রাজধানীর আইডিয়াল মডেল স্কুলের ২য় শ্রেণির ছোট্ট শিক্ষার্থী জান্নাতুল আদানী ও গ্রিন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ২য় শ্রেণির ছোট্ট শিক্ষার্থী রাইয়াত হোসেন। নিজের ব্যক্তিগত জমানো টাকা বন্যাকবলিত মানুষের জন্য দান করতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন। মঙ্গলবার উভয়ই তাদের মাকে সঙ্গে নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শহীদ সাজিদ একাডেমিক ভবনের নিচে জবি শিক্ষার্থীদের বসানো বুথে এসে টাকা জমা দেন।
শুধু আদানী ও রায়য়াতই নয়, এভাবে আরও অনেক শিশু নিজের ব্যক্তিগত ব্যাংকে জমানো টাকা বন্যার্তদের দান করছেন।
শনিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে নিজের জমানো ২ বছরের টাকা বন্যার্তদের দেন ছোট্ট শিশু সাফওয়ান। ৬ বছরের ছোট্ট শিশু সাফওয়ান তার মাকে নিয়ে এসে ব্যক্তিগত প্লাস্টিকের ব্যাংকে জমানো ৫ হাজার ৬৪০ টাকা বন্যাকবলিত মানুষের জন্য দান করেন। ২য় শ্রেণিতে পড়ুয়া সাফওয়ান ত্রাণ সংগ্রহকারীদের নিকট নিজের বিস্তারিত পরিচয় দিতে অস্বীকৃতি জানান। তবে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে লৌকিকতা পরিহার করে নিঃস্বার্থভাবে সবাইকে দান করার আহ্বান জানান সাফওয়ান।
এর আগে শুক্রবার বিকাল সাড়ে চারটায় রুদ্র নন্দী নামে আরেক শিশু তার জন্মদিনের কেকের টাকা বন্যার্তদের জন্য দান করেন।
শিশু রাইয়াত হোসেন বলেন, বন্যার্তদের জন্য প্লাস্টিকের ব্যাংকে জমানো টাকা দান করছি। এই টাকা দিয়ে যদি একজন বন্যাকবলিত মানুষেরও সাহায্য হয়, তাহলেই আমি খুশি।
শিশু জান্নাতুল আদানী বলেন, অনেক আগে থেকেই আমি ব্যাংকে কয়েনগুলো জমাচ্ছিলাম। আজ (রোববার) সকালে মাকে বললাম, এই টাকাগুলো আমি বন্যাকবলিত অসহায় মানুষদের সাহায্যের জন্য দিয়ে আসতে চাই। এজন্য মায়ের সঙ্গে এখানে টাকাগুলো দিতে আসলাম।
ত্রাণ সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রাসেল বলেন, শিশুদের নিঃস্বার্থ দান আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণা। আমরা অনেকে এক লাখ টাকা ত্রাণ সংগ্রহ করছি। সেখানে ২০-৩০ হাজার টাকা খরচ করে ট্রাক নিয়ে নিজেরা বিতরণে যাচ্ছি। এতে সমন্বহীনতার কারণে অর্থ অপচয় হচ্ছে। কিন্তু সাফওয়ানসহ অন্য শিশুরা নিজের নামটাও প্রকাশ করতে চাচ্ছে না। এখনো যারা অর্থ সহায়তা দিতে কৃপণতা দেখাচ্ছে, তাদের জন্য শিশুদের আচরণ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
এদিকে রোববার বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত বন্যার্তদের সহযোগিতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ এবং কেন্দ্রীয়ভাবে প্রায় ৪১ লাখ টাকা ফান্ড সংগৃহীত হয়েছে। ত্রাণ সংগ্রহ এখনো চলমান রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের ত্রাণ সংগ্রহের তথ্য কেন্দ্রীয় ফান্ড সংগ্রহ টিমের কাছে পৌঁছেনি। ফলে পরিপূর্ণ হিসাব দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান কেন্দ্রীয় ফান্ড সংগ্রহ টিমের অন্যতম সদস্য পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা। তবে মোট হিসাব এক কোটি টাকা হবে বলে জানান মাসুদ রানা।