বন্যাকবলিত কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে বিনামূল্যে নাবি আমন ধানের চারা বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (৩১ আগস্ট) এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে দ্বিতীয় দিনের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের খামার ব্যবস্থাপনা শাখার দেড় একর জমিতে বিনা ধান-১৭ এর ৬০০ কেজি বীজ বপন করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের এ উদ্যোগকে সফল করতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং শিক্ষার্থী, বিভিন্ন এলাকার কৃষি উদ্যোক্তা, বীজ কোম্পানি এবং করপোরেট ব্যক্তিদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে ‘অ্যাগ্রি স্টুডেন্ট’স অ্যালায়েন্স বিডি’।
‘অ্যাগ্রি স্টুডেন্ট’স অ্যালায়েন্স বিডি’-এর উদ্যোগে এবং ‘কৃষিবিদ ফাউন্ডেশন ফর হিউম্যানিটি’-এর আর্থিক সহযোগিতায় বন্যার্ত কৃষকদের মাঝে ধানের চারা ও কৃষি উপকরণ সরবরাহের সব কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত ‘কৃষিবিদ ফাউন্ডেশন ফর হিউম্যানিটি’-এর পক্ষ থেকে ২ লাখ টাকা আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) ময়মনসিংহ শাখা ১ টন, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) চাঁপাইনবাবাগঞ্জ শাখা থেকে ১৫০ কেজি, বায়ার বাংলাদেশ থেকে বিনামূল্যে ৫০০ কেজি বিনা ধান-১৭ এর বীজ সংগ্রহ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী বকুল আলী বলেন, কৃষির সঙ্গে, কৃষকের সঙ্গে সর্বাত্মক সম্পর্ক থাকা উচিত কৃষিবিদদের। কৃষিবিদ হিসেবে কৃষকের বিপদে এগিয়ে আসা আমাদের দায়িত্ব। সে দায়িত্ব থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ একর, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ একর, চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে ৪ একর ও লক্ষ্মীপুরে ২ একরসহ মোট ১২ একর জমিতে নাবি আমন ধানের চারা উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি আমরা। উৎপাদিত চারাগুলো আমরা বন্যাকবলিত কৃষকদের মাঝে বিতরণ করব।
বীজ বপন কর্মসূচি চলাকালীন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মাঠে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শহীদুল হক, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ মো. হেলাল উদ্দীন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকার, কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. মশিউর রহমান ও অধ্যাপক আহমদ খায়রুল হাসান, কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেনে হাওলাদার, খামার ব্যবস্থাপনা শাখার প্রধান তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) মো. জিয়াউর রহমান প্রমুখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ‘কৃষিবিদ ফাউন্ডেশন ফর হিউম্যানিটি’-এর সদস্যরা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি শিক্ষার্থী এবং মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, নেত্রকোনা শাখার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান কালবেলাকে বলেন, চারা উৎপাদন থেকে শুরু করে সব ধাপেই একটি পরামর্শ প্রদানকারী দল কাজ করবে। ধানের ক্ষেত্রে বড় একটি সমস্যা হলো চিটা হয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে যদি জমিতে বোরন যুক্ত সার প্রয়োগ করা যায় তাহলে চিটা হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে। অন্তত ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ উৎপাদন থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
উপস্থিত শিক্ষকরা বলেন, এই ১২ একর জমিতে উৎপাদিত চারা দিয়ে ৭৬০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করা যাবে, যা প্রায় সহস্রাধিক কৃষকের মাঝে বিতরণ করা সম্ভব হবে।
মন্তব্য করুন