শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) উপাচার্যসহ দুই উপউপাচার্য, প্রক্টরিয়াল বডি, সকল আবাসিক হলের প্রাধ্যাক্ষরা, আবাসিক শিক্ষক, ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রেস প্রশাসক। এতে কার্যতই প্রশাসনশূন্য হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। স্থবির হয়ে আছে প্রশাসনিক কার্যক্রম।
ছাত্র জনতার কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তীতে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে গত সোমবার (৫ আগস্ট) আওয়ামী সরকারের পতন হয়।
এদিকে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়ে গত ১০, ১২ ও ১৩ আগস্টে একযোগে পদত্যাগ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের, দুই উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী (প্রশাসন), অধ্যাপক বেনু কুমার দে (অ্যাকাডেমিক), প্রক্টরিয়াল বডি এবং সকল আবাসিক হলের প্রভোস্টবৃন্দ, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আলী আজগর চৌধুরী, প্রেস প্রশাসক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম। এতে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক সকল পদ খালি হয়ে যায়।
এর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রোববার (১৮ আগস্ট) সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু হওয়ার কথা থাকলে বর্তমানে প্রশাসনহীন অবস্থায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম সচল হয়নি।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কার্যক্রম আংশিক শুরু হলেও প্রশাসন না থাকায় সকল ধরনের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম এখনও সচল হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পেনশন স্কিম বাতিল ও শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফলে প্রায় দুই মাস ধরে সকল প্রকার ক্লাস-পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় স্থবিরতা বিরাজ করছে ক্যাম্পাসজুড়ে।
এদিকে সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত ব্যতীত বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে (১৬ জুন) থেকে (২৩ জুন) পর্যন্ত ৮ দিনের ছুটিতে যায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর (২৪ জুন) সশরীরে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও 'প্রত্যয়' পেনশন স্কিম প্রত্যাহারদের দাবিতে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি, বর্ষাকালীন ছুটি এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধসহ সকল দাপ্তরিক কার্যক্রম অচল হয়ে যায়।
এদিকে গত (৭ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫২তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় আবাসিক হলগুলোর সিট বরাদ্দ কার্যক্রম এবং (১৯ আগস্ট) থেকে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত থাকলেও অনিবার্য কারণে সে সিদ্ধান্ত স্থগিত রয়েছে। এছাড়াও সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আবাসিক হলসমূহে নতুনভাবে আসন বরাদ্দ না দেওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলে না থাকার নির্দেশনা দিয়ে গত (১৮ জুলাই) আবাসিক হলসমূহ সিলগালা করে বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সিলগালা ভেঙে হলে অবস্থান করলেও আওয়ামী সরকার পতনের পর হল ছেড়ে পালিয়ে যায় তারা। এ পরিস্থিতিতে হল কবে খুলে দেওয়া হবে তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয় নিয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে এম নুর আহমদ কালবেলাকে জানায়, ক্যাম্পাসে ভিসি প্রো -ভিসিসহ বড় বড় দায়িত্বশীল কেউই নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালু করতে হলে সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত প্রয়োজন যেটি ভিসি ছাড়া সম্ভব না। ভিসি নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাস সচল করা অসম্ভব। আংশিকভাবে প্রশাসনিক কাজ চললেও ব্যহত হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ কাজসমূহ।
মন্তব্য করুন