মাসব্যাপী চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে কয়েক দফায় হামলার শিকার হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদকর্মীরা। কখনো ছাত্রলীগের ধারালো অস্ত্রের আঘাত আবার কখনো পুলিশের টিয়ারশেল-রাবার বুলেটে বিদ্ধ হয়েছেন তারা। সংবাদ করতে গিয়ে কেউ কেউ ফোন, মানিব্যাগও খুইয়েছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বারবার জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়েছে তাদের। সরকার পতনের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার আন্দোলন শেষ হলেও এখনো হামলার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব সংবাদকর্মীরা।
গত ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় ও দিবাগত রাতে ছাত্রলীগের বর্বরোচিত আক্রমণ এবং পরবর্তীতে পুলিশি হামলায় আহত হন মোট ১১ জন সংবাদকর্মী। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হন চারজন। ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে আহত হন ছয়জন সংবাদকর্মী। তাদের মোবাইল, সাইকেল, মানিব্যাগ নিয়ে যান বহিরাগতরা। এ ছাড়াও সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আন্দোলনকারীদের ছোড়া গ্লাসের আঘাতে আহন হন আরও এক সাংবাদিক। গুলিবিদ্ধরা ছাড়া বাকিরা চিকিৎসা গ্রহণ করে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসলেও এখনও হাসপাতালে নিয়মিত চেকআপ করতে হচ্ছে গুলিবিদ্ধদের। সেই আন্দোলনের কালোরাতের দুঃস্মৃতি থেকে কোনোভাবেই নিজেদের মুক্ত করতে পারছেন না তারা।
আহত সাংবাদিকরা হলেন বণিক বার্তার প্রতিনিধি মেহেদী মামুন, দৈনিক বাংলার প্রতিনিধি আব্দুর রহমান সার্জিল, দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিনিধি আরিফুজ্জামান উজ্জল, মানবজমিনের প্রতিনিধি মো. ইমরান হোসাইন, প্রথম আলোর প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুন, বিডিএন৭১ এর প্রতিনিধি রবিউল হাসান, ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধি জোবায়ের আহমেদ, দ্য সাউথ এশিয়ানের প্রতিনিধি সাকিব আহমেদ, দৈনিক যুগান্তরের প্রতিনিধি মোসাদ্দেকুর রহমান, বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিনিধি এস এম তাওহীদ, শেয়ার বিজের ওসমান সরদার, দৈনিক জনকণ্ঠের ওয়াজহাতুল ইসলাম, আমাদের সময়ের নোমান বিন হারুন ও সময়ের আলোর প্রতিনিধি মুশফিকুর রিজন।
গুলিবিদ্ধ বর্ণিক বার্তার প্রতিনিধি সাংবাদিক মেহেদী মামুন জানায়, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশ আমার ওপর সরাসরি গুলি চালায়। আমি বারবার সাংবাদিকতার কার্ড দেখালেও তারা বিরত থাকেনি। আমার শরীর ৩০টার উপরে ছররা গুলি লেগেছিল, এর মধ্যে ১৭টি বের করতে পেরেছি। বাকিগুলো শরীরে রয়ে গেছে। ডাক্তারের নিয়মিত চেকআপে রয়েছি।
গুলিবিদ্ধ দৈনিক বাংলার প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম বিভাগের ছাত্র আব্দুর রহমান খান সার্জিল বলেন, আমরা সাংবাদিকরা সবাই একদিকে ছিলাম। আমাদের লক্ষ করে পুলিশ ছররা গুলি ছুড়তে থাকে। এক পর্যায়ে আমি আহত হয়ে নিচে বসে পড়ি। পরবর্তী আমাদের উদ্ধার করে এনাম মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই আমরা চিকিৎসা নিতে থাকি। আমার পায়ে এখনো প্রায় ৭০’টির মতো ছররা গুলি রয়েছে। মাঝে মাঝে তীব্র ব্যথা করে। ডাক্তারের পরামর্শ মতো চিকিৎসা চলছে। হাঁটাচলায় কষ্ট হচ্ছে।’
মানবজমিনের প্রতিনিধি মো ইমরান হোসাইন বলেন, ওইদিন পুলিশ ও ছাত্রলীগ ধারালো অস্ত্র দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করছিলো। তখন ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে ছাত্রলীগের দ্বারা আক্রমণের শিকার হই। আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে যায়। যেটি আর ফেরত পাইনি। তবে শারীরিকভাবে এখন সুস্থ আছি।
আহত সাকিব আহমেদ সেই রাতে দুর্বিষহ স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, ওইদিন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। ছাত্রলীগের কিছু ভাড়া করা সন্ত্রাসী সাবেক প্রক্টর প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল হক ও পুলিশের সামনেই আমাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করলে আমার মাথা ফেটে রক্ত বের হতে থাকে। আমার মাথায় আটটি সেলাইয়ের প্রয়োজন হয়। এখন আমি শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ। তবে এখনো সেই রাতে দুর্বিষহ স্মৃতি মনে পড়লে হাত পা কেঁপে উঠে।