বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থী জান্নাতুল নওরীন উর্মির ওপর হামলাকারী শিক্ষক সুজিত বালাসহ জড়িত সব ছাত্রলীগ নেতার বিচার চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) সকালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। একই সঙ্গে ঘটনার বিচারের দাবি জানিয়ে উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
প্রতিবাদ সমাবেশে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ইমরান বলেন, ছাত্রলীগ নামধারী কিছু সন্ত্রাসী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নারী শিক্ষার্থীকে হত্যার উদ্দেশ্যে যে বর্বরোচিত হামলা ও নির্যাতন চালিয়েছে, আমরা তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আমরা এর বিচার চাই।
তিনি বলেন, সে সময় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলেও বিচার চেয়েছি, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিচার তো দূরে থাক, তদন্তও করেনি। কিন্তু এখন দেশের ছাত্র-জনতা সোচ্চার হয়েছে এবং তাদের অধিকার আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। এখন প্রশাসন কারও পক্ষপাতী হয়ে সত্য ঘটনা ধামাচাপা দিতে পারবে না। সুতরাং অবিলম্বে এ নৃশংস হামলার বিচার করতে হবে।
জানা গেছে, জান্নাতুল নওরীন উর্মি ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ২০২০ সালের ১ মার্চ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে উর্মির ওপর হামলা হয়। এ নিয়ে বেশ কয়েকটি জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশ করা হয়। সে সময়ও ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বিচার দাবি করেছিলেন। তবে জড়িতরা আওয়ামীপন্থি শিক্ষক ও ছাত্রলীগের রাজনীতি করায় তিনি বিচার পাননি।
ঘটনার ১০ দিন পর ২০২০ সালের ১১ মার্চ গণিত বিভাগের শিক্ষক সুজিত বালাকে প্রধান আসামি করে বরিশালের বন্দর থানায় ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী আলিম সালেহী, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম, ষষ্ঠ ব্যাচের আবদুল্লাহ ফিরোজ, পঞ্চম ব্যাচের হাফিজ ও আসাদুজ্জামান আসাদ।
এ বিষয়ে জান্নাতুল নওরীন উর্মী কালবেলাকে বলেন, ২০২০ সালের ১ মার্চ হত্যার উদ্দেশ্যে আমার ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। গণিত বিভাগের সুজিত বালা স্যার ফাইনাল পরীক্ষার হল থেকে আমাকে বের করে তুলে দিয়েছিলেন মুখোশধারী কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতার হাতে। ঘটনায় সুজিত স্যার ছাড়াও মোট আটজন ছিল। কিন্তু আমি দুজনকে চিনতে পারিনি। সেই ছাত্রলীগ নেতারা আমার মাথায় আঘাত করে, নির্মমভাবে পেটায়। সারা শরীরে জ্যামিতি বক্সের কাঁটাকম্পাস দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করে; গলার চামড়ায় দাগ কাটে। পেন্সিল ভেঙে অর্ধেক আমার বুকে ঢুকিয়ে দেয়, ভেঙে দেয় পা। এসব নির্যাতনের চিহ্ন আজও আমি সারা শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছি। আওয়ামী লীগ সরকার থাকায় আমি কোনো বিচার পাইনি। এখন আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
তিনি বলেন, আমি চেয়েছিলাম অন্তত পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে। কিন্তু আমাকে সে সুযোগও দেওয়া হয়নি। আমার অপরাধ ছিল আমি ছাত্রদলের রাজনীতি করি। শুনেছি আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর পরই সুজিত বালা স্যার আমেরিকা পালিয়ে গেছে। ছাত্রলীগ নেতারা গা ঢাকা দিলেও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে নয়। যেহেতু দেশ স্বৈরাচারের কবল থেকে মুক্ত হয়েছে, আমি আশাবাদী এবার ন্যায়বিচার পাব।
এদিকে মঙ্গলবার উপাচার্য বরাবর দেওয়া লিখিত অভিযোগে ৫ দফা দাবি তুলে তিন দিনের সময় নির্ধারণ করে দেন শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো- অবিলম্বে এই ন্যক্কারজনক হামলার তদন্ত পুনরায় শুরু, হোতা সুজিত বালাকে চাকরিচ্যুতি ও গ্রেপ্তার, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সার্টিফিকেট বাতিল ও গ্রেপ্তার, এ ঘটনার সামন-পেছনের ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করে তাদেরও গ্রেপ্তার করতে হবে।
একই সঙ্গে সমাবেশ থেকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে নারী শিক্ষার্থীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে দৃশ্যমান কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বানও জানানো হয়।
মন্তব্য করুন