ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকার নীলক্ষেত হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সুরমান আলীর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং অনিয়মের অভিযোগে পদত্যাগের দাবি উঠেছে।
রোববার (২৫ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে তার পদত্যাগের দাবিতে স্কুল প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ শুরু করেন শতাধিক শিক্ষার্থী। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (পৌনে ১২টা) তাদের সেখানে অবস্থান করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
বিক্ষোভে অংশ নিতে ইমরান হোসাইন নামে স্কুলটির এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন, এমনকি গার্ডিয়ানদের সঙ্গেও। কিছুদিন আগেও আমাদের ব্যাচমেট একজনের হাত ধরেছেন। তিনি চোখও মেরেছেন একজনকে।
নুর ইয়াসিন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, উনি বহিষ্কৃত ছিলেন একসময়। এরপর আবার জয়েন করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে যে আচরণ করেন সেটা একজন শিক্ষকের আচরণ হতে পারে না। অভিভাবক যারা পর্দা করে আসেন তাদেরও মুখ খোলাতে বাধ্য করেন। তিনি তাদেরকে বলেন, আপনি অভিভাবক কিনা সেটা বুঝব কীভাবে? বিশ্বাস করি না। মুখ খোলেন। তার এ সমস্ত কাজের জন্য পদত্যাগ চাই।
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের প্রধান শিক্ষক তুচ্ছ কারণেই যে কোনো মুহূর্তে যে কাউকে বহিষ্কার করে দেন। একবার উপরের তলা থেকে নিচ তলায় আসার কারণে একজনকে টিসি দিয়েছেন তিনি। আমাদের ক্লাসের ফ্যান নেই, লাইট নেই, বাথরুমের অবস্থা খারাপ, পানির ট্যাংক ময়লায় ভরপুর, ক্লাসরুমের টেবিল-চেয়ার ভেঙে একাকার অবস্থা। এগুলো উনি ঠিক করেন না। স্কুলে খেলাধুলার সুযোগও দেন না তিনি।
স্কুলের এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, সুরমান স্যার মেয়েদেরকে টিজ করে, গায়ে হাত তুলে। এমনকি এক সিনিয়র আপুকে চোখও মেরেছে। তার চরিত্র ভাল নয়। আমাদের স্কুলের কম্পিউটার রুমের কম্পিউটারগুলো নষ্ট বহুদিন ধরেই, কোনো পদক্ষেপ উনি নেননি। আমরা উনার পদত্যাগ চাই।
এক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, একজন মানুষ আমাদের দিকে কীভাবে তাকায় সেটা কিন্তু আমরা বুঝতে পারি। উনার তাকানোও ভালো না। আমি পর্দা করি। কিন্তু স্কুলে আসার পর সবসময় উনার চাপে আমার মাস্ক খুলতে হয়, চেহারা দেখাতে হয়। এরকম কেন হবে? আমাদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় কেন হস্তক্ষেপ করা হবে একজন শিক্ষকের মাধ্যমে? উনি একটা স্বৈরাচার। আমরা উনার পদত্যাগ চাই।
আরেক নারী শিক্ষার্থী বলেন, আমরা যখন অ্যাসেম্বলি ক্লাস করি তখন তিনি গায়ে হাত তুলেন। আমাকে অ্যাসেম্বলি ক্লাসে তুচ্ছ কারণে থাপ্পড় মেরেছেন উনি। কথায় কথায় উনি মেয়েদের শরীরে হাত তুলেন। ক্লাসগুলোতে ফ্যান নষ্ট এবং লাইট নেই। এগুলোর প্রতি উনার কোনো নজর নেই।
আরেকজন বলেন, উনি গণিতের টিচার কিন্তু গণিত কিছুই পারেন না। শুধু যোগ-বিয়োগ করান। ক্লাস নাইনের অঙ্কই পারেন না। ক্লাসে গিয়ে শুধু স্কেল মাপেন।
এক অভিভাবক কালবেলাকে বলেন, আমাদের সন্তানদেরকে নিয়ে স্কুলে আসার পর আমরা একটু বসতে পারি না, আমাদের বসার জায়গার ব্যবস্থা নেই। বাচ্চাদের ক্লাসরুমেও ফ্যান নেই, তারা বসে থাকতে পারে না। প্রধান শিক্ষক এগুলোকে গুরুত্বই দেন না। তিনি অভিভাবকদের সঙ্গে সৌজন্যমূলক আচরণ করেন না এবং কয়েকজন মহিলা শিক্ষক রয়েছেন তারাও আন্তরিক নন।