বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ও নিহতদের তালিকা তৈরির জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কয়েকজন শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে ‘রেড জুলাই’ নামে একটি পোর্টাল উন্মোচন করা হয়েছে। যেখানে আন্দোলনে হতাহতের পাশাপাশি মেডিকেল সার্টিফিকেট, ডেথ সার্টিফিকেট, ঘটনার বিবরণ, ছবি-ভিডিও ইত্যাদি ডকুমেন্ট পাওয়া যাবে।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ওয়েবসাইটটি উন্মোচন করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আহসান লাবিবের সঞ্চালনায় মালিহা নামলাহ বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পরও আমরা শহীদদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন করতে পারিনি। এতে করে অনেক সুবিধাভোগী শ্রেণি মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে সুবিধা পেয়েছেন। আবার অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছেন, যারা কোনো সুবিধা পাননি। এ আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, হতাহত হয়েছেন প্রত্যেকের ঘটনা বা গল্প আলাদা। এর মাধ্যমে আমরা আহতদের যথাযথ তথ্য পাব। সরকার যখন সুবিধা দেবে তখন সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আরিফ সোহেল বলেন, ঢাকায় জাহাঙ্গীরনগর ছিল আন্দোলনের সূতিকাগার। ১৫ জুলাই ঢাকার অন্যান্য ক্যাম্পাসে যখন হামলা হয়, জাহাঙ্গীরনগর ছাত্রদের সংঘটিত করে প্রথমবারের মতো প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যৌথ উদ্যোগে আমরা সারা দেশ থেকে তথ্যগুলো সংগ্রহ করে দীর্ঘমেয়াদে সরকারি-বেসরকারি সহায়তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আবু সাঈদ মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২৪ এর যে গণঅভ্যুত্থানে যে সমস্ত শিক্ষার্থীরা, নাগরিক, শ্রমজীবী মানুষ আহত ও নিহত হয়েছেন তাদের স্বরণীয় করে রাখতে আমাদের এ ‘রেড জুলাই’ ওয়েব পোর্টালের আয়োজন। আমরা ধাপে ধাপে ক্রস চেক করে আহত ও নিহতদের তালিকা সংগ্রহ করব। যেন কেউ ভুয়া তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করতে না পারে। এক্ষেত্রে আমরা হসপিটাল থেকে খোঁজ নিয়ে, পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সেই তথ্য ভেরিফাই করে ওয়েব পোর্টালে তুলে সংযুক্ত করব। এ ছাড়া আমরা পত্র-পত্রিকায় ও লাইভ নিউজগুলোতে যেসব আহত, নিহত, গুমের খবর এসেছে সেগুলোকে এভিডেন্স হিসেবে কালেক্ট করব।
গণকবরের তথ্য প্রাপ্তির বিষয়ে অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু বলেন, আমরা গণকবর এর সঠিক তথ্য নিতে পত্র-পত্রিকার করা প্রতিবেদনের সাহায্য নেব। পাশাপাশি কেউ যদি তার পরিচিত কারও নিখোঁজ হওয়ার দাবি করে তখন আমরা সেটি তাদের পরিবার পরিজন প্রতিবেশীদের কাছ থেকে তথ্য কালেক্ট করে যাচাই করব এবং এই ওয়েব পোর্টাল এ গণকবর সম্পর্কিত সাইট চালু করব। যদি কোনো গণকবর এর ঠিকানা পাওয়া যায় এবং সেটি ফরেনসিক বিভাগের রিপোর্টের মাধ্যমে উঠে আসতে পারে।
অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, আমরা এই ওয়েবসাইটটি প্রস্তুত করছি যেন আজ থেকে ১০ বছর পর কেউ হঠাৎ করে বলতে না পারে যে আমি ওই আন্দোলনে যুক্ত হয়ে আহত হয়েছিলাম।
অধ্যাপক সেলিম বলেন, এই ৩৬ দিনের ছাত্র আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যারা আহত, নিহত হয়েছে তাদের তথ্য তুলে আনার জন্য এই ওয়েব পোর্টাল কাজে লাগবে। পাশাপাশি ছাত্রদের যে আন্দোলনের কারণে স্বাধীন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে সেটি সুন্দরভাবে গঠনের জন্য ছাত্রদের সুযোগ দিতে হবে।
সমাপনী বক্তব্যে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু বলেন, এই ওয়েব পোর্টাল এর আইডিয়া ছাত্রদের মাঝ থেকে এসেছে। আমিও বলছিলাম, ডকুমেন্টেশন জরুরি। আমরা প্রত্যেকটা ঘটনা থেকে কেইস স্টাডি রেখেছি, গুম, খু্নের পেছনের গল্প তুলে ধরার চেষ্টা করব। আশা করি আন্দোলনে যারা আহত ও নিহত হয়েছেন, রাষ্ট্র তাদের দায়িত্ব নেবে।