ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বঙ্গ মার্কেটে দুই সাংবাদিকের ওপর চাঁদাবাজদের হামলা

আহত সাংবাদিক সাদী ভূঁইয়া ও নাহিদ সাব্বির। ছবি : কালবেলা
আহত সাংবাদিক সাদী ভূঁইয়া ও নাহিদ সাব্বির। ছবি : কালবেলা

রাজধানীর বঙ্গবাজারে কাপড় দেখতে গিয়ে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের প্রতিবাদ করায় হামলার শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া ও জাগো নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের স্টাফ রিপোর্টার নাহিদ সাব্বিরসহ কয়েকজন।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর বঙ্গ মার্কেটের বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটের দোতলায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাদের সামনে দ্বিতীয় দফায় সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

তাদের দোকানে ডেকে নিয়ে কাউন্সিলর রোকসানা ইসলাম চামেলীর অনুসারীরা হাতুড়ি, রড, জিআই পাইপ দিয়ে হামলা করে রক্তাক্ত করে। এ ঘটনায় এক শিক্ষার্থীর আঙুল কেটে ফেলা হয় এবং এক ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন। গুরুতর অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন- শাহবাগ থানার ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রোকসানা ইসলাম চামেলির স্বামী আবুল হোসেন টাবু ও বিএনপির পদপ্রত্যাশী নেতা রফিকুল ইসলাম স্বপন, শাহবাগ থানার ২০নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ ইউসুফ।

জানা গেছে, সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়াকে কক্ষের মেঝেতে ফেলে মাথায়, পিঠে, কোমরে, পায়ে উপর্যুপরি আঘাত করা হয়। তার সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

অন্যদিকে জাগো নিউজের রিপোর্টার নাহিদকে দোতলায় মারার পর ছাদে তুলে পেটানো হয়। তিনি বাম পায়ে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং এক শিক্ষার্থীর ডান হাতের একটি আঙুলের অগ্রভাগ কেটে ফেলা হয়।

মারধরের একপর্যায়ে আল সাদীর মোবাইল ছিনতাই করে আক্রমণকারীরা। এছাড়া, নাহিদের মোবাইল, মানিব্যাগ, বাইকের চাবি, প্রেস আইডি কার্ড ছিনিয়ে নেয় তারা।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আল সাদী ভূঁইয়া বলেন, আমি এবং আমার সাবেক কলিগ নাহিদ ভাই বঙ্গবাজারে বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটে কাপড় দেখতে গিয়েছিলাম। তখন মার্কেটের মালিক পক্ষের কেউ আমাদের চিনতে পেরে বলে, সজল ভাই উপরে আছেন। তখন আমরা উপরে গিয়ে দেখি একটা পক্ষ দরজা ভাঙচুর করছে। তারা মার্কেটের অন্য পক্ষের লোক। তাদের নেতৃত্বে রয়েছে কাউন্সিলর চামেলির ভাই স্বপন ও স্বামী টাবু।

তিনি বলেন, আমরা যখন সজল ভাইয়ের অফিসে যাই তখন টাবু ও স্বপনের নেতৃত্বে উপস্থিতরা আমাদের সবার উপর হামলা করা হয়। আমরা সিন্ডিকেটের প্রতিবাদ করায় আমাদের উপর তারা হামলা করে। এমনকি আমরা সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও আমাদের ওপর বেশি করে আঘাত করে। বের হয়ে আমরা পুলিশ নিয়ে আসি। পুলিশের সামনেও তারা আমাদের মারার চেষ্টা করে কিন্তু পুলিশ আমাদের কোনো সাহায্য করেনি।

নাহিদ সাব্বির বলেন, আমাদের মার্কেটের গেট ভেঙে হামলা করেছে। এ সময় সেনাবাহিনীকে ফোন দিয়েও কোনো রেসপন্স পাইনি। সাংবাদিক পরিচয় দিয়েছিলাম তবুও ছাত্রলীগ বলে পিটিয়েছে আমাদের। আমার ফোন, মানিব্যাগ এবং আইডি কার্ড সব নিয়ে গেছে তারা।

তিনি বলেন, পরবর্তীতে রুম থেকে বের করে এনে ছাদে নিয়ে গিয়ে দেশীয় অস্ত্র ও জিআই পাইপ দিয়ে আবার মেরেছে। একপর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম। তাদের কাছে পানি চেয়েছি কিন্তু পানি পর্যন্ত দেয়নি তারা। তারা বলছিল, আমাকে পানি খাওয়ালে আমি নাকি আবার সুস্থ হয়ে যাব। এই বলে আমার সারা শরীরে আঘাত করেছে। দুর্বৃত্তদের মধ্যে একজন বলছিল, এ জ্ঞান হারানোর অভিনয় করছে, একে আবার মারা হোক। এই বলে তৃতীয় ধাপে আবার মারধর করছে। তারা আমার ম্যানিব্যাগ, প্রেস কার্ড, আইডিকার্ড নিয়ে যাওয়ার সময় বলছিল, এগুলো স্বপন ভাইয়ের কাছে জমা দিব। স্বপন হলো বিএনপির নেতা।

মার্কেটের ব্যবসায়ী বাধন বলেন, এই মার্কেটে আমার দোকান আছে। আমি মালিকের (সজলের) সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তখন মালিকের আরেক পক্ষ যারা আওয়ামী লীগ করত তারা দরজা ভেঙে আমাদের ওপর হামলা করে। প্রাণ বাঁচাতে আমরা কয়েকজন বাথরুমে অবস্থান নিলে তারা দরজা ভেঙে হাতুড়ি, রড, জিআই পাইপ দিয়ে হামলা করে।

তিনি বলেন, টাবু আওয়ামী লীগ করে। তার শেল্টারে তার আপন ভাই ইউসুফ এতদিন ব্যবসা করে আসছে। সে বিএনপিতে নাম লিখিয়ে রাখছে যেন বিএনপি ক্ষমতায় এলে একটা পজিশন তৈরি করতে পারে। তারা একজন আওয়ামী লীগ, আরেকজন বিএনপি করে। তারা একে অপরকে রক্ষা করে।

ঘটনার একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম। তারা সেখানে সাংবাদিকদের রক্ষা করতে পুলিশকে আহ্বান জানান।

সারজিস আলম বলেন, আমরা আজকে সাংবাদিকসহ অন্যদের উপর বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। এই সিন্ডিকেট যারা আজকে সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী ব্যবসায়ীদের উপর হামলা করেছে তাদের আমরা ছাড় দেব না। আজকের পর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ ছাত্র-জনতা তাদের শক্ত হাতে প্রতিহত করবে।

এদিকে, এ হামলার প্রতিবাদে ও হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রাত সাড়ে ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, তারিকুল ইসলাম, হাসিব আল ইসলামসহ অনেকেই বক্তব্য দেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সোমবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

সড়ক দুর্ঘটনায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিহত

‘নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না বিএনপি’

যমুনার ভাঙন রোধে গ্রামবাসীদের মানববন্ধন

মশা মারতে জিরো টলারেন্সে চসিক, খোঁজা হচ্ছে নতুন ওষুধ

নোবিপ্রবির সঙ্গে নেদারল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি সই

সিলেটে ফের প্রায় কোটি টাকার চোরাই পণ্য জব্দ

এটিএম বুথে ঢুকে নারীর ভয়াবহ কাণ্ড

৩০ মিনিটের ব্যবধানে ৯ বাসায় চোরের হানা

কাতারকে চাপ দিয়ে বেকায়দায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন

১০

ময়মনসিংহে শিক্ষার্থীর ওপর হামলা, ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

১১

ছাত্র আন্দোলনে হামলার উসকানি / বশেমুরবিপ্রবি উপ-রেজিস্ট্রারকে ডিবিতে সোপর্দ

১২

এবার কর্ণফুলী থেকে যুবকের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার

১৩

চট্টগ্রামে জসিম খুনের ঘটনায় বড় সোহাগ গ্রেপ্তার

১৪

‘ঘুমের ওষুধ খাইয়েও ঘরে রাখা গেল না রাব্বিকে’

১৫

সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কি এমপির সাক্ষাৎ

১৬

‘সুযোগ পেলেই সে আমাকে ও আমার মেয়েদের কুপ্রস্তাব দেয়’

১৭

রাবিতে বিভিন্ন অপরাধে শাস্তি পেলেন যারা

১৮

শখের বসে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত

১৯

পুলিশ অপ্রয়োজনীয় শক্তি প্রদর্শন করবে না : সিটিটিসি প্রধান

২০
X