খালেদা জিয়ার মামলা আগেই বাতিল হওয়া উচিত ছিল : দুদকের আইনজীবী

১২

মাটির নিচ থেকে ভেসে আসছিল নবজাতকের কান্না, অতঃপর...

১৩

সারজিস আলমসহ ৪৫ জনের পাসপোর্ট জব্দের তথ্যটি গুজব 

১৪

সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে মামলা

১৫

আপিল না করেও খালাস পেলেন তারেক রহমান 

১৬

মালয়েশিয়ার মেঘের রাজ্য ক্যামেরন হাইল্যান্ড

১৭

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াসহ সব আসামিকে খালাস

১৮

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন / নিজেদের স্বার্থে টিউলিপকে ব্যবহার করে লেবার পার্টি

১৯

সাবেক প্রেমিকের ছুরিকাঘাতে বর্তমান প্রেমিক ‍নিহত

২০
X